সিলেটে হুমায়ুন, লুনা কী হারাচ্ছেন আসন?
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট থেকে বিএনপির প্রার্থী হবেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির। এ ঘোষণা দিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
রবিবার (৫ অক্টোবর) গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে জাতিসংঘের ঢাকার আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইসের সঙ্গে বৈঠকের সময় এই তথ্য জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল। বৈঠকের শুরুতে পরিচয় পর্বে তিনি বলেন, “এখন থেকে হুমায়ুন কবির দেশেই থাকবেন এবং আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবেন।”
প্রত্যুত্তরে গোয়েন লুইস জানান, “আমি বিষয়টি জানি, এবং কোন আসন থেকে কাকে টেকওভার করা হচ্ছে সেটিও অবগত আছি। সিলেট থেকেই পরবর্তী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসছেন বলে আমি শুনেছি।” বৈঠকের এই অংশ ভিডিওচিত্রে ধরা পড়েছে।
মির্জা ফখরুলের ঘোষণার পর সিলেটের রাজনীতিতে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা ও সমালোচনা। বিশেষ করে এখন আলোচনা কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে হুমায়ুন কবির ঠিক কোন আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
সিলেটে বর্তমানে ৬টি আসন রয়েছে, যেখানে একাধিক বিএনপি প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে সক্রিয়। এর মধ্যে সিলেট-২ (বিশ্বনাথ-বালাগঞ্জ-ওসমানীনগর) আসনটি দীর্ঘদিন ধরে দলের আলোচিত কেন্দ্র। এই আসনের একক মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন নিখোঁজ বিএনপি নেতা এম. ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদী লুনা, যিনি এলাকার মানুষের পাশে দীর্ঘদিন কাজ করছেন এবং স্থানীয় সংগঠন ও তরুণদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করেছেন।
সম্প্রতি হুমায়ুন কবির সিলেট সফরে এসে জানান, তিনি “তারেক রহমানের নির্দেশে” এলাকায় কাজ করছেন এবং নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তার ঘোষণার পর রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। স্থানীয় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিষয়টিকে ‘অপ্রীতিকর ও আচমকা সিদ্ধান্ত’ হিসেবে দেখছেন। অনেকেই মনে করছেন, এতে ইলিয়াস আলীর পত্নী লুনার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক ত্যাগ ও জনপ্রিয়তা উপেক্ষা করা হচ্ছে।
রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে, লুনা কি সিলেট-২ আসন থেকে বাদ পড়ছেন, নাকি বিএনপি তাকে অন্য কোনো আসন থেকে মনোনয়ন দিতে পারে। একাধিক স্থানীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, “লুনা আপা অনেক জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য। তাকে সরিয়ে দেওয়া দলের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।” অন্যদিকে দলের একটি অংশের মতে, “হুমায়ুন কবির প্রবাসী কূটনীতিক হিসেবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দলের ভাবমূর্তি রক্ষায় ভূমিকা রেখেছেন। তার প্রার্থী হওয়ায় দলের পররাষ্ট্রনীতি ও কৌশলগত অবস্থান শক্তিশালী হবে।”
মির্জা ফখরুলের ঘোষণায় সিলেট বিএনপির ভেতরে নতুন সমীকরণ তৈরি হয়েছে। ইলিয়াস আলীর পরিবার ও সমর্থকগোষ্ঠী একদিকে, হুমায়ুন কবির সমর্থকরা অন্যদিকে অবস্থান নিচ্ছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, “সিলেট-২ আসন শুধু একটি নির্বাচনী এলাকা নয়, এটি ইলিয়াস আলীর প্রতীকী আসন। এখানে প্রার্থী পরিবর্তন মানেই দলের আবেগের জায়গায় আঘাত।”
তবে বিএনপির কেন্দ্রীয় দফতর থেকে এখনো হুমায়ুন কবির বা তাহসিনা রুশদী লুনার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো সিদ্ধান্ত প্রকাশ করা হয়নি।

