ব্রিটেনের রাজপথে গণআন্দোলন, নেপথ্যে কারা?

ব্রিটেনের রাজপথে গণআন্দোলন, নেপথ্যে কারা?

ব্রিটেনের রাজপথে গণআন্দোলন প্রতিদিনই নতুন নতুন রূপ ধারণ করছে। তবে এ আন্দোলন সম্পর্কে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো যেসব খবর ও বিশ্লেষণ প্রকাশ করছে, তা বিশ্ববাসীকে চিন্তার খোরাক যোগাচ্ছে। 

বিবিসি দাবি করছে, ভার্চুয়াল জগতে ছড়িয়ে দেওয়া মিথ্যাচারের কারণে ব্রিটেনে গণআন্দোলন শুরু হয়েছে। দেশটির ‘মাতাল’ লোকজনও প্রতিবাদে অংশ নিচ্ছে। তবে নিউ ইয়র্ক টাইমস জানাচ্ছে, অর্থনৈতিক সংকট ও দৈনন্দিক জীবনযাপনের ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে জনগণ প্রতিবাদ জানাতে রাস্তায় নেমে এসেছেন।

সম্প্রতি ইরানের বার্তা সংস্থা ফার্স ‘ব্রিটেনের রাজপথে কী ঘটছে’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছে। এতে ওই আন্দোলন সম্পর্কে ইংরেজি গণমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত খবরাখবরের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা হয়েছে:

রয়টার্স: অন্তত এক হাজার মানুষ আটক হয়েছেন
ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম রয়টার্স জানিয়েছে, ব্রিটেনে তীব্র প্রতিবাদ বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর থেকে পুলিশ অন্তত এক হাজার বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে। যাদের মধ্যে ১৩ বছরের একটি মেয়েও রয়েছে। 

ব্রিটিশ সরকার এর আগে ২০১১ সালে রাজপথে ছড়িয়ে পড়া একটি আন্দোলন দমনের জন্য মাত্র এক সপ্তাহে ৪ হাজার মানুষকে আটক করেছিল।


বিবিসি: বিক্ষোভকারীরা সন্ত্রাসী
‘উগ্র ডানপন্থি দুষ্কৃতকারীরা ভার্চুয়াল জগতে ছড়িয়ে পড়া মিথ্যাচারে প্রভাবিত হয়ে ধ্বংসাত্মক তৎপরতা চালাচ্ছে’। ব্রিটিশ সরকার ও তার অর্থে পরিচালিত গণমাধ্যমগুলো বিশেষ করে বিবিসি দেশটির রাজপথে ছড়িয়ে পড়া আন্দোলনকে এভাবেই তুলে ধরার চেষ্টা করেছে।

বিবিসির সংবাদদাতা দাবি করেছেন, অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া মিথ্যা তথ্য পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে তুলেছে। দাঙ্গায় উস্কানিদাতারা সামাজিক মাধ্যম ও বিভিন্ন মেসেঞ্জার অ্যাপ ব্যবহার করে তৎপরতা চালাচ্ছে এবং বিক্ষোভের সময় ও স্থান ঘোষণা করছে। দুষ্কৃতকারীরা অভিবাসীদের পাড়ায়-মহল্লায় হামলা চালাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী স্টারমার দাঙ্গাকারীদের উগ্র ডানপন্থি দুষ্কৃতকারী বলে অভিহিত করেছেন।

এ প্রতিবাদ বিক্ষোভ সম্পর্কে বিবিসি আরও বলছে, উগ্র ডানপন্থিদের মধ্যে রয়েছে গণহত্যাকারী নাৎসিরা। সরকার তাদেরকে সন্ত্রাসী বলে অভিহিত করেছে। তারা সমাজকে ধ্বংস করে ফেলতে চায়। দাঙ্গাকারীদের একাংশ ছিল দুষ্কৃতকারী ও ডাকাত। কেউ কেউ ছিল মাতাল, যারা রাস্তায় নেমে মাতলামি শুরু করে দিয়েছিল। কেউ অনলাইনে থাকলেই তারা তাকে উস্কানি দিয়ে রাস্তায় টেনে নামিয়েছে।

গার্ডিয়ান: টুইটারের মালিকের বিচার করুন
এদিকে ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান লিখেছে যে, দেশটির রাজপথে ছড়িয়ে পড়া দাঙ্গায় উস্কানি দেওয়ার কাজে টুইটার ব্যবহার করা হয়েছে। এ কারণে এর মালিক ইলন মাস্কের বিচার করতে হবে।  

গার্ডিয়ান আরেক খবরে লিখেছে, রাজপথে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভ দমন করতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ৬ হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

নিউ ইয়র্ক টাইমস: অর্থনৈতিক সংকটের কারণে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে
অন্যদিকে মার্কিন দৈনিক নিউ ইয়র্ক টাইমস এক প্রতিবেদনে লিখেছে, জনসেবা ব্যাহত হওয়া এবং জীবনযাত্রার ব্যয় ভয়াবহ রকম বেড়ে যাওয়ার কারণে রাজপথে প্রতিবাদ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে। এ সম্পর্কে নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক ইতিহাসের বিশিষ্ট অধ্যাপক প্রফেসর ড. স্টিফেন ফিল্ডিং দৈনিক নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরে অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে থাকা ব্রিটেনের কিছু অংশে এই দাঙ্গা সংঘটিত হয়েছে।

ব্রিটেনের দাঙ্গা দমনে প্রধানমন্ত্রী স্টারমারের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে জানিয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছে, ২০১১ সালে যখন স্টারমার সিনিয়র সরকারি কৌঁসুলি ছিলেন, তখন দাঙ্গাকারীদেরকে ধরে ধরে সংক্ষিপ্ত বিচারের মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডের ব্যবস্থা করেছেন।

নিউ ইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী স্টারমারের সাবেক চিফ অব স্টাফ মিসেস ক্লেয়ার আইন্সলি এ সম্পর্কে বলেছেন, বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেওয়া সবাইকে অভিবাসী-বিদ্বেষী বলে চিত্রায়িত করা ঠিক হবে না। মানুষের অর্থনৈতিক সমস্যার উন্নতি হলে এবং তাদের সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত হলে উগ্র ডানপন্থিরা তাদেরকে উস্কানি দিতে পারবে না। কিন্তু ব্রিটেনের অর্থনীতির যে অবস্থা তাতে অদূর ভবিষ্যতে তেমন ভালো অবস্থা সৃষ্টি হবে বলে মনে হয় না।