‘ইরান পাল্টা হামলা করলে ইসরায়েল সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাবে’

‘ইরান পাল্টা হামলা করলে ইসরায়েল সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাবে’

ইরানের মূল ভূখণ্ডে হামলার সাহস আমেরিকার নেই উল্লেখ করে কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. শাহিদুজ্জামান বলেছেন, এবার মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্র দুর্বল নীতি অনুসরণ করছে, যা দেশটিকে আরব বিশ্বে একঘরে করে তুলতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র-ইরানের মধ্যকার উত্তেজনা, হামলা-পাল্টা হামলার প্রসঙ্গ এবং মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি নিয়ে জাগো নিউজের কথা হয় এই বিশ্লেষকের সঙ্গে। ড. শাহিদুজ্জামান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক। আন্তর্জাতিক ইস্যু নিয়ে লিখছেন, গবেষণা করছেন।

তিনি বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আরও আইসোলেটেড হয়ে যাবে। ইরানের লক্ষ্যবস্তুতে হামলা হলেও মূলত ইরাক ও সিরিয়ায় দুটি স্বতন্ত্র আরব রাষ্ট্রে হামলা করা হয়েছে। এটি দুটি রাষ্ট্রের সার্বভৌমের ওপর আঘাত এবং দুটি রাষ্ট্রই যুক্তরাষ্ট্রের এমন হামলার কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে।’

‘ইরাক বারবার সেখান থেকে মার্কিন ঘাঁটি সরিয়ে নিতে বলছে। এরপরেও শুধু ইসরায়েলের সুরক্ষার জন্য আমেরিকা এখানে ঘাঁটি রেখেছে। ইসরায়েল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান তা ইরান, সৌদি আরব, কাতারের মতো দেশ জোরালোভাবে প্রত্যাখ্যান করছে।’

ইরান আসলে অনেক ধৈর্যশীল ও অত্যন্ত শক্তিশালী জাতি। ইরান যদি একবার আক্রান্ত হয় এবং সেখানে যে নেতৃত্ব রয়েছে এখন তারা কোনোভাবেই পিছপা হবে না। আমেরিকা এখন জানে ইরান পাল্টা হামলা করলে তাদের জন্য ভালো ফল বয়ে আনবে না এবং ইসরায়েল সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে যাবে।

এ বিশ্লেষক মনে করেন, ‘আমেরিকা আসলে কূলহারা হয়ে ইরানে আক্রমণ করতে চাইছে। যদিও আমেরিকার এ হামলা ইরানের সীমানা থেকে অনেক দূরে ছিল। ইরান বারবার বলছে তারা কোনো যুদ্ধে জড়াতে চায় না। গত রাতের এ হামলায় ইরানের রেভ্যুলেশন গার্ডের সদস্যরা আহত হয়েছে। প্রক্সি ওয়ার বললেও অন্য স্থলভূমিতে আমেরিকা এবং ইরানের মধ্যে এ হামলার ঘটনা ঘটছে। কিন্তু একটি রাষ্ট্রের নিরাপত্তার প্রশ্ন নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করলে বলতে হবে এ হামলায় সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইরাক ও সিরিয়া।’

ইরানের শক্তিমত্তার কথা উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘ইরানে যে ইসলামি মতাদর্শ প্রতিষ্ঠা দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা হচ্ছে তার ৪৫ বছর পূর্ণ হবে এ বছরই। ইরান শত প্রতিবন্ধকতার পরেও তাদের লক্ষ্য থেকে সরে আসেনি। ইরানের জনগণের বেশির ভাগই এখন এ শাসন ব্যবস্থার প্রতি আস্থা রাখছে।’

‘ইরান চায় ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা পাক ইসরায়েল রাষ্ট্রের পরিবর্তে এবং যে কোনো ত্যাগ স্বীকারের মধ্য দিয়ে আলআকসা মসজিদ রক্ষা করা তাদের দায়িত্ব মনে করে। ইরান এ-ও ভোলেনি যে কাশেম সোলেইমানির মতো একজন বিশ্বখ্যাত সমরবিদকে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে হত্যা করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের অনেক সমরবিদ বলছেন, তিন সেনা নিহত হওয়ার ঘটনার পর যে প্রতিক্রিয়া বা শক্তি দিয়ে হামলা করেছে, তা অনেক বেশি। যুক্তরাষ্ট্র এখানে এক ধরনের চমক সৃষ্টি করে ইসরায়েলের পক্ষে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে।

