আরব নিউজের নিবন্ধ

বাংলাদেশের বিস্ময়কর উত্থান

বাংলাদেশের বিস্ময়কর উত্থান

গত ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে বিজয়ের মাধ্যমে বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষমতাসীন নারী সরকারপ্রধান হয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে টানা চার মেয়াদসহ মোট পাঁচবার ক্ষমতায় এসেছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা, যিনি ১৯৭১ সালে দেশটির রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতাযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। যদিও এর চার বছর পর সামরিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যের সঙ্গে তিনিও হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। তবে দেশের বাইরে থাকায় এ হামলা থেকে কেবল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা বেঁচে যান। এরপর ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হলে বাংলাদেশ এক অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক উন্নয়ন লাভ করে, যাকে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিশেষজ্ঞরা কেবল ‘মিরাকল’ বলে উল্লেখ করেন। এ উন্নয়নের সাথে বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানের ভূমিকা রয়েছে। বিষয়টি দেশটির কৌশলগত জোট ভারত, অর্থনৈতিক মিত্র চীন এবং আরব বিশ্ব দ্বারাও প্রমাণিত। দেশটি তৈরি পোশাকশিল্পে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অবস্থান দখল করেছে। এ ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান বাজার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছে। একদিকে যুক্তরাষ্ট্র যখন দক্ষিণ চীন সাগর ও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিজের জোট সদস্যদের নিয়ে চীনের ওপর প্রভার বিস্তারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, ঠিক একই সময়ে জাপানের অর্থায়নে বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগরে গভীর সমুদ্রবন্দর গড়ে তুলতে যাচ্ছে। যা কেবল বাংলাদেশের সামুদ্রিক সক্ষমতা বাড়াবে না, এটা দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার মধ্যকার সংযোগ স্থাপনকারী দেশ হিসেবে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ স্থাপন করবে। ফলে আঞ্চলিক সংযোগ ও ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একক অবস্থানের ভিত্তি গড়ে তুলতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের নির্বাচনের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে যুক্তরাষ্ট্রকে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের প্রতিক্রিয়ার বিষয়টি মাথায় রাখার অনুরোধ করেছে পশ্চিমারা। কারণ এই অঞ্চলে বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ এবং এটা এমন এক সময় যখন তাইওয়ান প্রণালী এবং দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে বেইজিংয়ের সাথে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের উত্তেজনা চলছে। এ অবস্থার মধ্যে বাংলাদেশের নীতি নির্ধারকরা যুক্তরাষ্ট্রের অপ্রয়োজনীয় এবং পক্ষপাতমূলক আচরণের কারণে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কেননা দেশটির জন্য এ নির্বাচন ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ছিল, যেখানে বিরোধী দলগুলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে যাচ্ছিল এবং দেশটিও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে নিজেদের অবস্থানকে তুলে ধরার চেষ্টা করছিল। বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির অভিযোগ, নির্বাচন কমিশনের ওপর তাদের কোনো আস্থা নেই। এ জন্য তারা নির্বাচন বয়কট করেছে এবং কোনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি। তবে দলটির বয়কট