সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি: নগরীতে ঢুকছে সুরমা নদীর পানি
ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেটের সীমান্তবর্তী সাতটি উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলার পর এবার সুরমা নদীর পানি ছড়াগুলো উপচে সিলেট নগরীর নিম্নাঞ্চলে প্রবেশ করছে।
বৃহস্পতিবার (৩০ মে) মধ্যরাত থেকে সিলেট নগরীর নিম্নাঞ্চল এলাকাগুলোতে পানি ঢুকতে শুরু করে।
শুক্রবার (৩১ মে) সরেজমিনে সিলেট নগরীর জামতলা, তালতলাস্থ সিলেটের ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্স কার্যালয় ও তোপখানা, সোবহানীঘাটসহ বেশ কয়েকটি নিম্নাঞ্চল এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে দেখা যায়। এছাড়াও নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা ড্রেনের ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করতে দেখা যায়।
সিলেট সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ বলছে, উজানের পানি নেমে আসায় নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। যেখানে ছড়ার পানি নদীতে যাওয়ার কথা সেখানে নদীর পানি ছড়া উপচে নগরীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে।
সিলেট আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে শুক্রবার ৬টা পর্যন্ত সিলেটে প্রায় ৬১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেট কার্যালয়ের তথ্যমতে, শুক্রবার সকাল ৯টায় সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৯৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সিলেট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ০ দশমিক ৩০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে, জকিগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারে কুশিয়ারা দুটি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এরমধ্যে অমলসিদ পয়েন্টে ২০৭ সেন্টিমিটার ও শেওরা পয়েন্টে ১৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার (৩০ মে) রাতে নগরীর তালতলাস্থ একটি ছড়ার পানি উপচে সিলেটের ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্স কার্যালয়ে প্রবেশ করে। এরপরই ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র অন্যত্র সরিয়ে নেন। শুক্রবার সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত দেখা যায় পানি রয়েছে।
এদিকে, টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেয়ায় জরুরি সভা করেছে সিলেট সিটি করপোরেশন। সিটি মেয়র মো.আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর নির্দেশে ও ভারপ্রাপ্ত মেয়র মো.মখলিছুর রহমান কামরানের সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৪টায় নগরভবনের সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় নগরীর কয়েকটি ওয়ার্ডকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং বৃহস্পতিবার রাতের মধ্যে ওই ঝুঁকিপূর্ণ ওয়ার্ডগুলোতে কাউন্সিলরদের মাধ্যমে আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুতের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। শুক্রবার থেকে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানি এবং প্রাথমিক চিকিৎসা সামগ্রী প্রেরণ, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় উদ্ধার কাজের জন্য নৌকার ব্যবস্থা, নিম্নাঞ্চলের বিদ্যুৎ কেন্দ্র, উপ-কেন্দ্রগুলো বন্যার পানিতে যাতে ডুবে না যায় সেজন্য সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ বিভাগের কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে সহযোগিতা প্রদান, নগরবাসীর জরুরি সেবার জন্য ২৪ ঘণ্টা কন্ট্রোল রুম চালুসহ পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করলে রান্না করা খাবার পরিবেশনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সভায় জনস্বার্থে সিলেট সিটি করপোরেশনের বিদ্যুৎ, পানি, স্বাস্থ্য ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা শাখার সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রাথমিকভাবে ৩ টন চিড়া, ৩ টন মুড়ি, গুড়, খাবার পানি, পানি বিশুদ্ করণ ট্যাবলেট এবং ওরস্যালাইন ক্রয় করা হয়েছে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর জানান, সিসিক মেয়র মো.আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বর্তমানে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করায় তিনি ভারপ্রাপ্ত মেয়র মখলিছুর রহমান কামরানের সাথে আলোচনা করে জরুরি সভা আহ্বানের নির্দেশনা প্রদান করেন এবং ইতিমধ্যে জরুরি ত্রাণ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সাথেও আলোচনা করেছেন।
তিনি আরও জানান, দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে আতঙ্কিত না হয়ে ধৈর্য্য ও সাহসের সাথে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। এছাড়াও তিনি মসজিদ, মন্দিরসহ সকল ধর্মীয় উপাসনালয়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষায় বিশেষ মোনাজাত-প্রার্থনা করার জন্য নগরবাসীর কাছে অনুরোধ জানান।
যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সাহায্যের জন্য ২৪ ঘণ্টা কন্ট্রোল রুম (০১৯৫৮-২৮৪৮০০) অথবা ভারপ্রাপ্ত মেয়র, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সাথে যোগাযোগের অনুরোধ জানিয়েছেন মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, 'উজানের পানি নেমে আসায় নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। যেখানে সিলেট নগরীর ছড়ার পানি নদীতে পড়ার কথা সেখানে নদীর পানি উল্টো ছড়া উপচে নগরীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি।'