গণধর্ষণের ঘটনায় উত্তপ্ত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) হলে এক ব্যক্তিকে আটকে রেখে তার স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে এ অবরোধ শুরু করেন তারা। সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা মোস্তাফিজুর রহমান থানায় আত্মসমর্পণ করেছেন। রোববার সকাল ৮টার দিকে তিনি সাভার মডেল থানায় গিয়ে আত্মসমপর্ণ করেন। এর আগে মোস্তাফিজুর রহমান গভীর রাতে হলের রান্নাঘরের তালা ভেঙে পালিয়ে যান। মোস্তাফিজুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক। সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরে ছাত্রলীগ থেকে মোস্তাফিজুর রহমানকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে দুপুর ১২টার দিকে প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। অবরোধের একপর্যায়ে তারা উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করেন। এ সময় উপাচার্যের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বাগযুদ্ধ হয়। তারা উপাচার্যের কাছে তিনটি দাবি উত্থাপন করেন। সেগুলো হলো- এক ঘণ্টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়কে বাদী হয়ে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা করা, তিন দিনের মধ্যে হলগুলোতে থাকা অছাত্রদের বের করতে হবে এবং ধর্ষক ও তার সহযোগীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। উপাচার্য জরুরি সিন্ডিকেট সভা করে বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দেন; কিন্তু এ প্রস্তাব নাকচ করে মামলা করার পর জরুরি সিন্ডিকেটে বসার প্রস্তাব করেন তারা। এক ঘণ্টার মধ্যে মামলা করা না হলে সিন্ডিকেট সভা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেন তারা। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত প্রশাসনিক ভবনের সামনে আন্দোলন চলছে। শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলে স্বামীকে আটকে রেখে হল-সংলগ্ন জঙ্গলে এক নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্তরা হলো- বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মোস্তাফিজুর রহমান ও বহিরাগত যুবক মামুন (৪৫)। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান, একই বিভাগের সাগর সিদ্দিকী ও হাসানুজ্জামান এবং উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাব্বির হাসানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জানা গেছে, ওই দম্পতির বাড়িতে ভাড়া থাকতেন অভিযুক্ত মামুন। এর পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার সন্ধ্যায় ভুক্তভোগীর স্বামীকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ডেকে নিয়ে আসেন তিনি। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের ‘এ’ ব্লকের ৩১৭ নম্বর কক্ষে তাকে আটকে রাখে অভিযুক্তরা। এরপর তার স্ত্রীকে দিয়ে নিজের রেখে আসা জিনিসপত্র আনতে বলেন মামুন। পরে মামুনের জিনিসপত্র নিয়ে ক্যাম্পাসে আসেন ওই নারী। জিনিসপত্র বুঝে নিয়ে মামুন হলের ওই কক্ষে রেখে আসেন। এরপর তার স্বামী অন্যদিক থেকে আসবে বলে ওই নারীকে হল-সংলগ্ন জঙ্গলে নিয়ে যান। পরে সেখানে তাকে গণধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওই নারীর। সাভার মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুর রাসিক বলেন, ভুক্তভোগী থানায় উপস্থিত হয়ে ঘটনা জানিয়েছেন। মামলা হয়েছে। চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, এ ধরনের বিষয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক। মূল অভিযুক্ত ও অভিযুক্তকে পালাতে সহযোগিতাকারী সবাইকে মামলার অন্তর্ভুক্ত করার ব্যাপারে আশুলিয়া থানা পুলিশের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কথা হয়েছে।