সত্ত্বেও এ নির্বাচনে ৪০ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছে। এই নির্বাচনটি আবর পার্লামেন্ট, ওআইসিসহ ৪০ দেশের পর্যবেক্ষকরা পর্যবেক্ষণ করেছেন। গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, নির্বাচন কমিশনও স্বচ্ছ নির্বাচনী প্রক্রিয়ার আয়োজন করেছিল। এ নির্বাচনে জয়লাভের পরপরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তাৎক্ষণিক অভিনন্দন জানিয়েছে চীন ও ভারত। মূলত এ দেশ দুটি বাংলাদেশের অনেক মেগা প্রজেক্টের অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক জোগানদাতা। নির্বাচনের পর ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকার প্রতিকৃতি তুলে দিয়েছেন এবং ভারতের রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের সাথে আরও গভীরভাবে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সাথে আমাদের স্থায়ী ও জনকেন্দ্রিক অংশীদারিত্ব আরও জোরদার করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এরপর রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রীও শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। দেশটি বাংলাদেশের একমাত্র পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের অর্থনৈতিক জোগানদাতা। এতসব পরিস্থিতির মধ্যেও মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নয় বলে উল্লেখ করেছে। এ নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ হয়নি বলেও মত দিয়েছে তারা। বাংলাদেশের অনেক নীতি নির্ধারকের বিশ্বাস, ওয়াশিংটন বাংলাদেশের ওপর অনৈতিক চাপ দিয়ে আসছে। যেখানে কোনো বড় ধরনের হস্তক্ষেপ বা গুরুতর বিশৃঙ্খলা ছাড়া নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে। এমনকি ঢাকায় পর্যবেক্ষণে আসা মার্কিন পর্যবেক্ষক আলেকজান্ডার গ্রে বলেন, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত নির্বাচন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করেছেন। তিনি বলেন, আমরা ভোটারদের সঙ্গে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে কথা বলেছি, এতে কোথাও কোনো ধরনের বাধা দেখতে পাইনি; কোথাও কোনো প্রার্থী, দল বা কারোর ওপর চাপ প্রয়োগের বিষয়টিও লক্ষ্য করিনি। ঢাকার বাইরেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভোটারের উপস্থিতি দেখা গেছে। এমনকি গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনকে সামনে রেখে ১৭ মার্কিন-বাংলাদেশি কর্মকর্তা, মানবাধিকার, সামাজিকসহ বিশিষ্টজনেরা মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে বাংলাদেশের নির্বাচনের বিষয়ে অবস্থান পুনর্বিবেচনার জন্য চিঠি দিয়েছিলেন। চিঠিতে বলা হয়, আমরা বাংলাদেশের সহিংসতামুক্ত ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে আপনার অবস্থান পরিবর্তনের জন্য অনুরোধ করছি। বিএনপি-জামায়াতের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় সংগঠনগুলোর দ্বারা সংঘটিত ব্যাপক জঙ্গি তৎপরতাকে মার্কিন নীতি বিবেচনা করতেও বলা হয়। এর আগে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে এক র‌্যালিতে শেখ হাসিনা বিএনপিকে সন্ত্রাসী ও জামায়াতে ইসলামীকে যুদ্ধাপরাধীদের দল হিসেবে উল্লেখ করেন। এমনকি নির্বাচনের পর রাশিয়া মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে বাংলাদেশকে নিয়ে সমালোচনার জবাব দিয়েছে এবং প্রকাশ্যে মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে। যা বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে বেশ বড়সড় কভারেজও পেয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হিসেবে গড়ে উঠেছে। দেশটির মাথাপিছু আয় ২৮০০ মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে, যা ২০০৫ সালে ৫০০ ডলারের নিচে ছিল। এর মাধ্যমে দেশটি মার্কিন কর্তৃক ঘোষিত স্বল্প আয়ের দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উন্নীত হয়েছে। অর্থনৈতিক তথানুসারে, বাংলাদেশ ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত হবে। অথচ একটা সময় দেশটিকে সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার তলাবিহীন ঝুড়ি বলে উল্লেখ করেছিলেন। অথচ এর ১৫ বছরের মধ্যে মুসলিম দেশগুলোর মধ্যকার একমাত্র নারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিশাল অর্থনৈতিক উন্নয়ন কর্মসূচি শুরু করেছে, যা বিশ্বব্যাপী উন্নয়ন বিশেষজ্ঞরা কীভাবে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে টেকসইভাবে দারিদ্র্য থেকে বের করে আনতে পারে তার একটি মডেল হিসেবে স্বাগত জানিয়েছে। বর্তমানে বিশ্বব্যাংকও বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এমনকি বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক রূপান্তরে শেখ হাসিনা সরকারের ধর্মনিরপেক্ষ সামাজিক পরিবর্তনকে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। বর্তমানে তিনি ডিজিটাল বাংলাদেশ অর্জনের ভিশন নিয়েছেন, যা ২০৪১ সালে বাস্তবায়ন হবে। দেশটির এ উন্নয়ন এমনিতে অর্জিত হয়নি। এরইমধ্যে শেখ হাসিনাকে ১৯ বার হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে। এ ছাড়া উগ্রবাদী আদর্শকে দমন করতে গিয়ে তার সরকারকে বেশ কয়েকবার সন্ত্রাসী হামলার মুখে পড়েছে। শেখ হাসিনা সরকারের নেতৃত্বে খুব সতর্কতার সাথে বাংলাদেশে প্রধান এবং উদীয়মান শক্তিগুলোর সাথে ভূ-রাজনৈতিক সমুদ্রসীমা পরিচালনা করছে এবং ভারতের সাথে একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অংশীদার হয়ে উঠেছে। একই সঙ্গে আসিয়ান রাষ্ট্রগুলো বিশেষ করে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে সহযোগিতার পরিধিও বাড়ছে। শেখ হাসিনা সরকারের পররাষ্ট্রনীতি হলো সবার সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, কারোর সঙ্গে বিদ্বেষ নয়। বিষয়টি বৈশ্বিক কূটনীতিতেও প্রতিফলিত হয়েছে। কেননা একদিকে দেশটির সাথে চীনের সম্পর্ক ক্রমেই গভীর হচ্ছে আর অন্যদিকে সমান্তরালভাবে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান ও কানাডাসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মোড়ল গোষ্ঠীর সঙ্গেও সম্পর্ক তাল মিলিয়ে চলছে। ২০১৬ সালে ঢাকার একটি ক্যাফেতে জামাত-ই-ইসলামী দ্বারা সর্বশেষ সন্ত্রাসী হামলা হয়েছিল। এই ঘটনায় বেশ কয়েকজন বিদেশিকে জিম্মি করে হত্যা করেছিল। গত বছরের ২৮ অক্টোবরও এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সাথে যুক্ত একটি গ্রুপ হামলা চালিয়ে একজন পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে। এ ছাড়াও এই গোষ্ঠীটি প্রায় ২০০টি গাড়ি, বাস এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় বাংলাদেশি নাগরিকরা আহত হয়েছেন আবার কেউ কেউ ভয়ানকভাবে আগুনে দগ্ধ হয়েছেন। ২০ বছর আগে প্রায় প্রতিদিনের ভিত্তিতে যে ধরনের আক্রমণের ঘটনা ঘটেছিল এই হামলাগুলো সেসব ঘটনাকেই মনে করিয়ে দেয়। সেই ভয়াবহ দিনগুলো যেন আর ফিরে না আসে জনসাধারণের কাছে সেটি নিশ্চিত করাই হচ্ছে শেখ হাসিনার আবেদনের মূল ভিত্তি। নির্বাচনের সমালোচনা এবং সরকারের বৈধতা নিয়ে তোলা প্রশ্নে ওয়াশিংটনকে এখন নিজেকেই প্রশ্ন করতে হবে যে তারা বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা এবং দক্ষিণ এশিয়ার সম্প্রসারণে সমর্থন করে কি না। নভেম্বরে হাসিনা যখন ব্রাসেলস সফরে গিয়েছিলেন, তখন তিনি স্পষ্ট জানিয়েছিলেন যে ইউরোপ ও চীনের মধ্যে প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতায় তার দেশ কোনো পক্ষ নেবে না। একটি বৈদেশিক নীতি এবং কৌশলগত ভারসাম্যের ভিত্তিতে পশ্চিমের মূল রপ্তানি বাজার, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার ৪৩টি বিনিয়োগ বাংলাদেশকে গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো