নগরীতে হকার উচ্ছেদ অভিযান: এবার কি স্থায়ী হবে এই উদ্যোগ?

সিলেট নগরীর সড়ক ও ফুটপাত হকারমুক্ত করতে আবারও উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন।
রোববার(১৯ অক্টোবর) থেকে শুরু হওয়া এই অভিযান সিলেট সিটি করপোরেশন, জেলা প্রশাসন ও মহানগর পুলিশের সমন্বয়ে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এরইমধ্যে নগরীর প্রধান সড়ক ও ফুটপাত থেকে হকারদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ফলে যানজট কমে এসেছে এবং সাধারণ মানুষ স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। তবে প্রশ্ন রয়ে গেছে—এই উদ্যোগ কতদিন স্থায়ী হবে?
এর আগেও দুইবার এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর মেয়াদকালে হকারদের লালদিঘির পাড়ে পুনর্বাসনের চেষ্টা হয়েছিল। তবে প্রতিবারই কিছুদিনের মধ্যে হকাররা আবার সড়ক ও ফুটপাত দখল করে নেয়। আরিফুল হক অভিযোগ করেছিলেন, তখন পুলিশের সহযোগিতা না পাওয়ায় তাঁর উদ্যোগ সফল হয়নি।
বর্তমানে সিলেট সিটি করপোরেশন, জেলা প্রশাসন ও মহানগর পুলিশ একসঙ্গে অভিযান পরিচালনা করছে। নগরবাসী বলছেন, এমন সম্মিলিত উদ্যোগ অতীতে দেখা যায়নি। ফলে কিছুটা আশাবাদী হলেও, আগের অভিজ্ঞতা থেকে তারা এবারও শঙ্কায় রয়েছেন।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম, মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. আব্দুল কুদ্দুছ চৌধুরী পিপিএম এবং সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজা-ই রাফিন সরকার নিয়মিত মাঠপর্যায়ে পরিদর্শন করছেন।
হকারদের পুনর্বাসনের জন্য নগর ভবনের পেছনে লালদিঘির পাড়ে দশটি গলি নিয়ে তৈরি করা হয়েছে অস্থায়ী হকার্স মার্কেট। ইট, বাঁশ ও ত্রিপলের সাহায্যে তৈরি শেডে হকাররা বিনামূল্যে ব্যবসা করার সুযোগ পাচ্ছেন। তৈরি করা হয়েছে টয়লেট, ড্রেনেজ ব্যবস্থা এবং নির্ধারিত প্রবেশপথ। কাঁচা বাজার, কাপড়, মাছ ইত্যাদির জন্য আলাদা চিহ্নিত স্থান বরাদ্দ করা হয়েছে।
নগরবাসী হকারমুক্ত সড়ক দেখে স্বস্তি প্রকাশ করছেন। জল্লারপাড়ের বাসিন্দা হুমায়ুন আহমেদ বলেন, “আগেও এমন অভিযান হয়েছে কিন্তু তা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। এবার প্রশাসন যদি নিয়মিত অভিযান চালায় এবং রাজনৈতিক চাপ বা জনসমর্থনের চাপে নতি না স্বীকার করে, তাহলে হকারদের পুনরায় দখলদারি ঠেকানো সম্ভব।”
হাসান মার্কেটের ব্যবসায়ী জামাল মিয়া বলেন, “হকাররা চলে গেছে ঠিকই, তবে এখন কিছু এলাকায় সিএনজি ও মোটরসাইকেলের পার্কিং বেড়েছে। এটি বন্ধ না করা গেলে হকারদের জায়গা দখল করে নতুন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে।”
সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনার বলেন, “হকারদের সরানোর পর যানবাহন যেন ফুটপাত ও রাস্তা দখল না করে, তা নিশ্চিত করতে আমরা তিন দফা নির্দেশনা দিয়েছি।” জেলা প্রশাসক সারোয়ার আলম হকারদের প্রশংসা করে বলেন, “তারা নির্দেশনা মেনেছে। এখন যদি চালকরা নিয়ম না মানে, তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
নগরবাসীর জন্য একটি শৃঙ্খলাপূর্ণ, যানজটমুক্ত ও দখলমুক্ত সিলেট নগরী গড়ে তুলতে একযোগে কাজ করছে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা। তবে সাফল্য নির্ভর করছে প্রশাসনের ধারাবাহিকতা, রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং নাগরিকদের সচেতনতার ওপর। আগামী কয়েক সপ্তাহ বা মাসেই বোঝা যাবে—এবারের হকার উচ্ছেদ কতটা স্থায়ী হলো।
অভিযান সফল করতে হলে চাই দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা, কঠোর নজরদারি এবং নাগরিক অংশগ্রহণ। প্রশাসনের দায়িত্ব যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি নাগরিকদের সচেতনতাও অপরিহার্য। এখন দেখার বিষয়—সিলেট কতদিন হকারমুক্ত থাকে।