মারা গেলেন আন্দোলনে আহত আরও ৪ জন

মারা গেলেন আন্দোলনে আহত আরও ৪ জন

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন এক আইনজীবীসহ ৪ জন। মরদেহ ৪টির ময়নাতদন্ত শুক্রবার (১৬ আগস্ট) দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে সম্পন্ন হয়। তারপর মরদেহ বুঝিয়ে দেওয়া হয় স্বজনদের কাছে।

নিহতরা হলেন- কুমিল্লা সদর উপজেলার আইনজীবী আবুল কালাম (৫৫), নোয়াখালীর দোকান কর্মচারী আসিফ (২৬), চুয়াডাঙ্গার রাজমিস্ত্রী উজ্জ্বল হোসেন (৩০) ও বরগুনার ওষুধ কোম্পানির সেলসম্যান আল আমিন হোসেন (২৭)।

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে নিহত আইনজীবী আবুল কালামের বাড়ি। তবে তিনি কুমিল্লা সদর উপজেলার মহিলা কলেজ রোডে থাকতেন। ধানমন্ডি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আকিব নূর মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদনে বলেন, আবুল কালাম গত ৫ আগস্ট (সোমবার) সরকার পদত্যাগের এক দফার কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছিলেন। মুঘলটুলি সিটি করপোরেশনের ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রায়হান ও তার বাহিনী কুমিল্লা সদর থানার পাশে কুমিল্লা হাই স্কুল সংলগ্ন রাস্তায় আবুল কালামের ওপর হামলা করে এবং তাকে গুলি করে। তাকে সেদিনই স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হয়। ৬ আগস্ট (মঙ্গলবার) তাকে ঢাকার ধানমন্ডি পপুলার হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়। ১৫ আগস্ট সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সেখানে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

এদিকে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার মুক্তারপুর গ্রামে নিহত উজ্জ্বল হোসাইনের বাড়ি। তার বাবার নাম আলতাফ হোসাইন। তার স্ত্রী শিলু আক্তার বলেন, উজ্জ্বল পেশায় রাজমিস্ত্রি। ৫ আগস্ট (সোমবার) কাজ থেকে বাসায় ফিরে চা পান করতে সন্ধ্যায় মুক্তারপুর মোল্লাবাজারে গিয়েছিলেন তিনি। আন্দোলনকারীরা সরকারের পদত্যাগের দাবিতে সেদিন বাজারের একটি হার্ডওয়্যারের দোকানে আগুন ধরিয়ে দেয়। উজ্জ্বলসহ এলাকার বেশ কিছু মানুষ ওই দোকানটিতে বসেছিলেন। দোকানে থাকা গ্যাস সিলিন্ডার সঙ্গে সঙ্গে বিস্ফোরণ হয়। এতে গুরুতর আহত ও দগ্ধ হন উজ্জ্বলসহ আরও কয়েকজন। তাদের ঢাকা মেডিকেলের পুরাতন বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। আজ শুক্রবার (১৬ আগস্ট) ভোর সাড়ে ৬টায় শরীরের ৬৬ শতাংশ দগ্ধ নিয়ে মারা যান তিনি।

অপরদিকে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার মীরআলিপুর গ্রামে নিহত আসিফের বাড়ি। তার বাবার নাম মোর্শেদ আলম। তার এলাকার প্রতিবেশী জামাল উদ্দিন ও লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুতকারী শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ফারুক আহমেদ বলেন, কিছুদিন আগে আসিফ পড়ালেখা বাদ দিয়েছেন। বর্তমানে তিনি এলাকাতে একটি দোকানে কাজ করতেন। গত ৫ আগস্ট (সোমবার) তিনি মিছিল দিয়ে গিয়েছিলেন বেগমগঞ্জ থেকে পার্শ্ববর্তী সোনাইমুড়ি থানায়। এ সময় গুলিবিদ্ধ হন তিনি। ওইদিনই সদর হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়। ৭ আগস্ট (বুধবার) তাকে নিয়ে আসা হয় ঢাকা মেডিকেলে। ১৫ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) রাত সাড়ে ১০টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। আল আমিন হোসেনের বাড়ি যশোরের চৌগাছা উপজেলার আফরা গ্রামে। তার বাবার নাম আনোয়ার হোসেন বাবু। তার ছোট ভাই মো. রাসেল হোসেন বলেন, আল আমিন বরগুনার আমতলীতে রেনেটা ওষুধ কোম্পানির সেলসম্যানের চাকরি করতেন। তিনি আমতলী শহরে থাকতেন। তিনি গত ৫ আগস্ট (সোমবার) কাজ শেষে ঘুমিয়ে ছিলেন সেখানকার বাসার দ্বিতীয় তলায়। আন্দোলনকারীরা বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে বাসার নিচতলায় আগুন লাগিয়ে দেয়। সে আগুন দ্বিতীয় তলায়ও ছড়িয়ে পড়ে। ঘুমন্ত আল আমিনসহ তার কয়েকজন সহকর্মীর শরীরেও লেগে যায় আগুন। শরীরে আগুন নিয়েই তারা তখন ২য় তলা থেকে লাফিয়ে পড়েন রাস্তায়। তাদের উদ্ধার করে স্থানীয়রা বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেলে নিয়ে যান। ৬ আগস্ট (মঙ্গলবার) ঢাকায় শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে তাকে ভর্তি করা হয়। শুক্রবার (১৬ আগস্ট) ভোর সাড়ে ৫টায় শরীরের ৩৬ শতাংশ দগ্ধ নিয়ে আইসিইউতে মারা যান তিনি। ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মো. বাচ্চু মিয়া বলেন, ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ ৪টি তাদের স্বজনদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।