শঙ্কায় অবৈধ অভিবাসীরা
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে থেকেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি নিয়ে শঙ্কায় ছিলেন অনেক অভিবাসী। রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় সেই শঙ্কা এখন বাস্তব রূপ নিয়েছে।
কাগজপত্রবিহীন লাখ লাখ অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছেন নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এমন ঘোষণার পর আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন দেশটিতে বসবাসকারী অনেক প্রবাসী।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েই অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের কথা জানান দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এনবিসি নিউজকে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে থাকার বৈধ অনুমতি নেইÑ এমন লোকদের গণপ্রত্যর্পণ ছাড়া তার সামনে কোনো বিকল্প নেই। সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেন, অভিবাসীদের প্রত্যর্পণে কত খরচ হবে, তা বড় প্রশ্ন নয়। আসলেই আমাদের কোনো বিকল্প নেই। অবৈধ অভিবাসীরা মানুষ খুন করেছে, মাদক ব্যবসায়ীরা দেশকে ধ্বংস করেছে। এখন তারা যুক্তরাষ্ট্রে থাকতে পারবে না, তাদের নিজ দেশে ফিরে যেতে হবে।
বিবিসি বলেছে, নতুন মার্কিন প্রশাসন গণপ্রত্যর্পণ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এগিয়ে যেতে সক্ষম হলেও এজন্য কর্তৃপক্ষকে বিপুল অর্থ ব্যয়ে বিশাল কর্মযজ্ঞ চালাতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতি মিলিয়ন মানুষকে বিতাড়িত করতে কয়েক বিলিয়ন ডলার খরচ হবে।
অবৈধ অভিবাসীদের ভয়, ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর অনেককেই নিজ দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হতে পারে। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ও পিউ রিসার্চ সেন্টারের তথ্যমতে, যুক্তরাষ্ট্রে এখন এক কোটিরও বেশি বৈধ কাগজপত্রহীন অভিবাসী আছে। বলিভিয়ার গ্যাব্রিয়েলা নামে এক অভিবাসী চোরাচালানকারীদের গাড়িতে করে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন। তিনি এখন ক্লিনারের কাজ করেন। তিনিও আতঙ্কের কথা জানিয়েছেন। গ্যাব্রিয়েলা বলেন, এখানে আমরা যারা আছি তাদের বেশিরভাগেরই কাগজপত্র নেই। তিনি (ট্রাম্প) কী করবেন তাতো পরিষ্কার করে বলেছেন। আমার মনে হয়, তারা কর্মস্থল থেকেও লোকজনকে ধরে নিয়ে যাবে।
শুধু অভিবাসীরাই নয়, অনেক মার্কিনিও ট্রাম্পের জয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন বলে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। তারা অন্য কোনো দেশে চলে যেতে চাচ্ছেন। ৫ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ভোট শেষ হওয়ার ২৪ ঘণ্টা পর থেকে কানাডা, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার দেশগুলোতে পাড়ি দেওয়ার বিষয়ে গুগল সার্চে লোকজনের আগ্রহ বেশি দেখা গেছে।
গুগল সার্চে দেখা গেছে, প্রায় ১২৭০ শতাংশ মানুষ কানাডা যাওয়ার তথ্য অনুসন্ধান করেছে। এ ছাড়া নিউজিল্যান্ডে যাওয়ার ক্ষেত্রে গুগল সার্চ করেছে ২০০০ শতাংশ মানুষ এবং অস্ট্রেলিয়াতে যাওয়ার ক্ষেত্রে ৮২০ শতাংশ মানুষ গুগল অনুসন্ধান করে। গুগলের তথ্যানুসারে, যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূল থেকে বুধবার রাত পর্যন্ত এই তিন দেশে যাওয়ার জন্য অনেকেই গুগলে অনুসন্ধান করেছে। তবে গুগল অনুসন্ধানে প্রকৃত তথ্য পাওয়া না গেলেও নিউজিল্যান্ডের অভিবাসী ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, প্রায় ২৫ হাজার আমেরিকান ৭ নভেম্বর পর্যন্ত তাদের সাইট ভিজিট করেছে। যেখানে গত বছর একই সময়ে এই সংখ্যা ছিল মাত্র ১৫০০ জন।
এদিকে অবৈধ অভিবাসীরা যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত হয়ে কানাডায় প্রবেশ করতে পারেÑ এমন সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা। ফলে অভিবাসীদের ঢল ঠেকাতে ইতোমধ্যে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে কানাডা পুলিশ। রয়্যাল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশের সার্জেন্ট চার্লেস পোয়োরিয়ার জানিয়েছেন, ট্রাম্প জিতলে কানাডায় অভিবাসীদের ঢল নামতে পারে এমন আশঙ্কায় কয়েক মাস আগে থেকেই তারা প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছেন। ট্রাম্প যেহেতু নির্বাচিত হয়েছেন, তাই যুক্তরাষ্ট্র থেকে হাজার হাজার অভিবাসীকে কানাডায় ঢুকতে দেখা যেতে পারে।
পুলিশের এই কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, আমরা কয়েক মাস আগে জানতাম আমাদের একটি সম্ভাব্য ঘটনার প্রস্তুতি নিতে হবে। কারণ যদি ট্রাম্প ক্ষমতায় আসেন, তাহলে অনেকে কানাডার দিকে আসবেন। ফলে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে অভিবাসনপ্রত্যাশী ও অবৈধ অভিবাসীরা কুইবেক ও কানাডার দিকে আসতে পারে।
২০১৭ সালে ট্রাম্প প্রথমবার যখন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেন, তার কয়েক দিনের মধ্যেই কয়েক হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী যুক্তরাষ্ট্র থেকে কানাডায় প্রবেশ করেছিলেন। এবারও তেমনটিই দেখা যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, কানাডার বর্তমান অবস্থায় সরকারের একের পর এক অভিবাসন নীতির পরিবর্তনের মধ্যে নতুন চাপ তৈরি করতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের অবৈধ অভিবাসীরা। এটি দেশটির অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে।