শীতের আগাম সবজিতে ভরপুর সিলেটের বাজার, দাম আকাশছোঁয়া
শীত এখনো আসেনি, তবে বাজারে চলে এসেছে শিম, ফুলকপি, পাতাকপি, মূলাসহ প্রায় সবধরনের শীতের সবজি। এদিকে নতুন সবজির প্রতি ক্রেতাদের বাড়তি আকর্ষণ থাকলেও আকাশছোঁয়া দামের ফলে ধারে-কাছেও যেতে পারছে না মধ্য-নিম্নবিত্ত শ্রেণির মানুষ।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শীতের সবজি শিমের দাম দোকানভেদে চাওয়া হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি। ফুলকপি ৮০ থেকে ৯০ টাকা এবং বাঁধাকপি ৭০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত। গতকাল শুক্রবার নগরীর বিভিন্ন এলাকায় বাজার ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে।
বিক্রেতারা বলছেন, কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যে কারণে দামটা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে একটু বেশি।
বাজারে শিম, ফুলকপি, পাতাকপি, মূলা, ঢেঁড়সসহ প্রায় সব ধরনের শীতের সবজির দেখা মিলছে। রয়েছে বেগুন, পটল, ঝিঙা, করলা, টমেটো, শসা, গাজরসহ অন্যান্য সবজিও। সব সবজির পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও দাম আগের মতোই বেশ চড়া। ফলে সবজির বাজারে এসে স্বস্তি মিলছে না ক্রেতাদের।
বিক্রেতাদের থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, অধিকাংশ সবজির দাম শুরু হচ্ছে ৬০, ৭০, ৮০ ও ৯০ টাকায়। নতুন ফুলকপি পিস ৭০-৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০-৭০ টাকা, করলা ৮০-৯০ টাকা, বেগুন জাতভেদে ৭০-৮০ টাকা, শালগম ৮০-১০০ টাকা, মূলা ৬০-৭০ টাকা, কাঁচা পেঁপে ৩০-৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়া, কাঁচকলার হালি বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩৫ টাকায়। পিছিয়ে নেই শসা-গাজরের দামও। দেশি শসা ৮০-৯০ টাকা, হাইব্রিড শসা ৬০-৭০ টাকা এবং মানভেদে গাজর ১০০-১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। দেশি পেঁয়াজ ১০০-১১০ টাকা, আমদানি করা পেঁয়াজ ৯৫-১০০ টাকা, দেশি আদা ৩০০ টাকা, আমদানি করা আদা ২৫০-২৮০ টাকা, দেশি রসুন ২২০ টাকা, আমদানি করা রসুন (মানভেদে) ২০০ টাকা এবং শুকনো দেশি লাল মরিচ ৪৫০ টাকা, আমদানি করা শুকনো মরিচ ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
পাঠানটুলায় সবজি বাজার করতে আসা আশিকুল ইসলাম নামে এক ক্রেতা বলেন, বাজারে প্রায় সব সবজির দাম ৫০-৬০ টাকার ওপরে। সবজির এত দাম হলে স্বস্তি মেলে কী করে? সবজিতে বাজার ভরপুর। অথচ দামের বেলায় মনে হয় এগুলো বিরল প্রজাতির সবজি। দু-তিন রকম সবজি কিনলেই এক-দেড়শো টাকার ওপরে চলে যাচ্ছে। মাছ-মাংস বাদ দিয়ে সবজি কিনে খাব তারও উপায় নেই। মোটকথা আমাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষ খুব কষ্টে আছে।
তিনি বলেন, আমরা তো ভেবেছিলাম নতুন সরকার ঠিকভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করবে, কিন্তু এখন পর্যন্ত কিছুই হচ্ছে না। বাজার এখনও সিন্ডিকেটের দখলেই রয়ে গেছে।
আরিফ আহমদ নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, বর্তমান বাজারে আমাদের মতো ব্যাচেলর শিক্ষার্থীরা খুবই কষ্টে আছে। কোনো কিছুরই দাম স্বাভাবিক অবস্থায় নেই। কোনোভাবেই মিলরেট (খাবার খরচ) ১০০ টাকার নিচে আসে না, যেখানে আগে অনেক ভালো খেয়েও ৫০/৬০ টাকার বেশি হতো না। দুইটা টিউশনি করাই, সবকিছুর দাম বাড়লেও তো আমাদের আয়ের কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না।
সবজির দাম প্রসঙ্গে বন্দরবাজার কাঁচাবাজারের বিক্রেতা রফিকুল ইসলাম বলেন, বাজারে তুলনামূলক সবজির দাম কিছুটা কমই। তবে যেগুলো নতুন এসেছে সেগুলোর দাম একটু বেশি। শিমসহ ২/৪ আইটেমের সবজির বর্তমানে মৌসুম না হওয়ায় কিছুটা বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। আবার নতুন করে এসব সবজি উঠতে শুরু করলে এগুলোরও দাম কমে যাবে। তিনি আরও বলেন, সবজির দাম ৪ থেকে ৫ দিন আগেও এত ছিল না। কিন্তু গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে বাজারে সবজির সরবরাহ কমে গেছে। সামনের মাস থেকেই যখন সবজির পরিমাণ আরো বাড়বে তখন দাম কমে আসবে।
জীবন আহমেদ নামের আরেক সবজি বিক্রেতা বলেন, বছরের শেষ সময়ে সব ধরনের শাকসবজিই বাজারে আসে। এখন শাক-সবজির কোনো সংকট নেই। তবে দাম বেশি। আর কিছুদিন গেলেই দাম কমে আসার সম্ভবনা রয়েছে। কারণ, তখন সবজির পরিমাণ আরো বাড়বে।