নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে যেসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন স্টারমার
ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টিকে হারিয়ে দীর্ঘ ১৪ বছর পর যুক্তরাজ্যের ক্ষমতায় বসেছেন লেবার পার্টি। যুক্তরাজ্যের নির্বাচনে ৩৬২ আসনে জয় পেয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতার চেয়ারে বসেছে দলটি। লেবার পার্টির প্রধান নেতা হিসেবে কিয়ার স্টারমার হয়েছেন যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রী। তবে দায়িত্ব নেওয়ার শুরুতেই বেশ কিছু কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে তাকে।
ন্যাটোর শীর্ষ সম্মেলন, ইউরোপীয় জুট, বেক্সিট ইস্যুসহ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক, ইসরাইল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ ছাড়াও বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে স্টারমারের নতুন সরকারকে। সেই চ্যালেঞ্জ কতটা দক্ষতার সঙ্গে মুকাবিলা করতে পারে ১৪ বছর পর ক্ষমতায় বসা লেবার পার্টি তা দেখার অপেক্ষাতেই এখন বিশ্ব।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর আগামী মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ন্যাটোর ৭৫তম বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলনে বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে হবে স্টারমারকে। যেখানে থাকবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ইউরোপীয় অন্যান্য শীর্ষ নেতারা। ন্যাটোর গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে দায়িত্বের শুরুতেই বড় কূটনীতির ঝড়ের মুখে পড়তে হবে তাকে।
এরপর ১৮ জুলাই ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ডের কাছে ব্লেনহেইম প্যালেসে ইউরোপীয় রাজনৈতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন তিনি। যেখানে ফ্রান্সের ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ও জার্মানির ওলাফ স্কোলজ উপস্থিত হবেন বলে আশা করা হচ্ছে। যেখানেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে স্টারমারের।
এছাড়াও বেক্সিট ইস্যুসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে একটি নিরাপত্তা চুক্তিতে যেতে হতে পারে যুক্তরাজ্যকে। এর বাইরেও আন্তর্জাতিক নানা ইস্যুতে নানা চ্যালেঞ্জ তো থাকছেই। সব মিলিয়ে স্টারমারের অধীনে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র নীতিকে পড়তে হবে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে।
কেননা, গত বছর স্টারমার যুক্তরাজ্যকে বাণিজ্যে এবং প্রযুক্তির মতো ইস্যুতে চীন থেকে নিজেদের সরিয়ে নেওয়ার কথা বলেছিলেন। সেই সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার মতো বিষয়গুলোর দিকেও গুরুত্ব দিতে হবে তাকে। এছাড়াও আগামী মার্কিন নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প ফের ক্ষমতায় বসলে যুক্তরাজ্যকে চীনের ব্যাপারে চাপ দিতে পারে; সেটিও মাথায় রাখতে হচ্ছে তাকে।
এর বাইরে ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাতে নিজেদের একটি পক্ষে নিতে হবে তাদের। কেননা, লেবার পার্টি নির্বাচনের আগে বলেছিল ফিলিস্তিনকে একটি রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ তারা। সেই সঙ্গে তখন বলেছিল অবিলম্বে যুদ্ধবিরতিসহ সমস্ত জিম্মি মুক্তি ও গাজায় সাহায্যের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে চায় তারা। এই সংঘাতের সমাধানের পক্ষে যুক্তরাজ্য। তবে এখন নির্বাচিত হওয়ার পর যুক্তরাজ্য এটি চাইলেও যুক্তরাষ্ট্রের কারণে করতে পারে কিনা সেটা নিয়ে শঙ্কা থাকছেই।
এর বাইরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে নিয়েও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে হবে স্টারমারকে। যদিও তিনিও সব সময় ইউক্রেনের পক্ষেই কথা বলেছেন নির্বাচনের আগে। তাছাড়া যুক্তরাজ্য ইউক্রেনের কট্টর সমর্থন। রাশিয়ার আক্রমণ প্রতিহত করতে সহায়তা করার জন্য অর্থ, অস্ত্র এবং সৈন্য প্রশিক্ষণ প্রদান করেছিল ঋষি সুনাকের সরকার। নতুন সরকারের দায়িত্ব নিয়ে স্টারমারের ভূমিকা কি হবে সেটায় এখন দেখার।
এর বাইরে নির্বাচনের আগে ফ্রান্সের ডান পন্থিদের সমর্থন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন স্টারমার। সেই সঙ্গে ফ্রান্সের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তিগুলোকে আরও শক্তিশালী এবং উন্নত করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছিলেন স্টারমার। এর বাইরে নিজেদের প্রতিরক্ষার দিকেও মনোযোগ দিতে হবে স্টারমারের। কেননা, দেশটির প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির ২.৫ শতাংশে বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। আর সেটি করতে হলে সরকারের প্রথম বছরেই একটি কৌশলগত প্রতিরক্ষা পর্যালোচনা করা হবে। যা হবে স্টারমারের জন্য অন্যতম কঠিন চ্যালেঞ্জ।