নির্মাণে সহায়তা করেছে। এ ছাড়াও চীনা নির্মাণ সংস্থাগুলোর সাথে প্রায় ২৩ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির মূল চালিকা শক্তি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বাংলাদেশের হিন্দু, বৌদ্ধ এবং খ্রিষ্টানদের মতো ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান সমুন্নত রাখার পাশাপাশি তাদের অধিকার ও ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষার জন্যও রীতিমতো লড়াই করছে প্রধানমন্ত্রী ও তার প্রশাসন। এছাড়া মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর জাতিগত নিধন থেকে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া লাখ লাখ রোহিঙ্গার জীবনমান উন্নয়নেও বাংলাদেশ প্রচুর ব্যয় করে থাকে, যাদের দেশটি অতিথি হিসেবে গ্রহণ করেছে। সাম্প্রতিক বছরে ভাসান চরে ১০ হাজার রোহিঙ্গা পরিবারকে স্থানান্তরিত করা হয়েছে যেখানে তারা পরিচ্ছন্ন বাসস্থানের পাাশাপাশি বিনামূল্যে চাকরির জন্য কর্মমুখী প্রশিক্ষণ, বাচ্চাদের শিক্ষার সুযোগ এবং স্বাস্থ্যের মতো জরুরি সেবা পাচ্ছে। এই বিশাল মানবিক উদ্যোগ এমন এক সময়ে বাংলাদেশ চালিয়ে যখন প্রতিবেশী মিয়ানমার ধীরে ধীরে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে বিভক্ত হয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে দেশটির জান্তার প্রতিযোগী সামরিক শক্তিগুলো উপমহাদেশের জন্য গুরুতর নিরাপত্তা হুমকি সৃষ্টি করছে। এদিকে বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করা নীতিনির্ধারকরা বলছেন, তারা ভবিষ্যতে বৈদেশিক সাহায্য প্রাপ্তির চেয়ে বৈদেশিক বাণিজ্যে আরও মনোযোগী হতে আগ্রহী। জাতিসংঘের তথ্যমতে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই বাংলাদেশ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার বেশকিছু সূচকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে এবং পরবর্তীতে এই উন্নয়নের ধারা দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে শেখ হাসিনা ঘোষিত রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নে ভালোভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ভারতের অস্থিতিশীল নর্থইস্ট ফরেন্টিয়ারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অব্যাহত রাখবে এবং শেখ হাসিনা সরকারের ক্ষমতায় থাকলে দুই দেশের মধ্যকার প্রতিরক্ষা এবং নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। বাংলাদেশের অনুষ্ঠিত নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী ওয়াশিংটনের সাথে সম্পর্ক অব্যাহত রেখেছেন। এমনকি এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর মার্কিন-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমি প্রতিহিংসা পরায়ণ না, স্বাধীন ও মুক্তচিন্তার অধিকারী। বরং এটা ভালো যে আমি তাদের সমালোচনা থেকে শুনতে ও শিখতে পারি। পররাষ্ট্রনীতির বিষয়ে তিনি বলেন, সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারোর সাথে শত্রুতা নয়। এমনকি তিনি মজা করে বলেন, গত সেপ্টেম্বরে ভারতে জি-২০ সামিটের সাইডলাইনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাথে সাক্ষাতকালে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদের সাথে সেলফি তুলেছিলেন। ফলে ওয়াশিংটনের বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে সমালোচনা স্থায়ী নাও হতে পারে। তবে চলমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে সেটি দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যপন্থী রাষ্ট্রগুলোকে শক্তিশালী করা এবং এই অঞ্চলে চরমপন্থারোধে একটি অপ্রয়োজনীয় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। লেখক ওবাই সাবানদার, পেন্টাগনের সাবেক বিশ্লেষক ও অ্যাডেলে নাজারিয়ান, সাংবাদিক ও পররাষ্ট্রনীতি বিশ্লেষক