অনড় এনসিপি শাপলার বিকল্প চাইতে বলল ইসি

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রাথমিক পর্যালোচনায় রাজনৈতিক দল হিসেবে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হয়েছে। তবে দলটির আবেদনপত্রে প্রথম পছন্দ হিসেবে উল্লেখ করা ‘শাপলা’ প্রতীকটি নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালার তালিকায় না থাকায় সেটি বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে ইসি। এমন প্রেক্ষাপটে আগামী মঙ্গলবারের (৭ অক্টোবর) মধ্যে বিধিমালা অনুযায়ী সংরক্ষিত প্রতীকগুলোর মধ্য থেকে একটি প্রতীক বেছে নিয়ে লিখিতভাবে তা জানাতে দলটিকে অনুরোধ করেছে ইসি।
তবে এনসিপি বলছে, স্বেচ্ছাচারী ও বৈষম্যমূলক আচরণ করছে নির্বাচন কমিশন। শাপলা প্রতীক দিতে কোনো ধরনের আইনগত বাধা নেই। অন্য কোনো প্রতীক নয়, শাপলাতেই তারা অনড় আছেন। এজন্য রাজনৈতিক ও আইনগত সব ধরনের পদক্ষেপ নেবেন বলে জানান। শিগগির দলের সভা ডেকে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন এনসিপি নেতারা। তবে শেষমেশ কোনোভাবেই যদি শাপলা প্রতীক না পাওয়া যায়, সেক্ষেত্রে তাদের দ্বিতীয় পছন্দ কলম এবং তৃতীয়তে রয়েছে মোবাইল ফোন। এর আগে শাপলার সঙ্গে এই দুটি প্রতীক তারা পছন্দের তালিকায় দিয়েছিল।
এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, ‘আমরা এখনো শাপলা প্রতীকেই অনড় আছি। এর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা আমরা নেব। দ্রুত আমরা সভা ডেকে সিদ্ধান্ত নেব। শাপলার বাইরে অন্য কোনো প্রতীক আমরা আপাতত ভাবছি না। যদি নিতেই হয় সেক্ষেত্রেও আমরা দলীয় সভায় সিদ্ধান্ত নেব।’
দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, ‘আমরা হুবহু শাপলা থেকেও অনেকটা সরে আসছিলাম। আমরা বলেছি, অন্তত আমাদের সাদা শাপলা, লাল শাপলা দিতে হবে। ইসি চাইলেই এটা দিতে পারে। নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাও বলেছেন, এনসিপিকে শাপলা দিলে তাদের আপত্তি থাকবে না। আইন বিশেষজ্ঞরাও বলেছেন এতে আইনগত কোনো বাধা নেই। ইসি চাইলে শাপলা এনসিপিকে দিতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শাপলার জন্যই আমরা ফাইট করব। আইনগত কিংবা রাজনৈতিক যত ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া যায় আমরা নেব।’
প্রতীক বরাদ্দের ক্ষেত্রে ইসি স্বেচ্ছাচারী আচরণ করছে বলে অভিযোগ করেন এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আরিফুর রহমান তুহিন। তিনি বলেন, ‘যেহেতু শাপলা দিতে আইনগত কোনো বাধা নাই, সেহেতু আমরা শাপলা মার্কাই চাই। এর বিকল্প কিছু ভাবছি না। আমরা মনে করি, কমিশন স্বেচ্ছাচারী আচরণ করছে আমাদের সঙ্গে। নিরপেক্ষ জায়গায় নেই তারা। একটি বিশেষ দলের নির্দেশে আমাদের চাওয়া অনুযায়ী শাপলা দিচ্ছে না। প্রতীক তালিকায় শাপলা না থাকলে কমিশন সেটাকে অন্তর্ভুক্ত করুক। এটা তো সামান্য কয়েকদিনের বিষয়। সেগুলো না করে তাঁবেদারি করে আমাদের প্রতীক দিচ্ছে না। তবে আমরা শাপলাতেই অনড় আছি।’
এর আগে গত মঙ্গলবার দেওয়া এক চিঠিতে আগামী ৭ অক্টোবরের মধ্যে একটি প্রতীক বেছে নিয়ে লিখিতভাবে তা জানাতে অনুরোধ করা হয় এনসিপিকে। ইসির নির্বাচন সহায়তা শাখার উপসচিব মো. রফিকুল ইসলামের সই করা চিঠিটি দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে দেওয়া হয়েছে।
