সুনামগঞ্জ সীমান্তে দুই কোটি ৫৭ লাখ টাকার অবৈধ পণ্য জব্দ
৩৭৪৭ দশমিক ১৮ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে ঘটিত হাওরের জেলা সুনামগঞ্জ। এই জেলার ৯০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। সীমান্তগুলো এতটাই দুর্গম যে, বিশেষ কোনো অভিযান করতে গেলে যে কোনো প্রশাসনিক বাহিনীকে হিমশিম খেতে হয়। এটিকে পুঁজি করে চোরাচালানের স্বর্গরাজ্য হয়ে ওঠেছে সীমান্তগুলো। যা প্রতিরোধে প্রতিনিয়ত অভিযান চালাচ্ছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। চোরাচালান বন্ধে সুনামগঞ্জ সীমান্তে বিজিবির সদস্যও বাড়ানো হয়েছে।
এর মধ্যে একটি অভিযানে ধরা পড়েন হৃদয় মিয়া। সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের ভাওয়ালীপাড়া গ্রামের যুবক তিনি। ভারতীয় সীমানার ডালিয়া-কাসিন্দা বস্তিতে ৮০০ বস্তা রসুন পাচার শেষে টাকা নিয়ে ফিরছিলেন। ইউনিয়নের দক্ষিণ কলাউড়া সীমান্ত গ্রাম থেকে সাড়ে ১৯ লাখ ভারতীয় রুপিসহ তাকে আটক করে বিজিবি। বাংলাদেশি টাকায় যা প্রায় ২৭ লাখ ৭৭ হাজার ৪৯৯ টাকা ২৮ পয়সা।
শুধু তাই নয়, এই উপজেলার মৌলারপাড় এলাকা রীতিমতো চোরাচালানের বন্দর হয়ে উঠেছে। সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ার ১২৩৪-১২৩৬ পিলারের অংশটুকু ছেঁড়া থাকায় বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিন চোরাকারবারিরা বাংলাদেশ থেকে রসুন, ইলিশ, শিং, শুকনো সুপারি ভারতে পাচার করছে। আর তার বিনিময়ে ওপার থেকে আসছে চিনি-পেঁয়াজ। বিশেষ করে জেলার বিশ্বম্ভরপুর সীমান্তের রাজাপাড়া দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে ভারতীয় চিনি ও পেঁয়াজ। যেগুলো পরে বড় ট্রাক কিংবা কাভার্ডভ্যানে করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাচার করছে চোরাকারবারিরা।
সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা কবির আহমেদ বলেন, চোরাচালান বাড়তে থাকায় যুব সমাজ নষ্ট হচ্ছে। তাই যারা রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্ষমতায় আছেন তাদের তদারকি যদি বাড়ানো হয় তাহলে চোরাচালান বন্ধ সম্ভব।
সুনামগঞ্জ বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মফিজুর রহমান বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত ভারতীয় চিনি, পেঁয়াজ, কসমেটিকস জব্দ করছি। মোবাইল কোর্টও পরিচালনা করছি।
এদিকে সুনামগঞ্জের সীমান্ত এলাকায় বিজিবির জনবল বাড়ানোর পর গত ১৫ দিনে জেলার দোয়ারাবাজারের কুশিউড়া সীমান্তে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে বাংলাদেশি ৬,০০০ কেজি সুপারি, ৬,০০০ কেজি রসুন, ৪,০০০ কেজি শিং মাছসহ একটি তিনটনের ট্রাক, দুটি ডিআই পিকআপ ও চারটি মাহিন্দ্রা পিকআপ জব্দ করে বিজিবি। যার বাজার মূল্য দুই কোটি টাকা। সেই সঙ্গে এই উপজেলার ঘিলাতলী নামক সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচারের সময় ২৭৫ কেজি ইলিশ জব্দ করা হয়। যার আনুমানিক বাজার মূল্য ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
সেই সঙ্গে অবৈধভাবে ভারত থেকে বাংলাদেশে আসার পথে ১৬টি মহিষ, ২১৯টি লাক্স সাবান, ৪২ কেজি জিরা, ৩৯ পিস অলিভ অয়েলের বোতল, ৪৩ পিস জনসন বেবি লোশন ও ১৪৪ কেজি ফুচকা জব্দ করে বিজিবি। যার বাজার মূল্য ২৫ লাখ ৮ হাজার ৯শ ১০ টাকা।
এছাড়া জেলার তাহিরপুর উপজেলার লাউড়ের গড়ের শাহিদাবাদ এলাকার সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচারের সময় ৪৬ কেজি ৫০০ গ্রাম ইলিশ জব্দ করে বিজিবি। যার বাজার মূল্য ৯৫ হাজার টাকা।
সুনামগঞ্জে বিজিবির ২৮ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল এ কে এম জাকারিয়া কাদির বলেন, সীমান্ত এলাকাগুলোতে চোরাচালানের তৎপরতা বেড়েছে। তবে বিজিবি এরই মধ্যে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছে। আশা করি অপরাধ দ্রুত শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসা হবে।
বিজিবির সিলেট সেক্টরের কমান্ডার কর্নেল মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, সুনামগঞ্জে বিজিবির প্রায় ৪০০ সদস্য বাড়ানো হয়েছে। টহল বেড়েছে সীমান্তে। এরপরও অনেকেই ঝুঁকি নিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সবশেষ ২১ সেপ্টেম্বর অভিযান চালিয়ে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারের বাঁশতলূ সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচারের সময় ৮৮৫ কেজি ইলিশ জব্দ করে বিজিবি। যার বাজার মূল্য ২২ লাখ টাকা।