সাবেক ডিসি এমদাদুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ
মোমেনকে খুশি করতে সিলেটে ২৫০ কোটি টাকার পাউবোর জমি দখলচেষ্টা

সিলেট শহরের প্রাণকেন্দ্রে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) অধিগ্রহণকৃত প্রায় ৮ একর জমি খাস খতিয়ানভুক্ত করে প্রভাবশালীদের লিজ দেওয়ার গোপন প্রক্রিয়া চালিয়েছিলেন সাবেক জেলা প্রশাসক কাজী এমদাদুল ইসলাম। অভিযোগ উঠেছে, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী একেএ মোমেনকে খুশি করতে তিনি এ প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন। বর্তমানে ওই সাবেক ডিসি ওএসডি অবস্থায় আছেন।
‘কালামাঠ’ নিয়ে কারসাজি
সিলেট শহরের আম্বরখানা মৌজায় অবস্থিত জমিটি স্থানীয়ভাবে ‘কালামাঠ’ নামে পরিচিত। প্রায় ৫৫ বছর ধরে চলমান মামলার পর আদালতের রায়ে পাউবোর মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয়। জমিটির বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ২৫০ কোটি টাকা। কিন্তু মালিকানা ফিরে পাওয়ার পরও উচ্ছেদে উদ্যোগী না হয়ে স্থানীয় প্রভাবশালীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে গোপন তৎপরতা চালান তৎকালীন ডিসি এমদাদুল।
পাউবোর আপত্তি ও মন্ত্রণালয়ের অবস্থান
গত বছরের নভেম্বর মাসে পাউবোর অতিরিক্ত মহাপরিচালক এসএম অজিয়র রহমান সচিবকে পাঠানো এক দাপ্তরিক পত্রে অভিযোগ করেন—পাউবোকে না জানিয়ে অধিগ্রহণকৃত জমির মধ্যে ৮ একর খাস হিসাবে নিজের জিম্মায় নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন ডিসি।
যদিও বিভিন্ন সময় পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও প্রধান প্রকৌশলী বিষয়টি বন্ধ করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন।
আদালতের রায় উপেক্ষা
নথিপত্রে দেখা গেছে, জমিটি নিয়ে হাইকোর্ট ও সুপ্রিমকোর্টে মামলা হয়েছিল। ২০১৮ সালের নভেম্বরে সুপ্রিমকোর্টের রায়ে স্পষ্ট বলা হয়, জমিটি অব্যবহৃত থাকলেও তা ছাড়ার কোনো সুযোগ নেই। তবুও রিজিউম প্রক্রিয়া চালিয়ে যান তৎকালীন ডিসি।
মোমেনের ছায়ায় প্রভাবশালীদের খেলার মাঠ
পাউবোর একাধিক কর্মকর্তা অভিযোগ করেছেন, আওয়ামীপন্থি প্রভাবশালীদের স্বার্থে কাজ করেছেন এমদাদুল ইসলাম। আর পুরো বিষয়টি মনিটরিং করেছেন তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন। বড় অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিতে লিজ দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের। এজন্য মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত প্রক্রিয়া এড়িয়ে সরাসরি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফাইল পাঠানো হতো।
পাউবোর পরিকল্পনা
অধিগ্রহণকৃত জমিতে পাউবোর অফিস ভবন, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসিক ভবন, অফিসার্স ক্লাব, হাওর গবেষণা ইনস্টিটিউটসহ নানা স্থাপনা নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। তাই জমিটি খাস ঘোষণার উদ্যোগকে রহস্যজনক বলে আখ্যায়িত করেছেন পাউবোর মহাপরিচালক এনায়েত উল্লাহ।
অভিযুক্তদের অবস্থান
অভিযোগ বিষয়ে সাবেক ডিসি কাজী এমদাদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি নিজেকে আড়াল করে রেখেছেন। অন্যদিকে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনও গত বছরের আগস্ট থেকে পলাতক থাকায় মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
তদন্তের দাবি
পানি উন্নয়ন বোর্ড ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা মনে করছেন, সরকারি জমি খাস হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করার এ উদ্যোগ স্পষ্টতই অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহার। বিষয়টি এখন তদন্তের দাবি রাখে।