সিলেট থেকে কার্গো ফ্লাইট চালু হচ্ছে আগামীকাল

সিলেট থেকে কার্গো ফ্লাইট চালু হচ্ছে আগামীকাল

অবশেষে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে চালু হচ্ছে কার্গো ফ্লাইট। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামীকাল সন্ধ্যা ৭টার দিকে ৬০ টন পণ্য নিয়ে সিলেট থেকে স্পেনের উদ্দেশে উড়াল দিবে বিমানের একটি কার্গো ফ্লাইট।

দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর সিলেট থেকে এই ফ্লাইট চালু বিদেশে পণ্য রফতানিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ইতোমধ্যে প্রস্তুত রয়েছে কার্গো কমপ্লেক্স ও টার্মিনাল। যথাসময়ে ফ্লাইট চালু করতে সব ধরণের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।

সত্যতা নিশ্চিত করে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন,‘সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরে কার্গো ফ্লাইট চালু করতে ২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে কার্গো কমপ্লেক্স ও টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়েছে। দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর ২৭ এপ্রিলের ফ্লাইট চালু হতে যাচ্ছে। এজন্য বিমানবন্দরের নিরাপত্তা-ব্যবস্থা জোরদারসহ সবধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এই ফ্লাইটে শুধু পণ্য থাকবে। কোনো যাত্রী থাকবে না। এমন সময় ফ্লাইটটি চালু হতে যাচ্ছে যখন ভারত সরকার বাংলাদেশী পণ্যের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করেছে। কার্গো ফ্লাইট চালু হলে বিদেশে বিশেষ করে ইউরোপে পণ্য রফতানীতে বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের জন্য নতুন যুগের সূচনা হবে।’

বাংলাদেশ বিমানের এইচএসআইএ কার্গো ভিলেজ পরিচালক শাকিল মেরাজ জানান, ‘এটি যেহেতু ইউরোপভিত্তিক একটি ফ্লাইট, তাই সেখানে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সিকিউরিটি রেগুলেশন অ্যান্ড সেফটি কমপ্লায়েন্স মেনে সবকিছু করা হবে। যাচাই-বাছাই করে সার্টিফায়েড জনবল দিয়ে পরিবহন করার জন্য আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সিলেট বিমানবন্দরের বর্তমান যে কার্গো অবকাঠামো আছে সেখানে যন্ত্রপাতি ও জনবলের বিষয়টাও বাংলাদেশ বিমান দেখছে। এমন সময় এই উদ্যোগ এলো, যখন ভারত তাদের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করেছে। ভারতের এ নির্দেশনা স্থগিতের চেষ্টা বা পাল্টা কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে নিজেদের সামর্থ্য বাড়ানোর ওপর জোর দিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার।’

জানা গেছে, সিলেট এম এ জি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কার্গো ফ্লাইট চালুর উদ্যোগ আগে থেকেই নেয়া হচ্ছিল বলে জানিয়েছে বেবিচক কর্মকর্তারা। প্রবাসী অধ্যুষিত এই অঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষ ইউরোপ, আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে থাকায় সেখানে কাঁচা সবজির চাহিদা বেশি। সিলেট অঞ্চলের শাক-সবজি, আনারস, লেবুজাতীয় ফল, সাতকড়া, পান, ফ্রোজেন ফিস, সুগন্ধি চাল, বেতের আসবাবপত্র, নকশিকাঁথা এবং কুটির শিল্পের বিশাল বাজার রয়েছে ইউরোপ, আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে। বিগত ছয় বছর ধরে সিলেট থেকে কার্গো ফ্লাইট বন্ধ থাকায় ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সেই পণ্য পাঠাতেন রফতানিকারকরা। তাই, এখানে ফ্লাইট চালুর দাবি জোরালো হচ্ছিল বেশ কিছুদিন ধরে।

গত জানুয়ারি মাসে ঢাকায় বলাকা ভবনে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ড. মো: সাফিকুর রহমানের সাথে সাক্ষাৎ করে দ্রুত কার্গো ফ্লাইট চালুর দাবি জানান সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী। অতীতে শেখ হাসিনার আত্মীয় শেখ কবির হোসেনের কারণে এই ফ্লাইট বন্ধ হয়েছিল বলেও অভিযোগ করেছিলেন তিনি।

বেবিচক কর্মকর্তারা জানান, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিমানবন্দর ক্যাটাগরি-১-এ উন্নীত হয়েছে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের (আইকাও) একটি প্রতিনিধি দল বিমানবন্দর দু’টি পরিদর্শন করে এ ঘোষণা দেয়। এ দু’টি বিমানবন্দর দিয়ে কার্গো ফ্লাইট চালু হলে একদিকে যেমন রফতানিকারকদের ভোগান্তি কমবে, তেমনি বাড়তি টাকা খরচের হাত থেকে রক্ষা পাবেন তারা। পাশাপাশি পণ্য দ্রুত আমদানিকারক দেশে পৌঁছানো যাবে।

সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানায়, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে কার্গো ফ্লাইটে পণ্য পরিবহনের দাবি ছিল ব্যবসায়ীদের। সেই দাবি পূরণ হতে চলছে জেনে আমরা খুবই আনন্দিত। দেশে আটটি কার্গো এয়ারলাইন্সের কার্যক্রম চলছে। এর সবই ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে পরিচালিত হয়। তবে, সিলেটে প্যাকেজিং হাউজ নির্মাণ না হলে সিলেট বা আশপাশের জেলাগুলোর রফতানিকারকরা খুব একটা লাভবান হবেন না বলে মনে করেন সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক সভাপতি ও এফবিসিসিআইর সাবেক পরিচালক খন্দরকার সিপার আহমদ।

তিনি বলেন, কয়েক বছর আগে ব্যবসায়ীদের দাবির প্রেক্ষিতে কার্গো কমপ্লেক্স নির্মাণ করে বেবিচক। কিন্তু সিলেটে প্যাকেজিং হাউজ না থাকায় এটি চালু করা যাচ্ছিল না। ব্যবসায়ীরা ঢাকার শ্যামপুরে পণ্য নিয়ে প্যাকেজিং করে আবার সিলেটে এনে রফতানি করলে খরচ বেড়ে যাবে। তবে তিনি কার্গো ফ্লাইট চালুর উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং এর সুফল পেতে দ্রুততম সময়ে প্যাকেজিং হাউজ নির্মাণের দাবি জানান।

সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী কার্গো ফ্লাইট চালুর জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ‘অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে কার্গো ফ্লাইটটি বন্ধ করা হয়েছিল। প্রবাসী ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের দাবির প্রেক্ষিতে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুততম সময়ে এটি চালুর আহ্বান জানিয়েছিলাম। এখন যেহেতু ফ্লাইট চালু হচ্ছে আশা করছি, প্যাকেজিং হাউজ নির্মাণসহ অন্য জটিলতার অবসান হবে।

বিমানবন্দর সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রথম কার্গো ফ্লাইটে শুধুমাত্র গার্মেন্টস পণ্য রফতানি হলেও প্যাকেজিং হাউজ করা গেলে দেশের যে কোনো স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা সবজিসহ যে কোনো পণ্য সিলেটে নিয়ে সহজে কার্গো ফ্লাইটে পাঠাতে পারবেন। এতে খরচ ও ভোগান্তি দু’টোই কমবে।

সিলেটের ব্যবসায়ীরা, দ্রুততম সময়ের মধ্যে সিলেটে প্যাকেজিং হাউজ নির্মাণ করে কার্গো ফ্লাইট বাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।