উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ১৮টি ভবন: নোটিশ দিয়ে দায় সেরেছে সিসিক

উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ১৮টি ভবন: নোটিশ দিয়ে দায় সেরেছে সিসিক

সিলেট সাত থেকে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হতে পারে, এমন বার্তা বেশ আগে থেকেই দিয়ে আসছেন বিশেষজ্ঞরা। যতই দিন গড়াচ্ছে ভূমিকম্পের জন্য আরও ঝুঁকি বাড়ছে সিলেটে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত অন্তত সাতটি ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল সিলেট বিভাগে। রিখটার স্কেলে এসব ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ২ দশমিক ৮ থেকে ৪ দশমিক ৫ পর্যন্ত। পাশাপাশি গত দুই বছরে সিলেট ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় অন্তত দেড় শতাধিক ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে।

এতো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকার পরও সিলেট রক্ষায় নগর কর্তৃপক্ষের কোনো তৎপরতা নেই বললেই চলে। ২০১৯ সালে নগরীর ২৪টি ভবনকে ‘উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করে একটি তালিকা তৈরি করে সিসিক। প্রায় ছয় বছর পার হলেও তালিকায় থাকা ৪টি ভবনকে অপসারণ এবং আরও দুইটি ভবনকে বিশেষজ্ঞদের দ্বারা পুনঃসংস্কার করা ছাড়া বাকি ১৮টি ভবনের বিষয়ে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

নগর প্রশাসনের এমন অবহেলা ও গাফিলতির সুযোগে খোলস পাল্টে ফেলা হয়েছে সেই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর। সম্পূর্ণ নতুন রং দিয়ে ঢেকে ফেলা হয়েছে পুরোনো জরাজীর্ণ পরিবেশ। দূর থেকে দেখলে বোঝার কোনো উপায়ই নেই যে এটি ভূমিকম্পের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। উল্টো এসব ভবনে দিব্যি চলছে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বসবাস।

‘বর্তমানে সিলেটের অধিকাংশ স্থাপনাই উচ্চ মাত্রার ভূ-কম্পন সহ্য করতে সক্ষম নয়। সিলেট শহরে প্রায় ৪২ হাজার ভবন রয়েছে। এসবের বেশিরভাগই পুরোনো ও দুর্বল। যেগুলো মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পেই ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।’

সিসিক সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে সিলেট নগরে পুরোনো ২৭টি ওয়ার্ডে ১৫ হাজার বাণিজ্যিক এবং ২২ হাজার আবাসিক ভবন রয়েছে। ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে ২৪টি ভবনকে ‘উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ’ ঘোষণা করে তালিকা তৈরি করে সিসিক, তার মধ্যে এখনো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে ১৮টি ভবন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে কালেক্টরেট ভবন-৩, সমবায় ব্যাংক ভবন মার্কেট, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার সাবেক কার্যালয় ভবন, সুরমা মার্কেট, বন্দর বাজার এলাকার সিটি সুপার মার্কেট, মিতালী ম্যানশন, দরগা গেটের আজমীর হোটেল, মধুবন মার্কেট, কালাশীল এলাকার মান্নান ভিউ, শেখঘাটের শুভেচ্ছা-২২৬, চৌকিদেখী এলাকার ৫১/৩ সরকার ভবন, যতরপুরের নবপুষ্প-২৬/এ, জিন্দাবাজারের রাজা ম্যানশন, পুরানলেনের ৪/এ কিবরিয়া লজ, খারপাড়ার মিতালী-৭৪, মির্জাজাঙ্গালের মেঘনা-এ-৩৯/২, পাঠানটুলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর বাগবাড়ীর ওয়ারিছ মঞ্জিল একতা-৩৭৭/৭, হোসেইন মঞ্জিল একতা-৩৭৭/৮, শাহনাজ রিয়াজ ভিলা একতা-৩৭৭/৯, বনকলাপাড়ার নূরানী-১৪, ধোপাদিঘী দক্ষিণপাড়ার পৌর বিপণি ও পৌর শপিং সেন্টার এবং পূর্ব পীরমহল্লার লেচুবাগান এলাকার ৬২/বি-প্রভাতী, শ্রীধরা হাউস।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ও এনভায়রনমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মুশতাক আহমেদ বলেন, বর্তমানে সিলেটের অধিকাংশ স্থাপনাই উচ্চ মাত্রার ভূ-কম্পন সহ্য করতে সক্ষম নয়। সিলেট শহরে প্রায় ৪২ হাজার ভবন রয়েছে। এসবের বেশিরভাগই পুরোনো ও দুর্বল। যেগুলো মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পেই ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘সিলেট শহরে গড়ে ওঠা প্রায় ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ ভবন নির্মাণে যথাযথ বিধিমালা মানা হয়নি। ফলে ভূমিকম্প হলে এ অঞ্চলে বিপুল প্রাণহানি ও সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।’

‘বর্তমানে প্রকৌশলীর মাধ্যমে ভবন ডিজাইন এবং নির্মাণকালীন সময়ে ডিজাইন শীটে মালিক ও ডিজাইনারের অঙ্গীকারনামা নেওয়া হয়। যে কারণে নতুন ভবনগুলো সেভাবেই নির্মাণ করা হচ্ছে।’

এ বিষয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাই রাফিন সরকার বলেন, ‘তালিকার কিছু ভবনকে অপসারণ করা হয়েছে। আরও কিছু ভবনের প্রাথমিক মূল্যায়ন শেষে শাবিপ্রবির বিশেষজ্ঞা দ্বারা সংস্কার করা হয়েছে। অবশিষ্ট ভবনগুলো অপসারণে জরুরি নোটিশ জারি করা হয়েছে।’

ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর খোলস পাল্টে ফেলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এসব ভবনের প্রিলিমিনারি অ্যাসেসমেন্ট শাবিপ্রবির বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়েছে। তবে বিস্তারিত অ্যাসেসমেন্টের জন্য প্রয়োজনীয় স্ট্রাকচারাল ডিজাইন ও সয়েল টেস্ট রিপোর্ট সংশ্লিষ্ট ভবনের মালিকগণ জমা না দেওয়ায় পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি।’

২০১৯ সালের পর আর ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের কোনো তালিকা করা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে প্রকৌশলীর মাধ্যমে ভবন ডিজাইন এবং নির্মাণকালীন সময়ে ডিজাইন শিটে মালিক ও ডিজাইনারের অঙ্গীকারনামা নেওয়া হয়। যে কারণে নতুন ভবনগুলো সেভাবেই নির্মাণ করা হচ্ছে।’