ইসির ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, জাতীয় নাগরিক পার্টি নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছিল, যা প্রাথমিক পর্যালোচনায় গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হয়েছে। দলটির আবেদনপত্রে পছন্দের প্রতীকের ক্রমানুযায়ী শাপলা, কলম ও মোবাইল উল্লেখ করা হয়েছিল। তবে, নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা, ২০০৮-এর বিধি ৯ (১) অনুযায়ী প্রার্থীর অনুকূলে বরাদ্দের জন্য নির্ধারিত প্রতীকের তালিকায় শাপলা প্রতীকটি বর্তমানে অন্তর্ভুক্ত নেই। এমন অবস্থায়, দলটিকে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর অনুচ্ছেদ ৯০৮ (১) (খ)-এর বিধান সম্পর্কে জানানো হয়। ওই বিধান অনুযায়ী, কোনো দল কর্তৃক মনোনীত সব প্রার্থীর জন্য নির্ধারিত প্রতীক থেকে পছন্দকৃত যে কোনো একটি প্রতীক বরাদ্দ করা হবে এবং এভাবে বরাদ্দকৃত প্রতীক দলটির জন্য সংরক্ষিত থাকবে। যদি না দলটি পরবর্তী সময়ে অন্য কোনো প্রতীক লাভে ইচ্ছা প্রকাশ করে।
ইসি আরও জানায়, এ জটিলতা নিরসনে নির্বাচন কমিশন এখন জাতীয় নাগরিক পার্টিকে নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা, ২০০৮-এর বিধি ৯ (১) অনুযায়ী ইসির দেওয়া প্রতীকের তালিকা থেকে এখনো বরাদ্দ হয়নি, এমন একটি প্রতীক দ্রুত পছন্দ করে নিতে বলেছে। দলের নিবন্ধনের বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য এই পছন্দটি আগামী ৭ অক্টোবর মধ্যে লিখিতভাবে কমিশনকে জানাতে অনুরোধ করা হয়েছে।
এনসিপিকে যে ৫০টি প্রতীক থেকে দলের প্রতীক নির্ধারিত করতে বলা হয়েছে সেগুলো হলো আলমারি, খাট, উটপাখি, ঘুড়ি, কাপ-পিরিচ, চশমা, দালান, বেগুন, চার্জার লাইট, কম্পিউটার, জগ, জাহাজ, টিউবওয়েল, টিফিন ক্যারিয়ার, টেবিল, টেবিল ঘড়ি, টেলিফোন, ফ্রিজ, তবলা, বক, মোরগ, কলম, তরমুজ, বাঁশি, লাউ, কলস, চিংড়ি, থালা, বেঞ্চ, লিচু, দোলনা, প্রজাপতি, বেলুন, ফুটবল, ফুলের টব, মোড়া, বালতি, কলা, বৈদ্যুতিক পাখা, মগ, মাইক, ময়ূর, মোবাইল ফোন, শঙ্খ, সেলাই মেশিন, সোফা, স্যুটকেস, হরিণ, হাঁস ও হেলিকপ্টার।
চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘ইসির কাছ থেকে নিবন্ধন-সংক্রান্ত চিঠি আমরা পেয়েছি। সেখানে আমাদের জন্য আলমারি, উটপাখি, কাপ-পিরিচ, থালাবাটি প্রতীক বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এগুলো খুবই হাস্যকর। ইসি আমাদের সঙ্গে স্বেচ্ছাচারী ও বৈষম্যমূলক আচরণ করছে।’
নাসীরুদ্দীন আরও বলেন, ‘আমরা আগেই জানিয়েছি এনসিপির শাপলা প্রতীক পেতে কোনো আইনি বাধা নেই। ইসিরও অন্য কোনো চাপ অনুভব করার কথা নয়। গণঅভ্যুত্থানের পর আমরা স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের দাবি তুলেছিলাম। কিন্তু বর্তমান কমিশন একদলীয় অফিসে পরিণত হয়েছে। তাদের কার্যক্রম সংবিধানকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।’
তিনি অভিযোগ করেন, অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রতীক জাতীয় প্রতীকের উপাদান থেকে নেওয়া হলেও এনসিপির ক্ষেত্রে শুধু আপত্তি তোলা হচ্ছে। নাসীরুদ্দীন বলেন, ‘এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, প্রতীক না পেলে আমরা কী করব? জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক উপায়ে আমরা সংগ্রাম চালিয়ে যাব।’
এনসিপিকে শাপলা দিলে আইনি পদক্ষেপে যাবেন না মান্না: জাতীয় নাগরিক পার্টিকে প্রতীক হিসেবে শাপলা দিলে কোনো মামলা করবেন না বলে অঙ্গীকার করেছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। স্বৈরশাসক হাসিনাকে উৎখাতের কথা বিবেচনা করে এনসিপি নেতাকর্মীদের প্রতি তিনি দরদি বলেও জানিয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে এসব কথা বলেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি।
মান্না বলেন, ‘আমাকে যদি জাতীয় প্রতীকের কারণে শাপলা না দেওয়া হয়, তাহলে নির্বাচন কমিশন আর কাউকে দিতে পারে না। ওরা (এনসিপি) আমার কাছে এসেছিল। যারা জুলাই অভ্যুত্থান করেছে, তাদের বয়সের কারণে, অভিজ্ঞতার কথা বিবেচনা করে এবং শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদ উৎখাতের কথা বিবেচনা করে আমি তাদের প্রতি দরদি। শাপলা প্রতীক যদি তাদের দিয়ে দেয়, আমি একটা অঙ্গীকার করতে পারি—আমি কোনো মামলা করব না।’