‘ইরান আসলে অনেক ধৈর্যশীল ও অত্যন্ত শক্তিশালী জাতি। ইরান যদি একবার আক্রান্ত হয় এবং সেখানে যে নেতৃত্ব রয়েছে এখন তারা কোনোভাবেই পিছপা হবে না। আমেরিকা এখন জানে ইরান পাল্টা হামলা করলে তাদের জন্য ভালো ফল বয়ে আনবে না এবং ইসরায়েল সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে যাবে। কারণ ইরানের হাতে এখন সেই সামরিক সক্ষমতা রয়েছে। ইরান বিশাল একটি জাতি রাষ্ট্র। আরবের অন্য রাষ্ট্রগুলো থেকে জ্ঞান-গরিমায় অনেক এগিয়ে। ইরানের শিক্ষাব্যবস্থাও উন্নত। যুক্তরাষ্ট্র যদি ইরানের সঙ্গে কোনোভাবে যুদ্ধে লিপ্ত হয়, তাহলে নিশ্চিতভাবে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিগুলো নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। আরব বিশ্বে যে জুলুম করে আসছে, তা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রগুলোই ফুঁসে উঠছে। আগামীতে এমনও হতে পারে সৌদি আরব, কাতার আমেরিকাকে বলবে যে তোমার ঘাঁটিগুলো প্রত্যাহার করো।’ বলছিলেন, শাহিদুজ্জামান।

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘ইরান ও সৌদি আরব ব্রিকসে যোগ দিচ্ছে। রাশিয়া, চীন থেকে ইরান সামরিক সহযোগিতা পাবে। চীনের নৌ-বাহিনীও পাঠাতে পারে লোহিত সাগর এলাকায়। এটি ঘটলে যুদ্ধের বিস্তৃতি ঘটবে। আমেরিকা সংযত আচরণ না করলে এবার কড়া মূল্য দিতে হবে।’

একমাত্র মিশর তার দুর্বল নেতৃত্বের কারণে আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখছে। এরপরেও মিশরের জনগণ আমেরিকার বিরুদ্ধে। আমেরিকা মধ্যপ্রাচ্যে এখন টোটালি একঘরে হয়ে যাচ্ছে। আমার মনে হয় না, আমেরিকা ইরানের মূল ভূখণ্ডে আক্রমণ করবে। ইরানে হামলার দুঃসাহস আমেরিকা দেখাতে পারবে না।

আমেরিকার এখন সিদ্ধান্ত গ্রহণের যে প্রক্রিয়া তা খুবই ভঙ্গুর এবং দুর্বল। দেশটির সেক্রেটারি অব ডিফেন্স যে রোল প্লে করছে তা খুবই দুর্বল। প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন এর আগে ক্ষমা চেয়েছেন প্রেসিডেন্টের কাছে তার ভুলের কারণে। লয়েড অস্টিন অত্যন্ত অসুস্থ এবং তাকে স্থায়ীভাবে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া দরকার। এ অবস্থায় এসে তিনি ঘোষণা করলেন আমেরিকা ইরানের লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করবে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার যে শারীরিক সুস্থতা, তা মোটেও ছিল না তার।’

বাইডেন প্রশাসনের সমালোচনা করে বলেন, ‘রিপাবলিকানরা কোনোভাবেই আমেরিকার এ অবস্থা দেখতে চাইছে না। বাইডেন এখন নিজেই জানে না তার ভবিষ্যৎ কী? নভেম্বরের মধ্যে তাকে হোয়াইট হাউজ ছেড়ে দেওয়া লাগতে পারে। তাকে প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করানো যাবে কি না এটিই এখন সন্দেহ। যুক্তরাষ্ট্র এখন বাইডেনের মতোই বিধ্বস্ত। রিপাবলিকানরা বাইডেনের এ যুদ্ধনীতি কোনোভাবেই সমর্থন করবে না।’

‘ইউক্রেনের ব্যাপারে বাইডেন প্রশাসনের চরম হঠকারী সিদ্ধান্ত ছিল। এখন ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ করার যে পাঁয়তারা করছে, তাতে আমেরিকার বিরুদ্ধে গণরোষ তৈরি হবে মধ্যপ্রাচ্যে। অনেকেই আমেরিকার সঙ্গে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক রাখাটা অবাস্তব মনে করবে। আমেরিকার কারণে ইরান-সৌদির দ্বন্দ্ব ছিল। এখন তারা মিলে গেছে। কোনো দ্বন্দ্ব নেই। ইরান সৌদির মধ্য দিয়ে তেল-গ্যাসের লাইন যাচ্ছে। তুরস্ক চুপচাপ রয়েছে কিছুটা। কিন্তু তারাও কিন্তু এখন অনেক শক্তিশালী। একমাত্র মিশর তার দুর্বল নেতৃত্বের কারণে আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখছে। এরপরেও মিশরের জনগণ আমেরিকার বিরুদ্ধে। আমেরিকা মধ্যপ্রাচ্যে এখন টোটালি একঘরে হয়ে যাচ্ছে। আমার মনে হয় না, আমেরিকা ইরানের মূল ভূখণ্ডে আক্রমণ করবে। ইরানে হামলার দুঃসাহস আমেরিকা দেখাতে পারবে না।’