ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীকে ক্যাবিনেট মন্ত্রী ও এক-তৃতীয়াংশ এমপির চাপ

গাজার ক্ষুধার্ত বেসামরিকদের কাছে ত্রাণ আটকে রাখার ইসরাইলি পদক্ষেপের জেরে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমারের ওপর চাপ বাড়ছে। তার ক্যাবিনেটের শীর্ষস্থানীয় মন্ত্রী এবং এক-তৃতীয়াংশের বেশি এমপি দ্রুত ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার দাবি তুলেছেন। ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী অ্যাঞ্জেলা রেইনার এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইভেট কুপারসহ একাধিক মন্ত্রী মনে করেন, সরকারকে ফ্রান্সের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়ার উদ্যোগ নিতে হবে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন গার্ডিয়ান।
আন্তর্জাতিক মহলে ইসরাইলের কর্মকাণ্ড নিয়ে ক্ষোভ বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে গাজা সিটিতে ৫ বছরের নিচের শিশুদের মারাত্মক অপুষ্টির ঘটনা গত দুই সপ্তাহে তিনগুণ বেড়ে যাওয়ার পর উদ্বেগ, ক্ষোভ আরও বেড়েছে। বৃটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি শুক্রবার এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, গাজার মানবিক বিপর্যয় এখনই শেষ হওয়া উচিত এবং ইসরাইলকে ত্রাণ প্রবাহে সব ধরনের বাধা সরিয়ে দিতে হবে। তারা আরও যোগ করেছে, বেসামরিক জনগণকে জরুরি মানবিক সাহায্য থেকে বঞ্চিত করা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন ও জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মেৎসের সঙ্গে বৈঠকের পর স্টারমার বলেন, জিম্মিদের বন্দি অব্যাহত থাকা, ফিলিস্তিনি জনগণকে অনাহারে রাখা, ত্রাণ অস্বীকার, চরমপন্থী বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতা বৃদ্ধি এবং গাজায় ইসরাইলের অসামঞ্জস্যপূর্ণ সামরিক তৎপরতা- এসব কিছুই অগ্রহণযোগ্য। স্টারমার বলেন, তিনি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়ার পক্ষে স্পষ্ট সমর্থন দেন, তবে এটি একটি বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ হতে হবে যা দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের পথে নিয়ে যাবে এবং ফিলিস্তিনি ও ইসরাইলি উভয়ের জন্য স্থায়ী নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। এর ফলে যারা ভোগান্তিতে আছে তাদের জীবনের উন্নতি ঘটাতে স্বীকৃতিটি সর্বাধিক কার্যকর হাতিয়ার হয়ে উঠবে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার স্কটল্যান্ডে চার দিনের সফরে পৌঁছান, সেখানে সোমবার তার স্টারমারের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা। এর আগে ম্যাক্রন ঘোষণা করেন, ফ্রান্স সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে। ম্যাক্রনের পদক্ষেপকে গুরুত্বহীন বলে উড়িয়ে দেন ট্রাম্প এবং বলেন, এটা কিছুই পরিবর্তন করবে না। বৃটেনের নীতি অনুযায়ী, তারা ফিলিস্তিনকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেবে কেবল শান্তি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এবং অন্যান্য পশ্চিমা দেশের সঙ্গে সমন্বয়ে, সর্বোচ্চ প্রভাব সৃষ্টির উপযুক্ত সময়ে।
রেইনার ও কুপারসহ অন্তত সাতজন ক্যাবিনেট মন্ত্রী জরুরি পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন। দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ওয়েস স্ট্রিটিং, আইনমন্ত্রী শাবানা মাহমুদ এবং নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড বিষয়ক মন্ত্রী হিলারি বেন সাম্প্রতিক বৈঠকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র স্বীকৃতির পক্ষে কথা বলেছেন। স্কটল্যান্ড মন্ত্রী ইয়ান মারে ও ওয়েলস মন্ত্রী জো স্টিভেন্সও বিষয়টি তুলেছেন। সংস্কৃতি মন্ত্রী লিসা ন্যান্ডি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামিও ডাউনিং স্ট্রিটকে আরও দৃঢ় অবস্থান নিতে চাপ দিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
এক সরকারি সূত্র বলছে, এখন অবস্থা দাঁড়িয়েছে প্রায় সবাই বনাম ১০ নম্বর (ডাউনিং স্ট্রিট) অবস্থান করছে। গত মাসে রেইনার বলেন, গাজার ক্ষেত্রে পশ্চিমা বিশ্বকে অতীতের ভুল এড়াতে হবে। সেন্ট পলস ক্যাথেড্রালে স্রেব্রেনিৎসা গণহত্যার ৩০তম বার্ষিকীতে তিনি বলেন, ১৯৯০-এর দশকে পশ্চিমা বিশ্ব দেরিতে পদক্ষেপ নিয়েছিল। ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে হবে এবং নিষ্ক্রিয়তার পরিণতি এড়াতে হবে। শুক্রবার নয়টি দলের ২২১ জন এমপি জাতিসংঘের নিউ ইয়র্ক সম্মেলনের আগে বৃটিশ স্বীকৃতির আহ্বান জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যামিকে চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে বলা হয়েছে, বৃৃটেনের এককভাবে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার ক্ষমতা নেই। কিন্তু ঐতিহাসিক দায়বদ্ধতা ও জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য হওয়ায় বৃটিশ স্বীকৃতি বিশেষ প্রভাব ফেলবে। ১৯৮০ সাল থেকে আমরা দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানকে সমর্থন করেছি। স্বীকৃতি সেই অবস্থানকে বাস্তব রূপ দেবে।
চিঠির স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন লেবার পার্টির একাধিক কমিটির চেয়ারম্যান এমিলি থর্নবেরি (বিদেশ বিষয়ক), সারা চ্যাম্পিয়ন (আন্তর্জাতিক উন্নয়ন) এবং তানমানজিত সিং ধেসি (প্রতিরক্ষা)।
এছাড়া সই করেছেন লিবারেল ডেমোক্র্যাট নেতা এড ডেভি, গ্রিন পার্টির যৌথ নেতা কার্লা ডেনিয়ার ও অ্যাড্রিয়ান র্যামসি, স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টির ওয়েস্টমিনস্টার নেতা স্টিফেন ফ্লিন, এবং কনজারভেটিভ এমপি কিট মালথাউস ও এডওয়ার্ড লি। মোট সমর্থনকারী লেবার এমপিদের সংখ্যা আরও বেশি। এক লেবার এমপি বলেন, আমাদের আরও কিছু করতে হবে। ইসরাইল ভয়াবহ যুদ্ধাপরাধ করছে। প্রায় ৬০ জন লেবার এমপি এর আগে ল্যামিকে দেওয়া এক চিঠিতে একই আহ্বান জানান।