সিলেট বিভাগের বিএনপি প্রার্থীদের ঢাকায় তলব, তথ্যভিত্তিক যাচাইয়ের প্রস্তুতি চূড়ান্ত

সিলেট বিভাগের বিএনপি প্রার্থীদের ঢাকায় তলব, তথ্যভিত্তিক যাচাইয়ের প্রস্তুতি চূড়ান্ত

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সিলেট বিভাগের সম্ভাব্য প্রার্থীদের ঢাকায় ডেকেছে বিএনপি। দলীয় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নিতে রোববার (২০ অক্টোবর) বিকেল ৩টায় গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে উপস্থিত হবেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এবারের প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া ভিন্নধর্মী এবং তথ্যনির্ভর। ব্যক্তিগত লবিং বা তদবির নয়, বরং ‘ডাটাবেজ’ নামের একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে প্রার্থীদের রাজনৈতিক আমলনামা অনুযায়ী স্বয়ংক্রিয় র‌্যাংকিং তৈরি করে মনোনয়ন দেওয়া হবে। মূলত পাঁচটি যোগ্যতা ও পাঁচটি অযোগ্যতার ভিত্তিতে যাচাই চলছে।

যোগ্যতার মানদণ্ড:

১. অতীত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড
২. সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয়তা
৩. জনসম্পৃক্ততা
৪. সাংগঠনিক কর্মদক্ষতা
৫. পারিবারিক রাজনৈতিক ঐতিহ্য

অযোগ্যতার মানদণ্ড:

১. দলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ইতিহাস
২. ফৌজদারি অপরাধে সংশ্লিষ্টতা (রাজনৈতিক মামলা ব্যতীত)
৩. গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে সুবিধা নেওয়া
৪. ৫ আগস্ট ২০২৪-এর পর স্থানীয় রাজনীতিতে অপরাধ সংশ্লিষ্টতা
৫. নির্বাচনী এলাকায় গ্রহণযোগ্যতার অভাব

দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শুধুমাত্র একটি প্রার্থী চূড়ান্তভাবে মনোনয়ন পাবেন প্রতিটি আসনে। তবে প্রাথমিকভাবে একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী যাচাইয়ের আওতায় আনা হচ্ছে। পাশাপাশি মনোনয়নপ্রত্যাশীদের স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও সক্রিয় থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সিলেট বিভাগ থেকে ঢাকামুখী প্রার্থীরা:

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, সিলেট বিভাগের চার জেলার ১৯টি আসনের বিপরীতে শতাধিক প্রার্থী ঢাকায় যাচ্ছেন। সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের বেহাল অবস্থার কারণে অধিকাংশ প্রার্থী বিমানযোগে ঢাকা পৌঁছেছেন কিংবা টিকিট সংগ্রহ করেছেন।

সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, “মনোনয়নপ্রত্যাশী অনেক হলেও দল সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে।”
সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক এমপি কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন, মৌলভীবাজারের ফয়জুল করিম ময়ূন, এবং জিকে গউছ সহ আরও অনেক প্রার্থী ঢাকায় বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন।

সিলেট জেলার সম্ভাব্য প্রার্থীরা:

সিলেট-১: খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির ও সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী

সিলেট-২: তাহসিনা রুশদীর লুনা (নিখোঁজ নেতা ইলিয়াস আলীর স্ত্রী), প্রবাসী হুমায়ুন কবির (যার প্রার্থিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন তারেক রহমান)

সিলেট-৩: এম. এ. মালিক, ব্যারিস্টার এম. এ. সালাম, আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, আব্দুল আহাদ খান জামালসহ সাতজন

সিলেট-৪: মিফতাহ সিদ্দিকী, আব্দুল হেকিম চৌধুরীসহ পাঁচজন

সিলেট-৫: মামুনুর রশিদ মামুন, সিদ্দিকুর রহমান পাপলু, আশিক চৌধুরী, ফাহিম আল চৌধুরী ও জাকির হোসেনসহ ছয়জন

সিলেট-৬: ড. এনামুল হক চৌধুরী, ফয়সল আহমদ চৌধুরী, আবুল কাহের শামীম, এমরান আহমদ চৌধুরী, কামরুল হাসান চৌধুরী শাহিনসহ সাতজন

সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জেও তৎপরতা:

সুনামগঞ্জের ৫টি উপজেলায় মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যা ২১ জন ছাড়িয়েছে।
সুনামগঞ্জ-৫ আসনে সাবেক এমপি কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন ও মিজানুর রহমান চৌধুরীর মধ্যে একজনকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে বলে ধারণা।

অন্যদিকে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জসহ পুরো বিভাগজুড়ে প্রবাসী, সাবেক জনপ্রতিনিধি ও যুবনেতারা মনোনয়নের দৌড়ে আছেন।

চূড়ান্ত মনোনয়ন নয়, আসছে কড়া নির্দেশনা

দলীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী জানিয়েছেন, রোববারের বৈঠকে একক প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা না হলেও কঠোর রাজনৈতিক নির্দেশনা দেওয়া হতে পারে। প্রতিটি আসনে একাধিক প্রার্থী রেখে প্রাথমিক তালিকা তৈরি করা হবে, যা পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় টিম চূড়ান্ত করবে।

বৈঠকে অংশগ্রহণকারীদের সাংগঠনিক অবস্থা, জনপ্রিয়তা, ভোটার সংযোগ এবং মাঠপর্যায়ের কৌশল খতিয়ে দেখা হবে। পুরো প্রক্রিয়া ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নজরদারি করছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সিলেট ও খুলনা বিভাগের দায়িত্বে রয়েছেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।