সাদাপাথর লুট: বদলি ডিসি-ইউএনও-ওসি, তবুও অধরা প্রভাবশালীরা

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের পর্যটনকেন্দ্র সাদাপাথরে নজিরবিহীন লুটপাটের ঘটনায় দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়ার পর নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। উদ্ধার হওয়া পাথর পুনঃস্থাপনের কাজ চলছে; বদলি করা হয়েছে জেলা প্রশাসক, ইউএনও ও থানার ওসিকে। তবে লুটের সঙ্গে জড়িত প্রভাবশালীরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে।
গত ১৫ আগস্ট বিদ্যুৎ ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দায়ের করা মামলায় অজ্ঞাতনামা দুই হাজার জনকে আসামি করা হয়। মামলা হলেও এখন পর্যন্ত মাত্র ১৪ জন গ্রেফতার হয়েছে। লুটের সঙ্গে জড়িত প্রভাবশালী রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ী নেতাদের কাউকেই গ্রেফতার করা হয়নি বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন।
অন্যদিকে, দুদকের তদন্তে ৪২ জন রাজনীতিকসহ ৫৩ জনের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়, জেলা প্রশাসনের প্রতিবেদনে ১৩৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধেও কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের নামও জড়ালেও বদলির বাইরে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হয়নি।
উদ্ধার ও প্রতিস্থাপন কাজ
প্রশাসনের কঠোর তৎপরতায় এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১৬ লাখ ঘনফুট পাথর প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে প্রায় সাড়ে ২৮ লাখ ঘনফুট পাথর। প্রতিদিন ৫০০ শ্রমিক, ৪০০ নৌকা ও ৩০০ ট্রাক দিয়ে এই কাজ চলছে। তবে জেলা প্রশাসক স্বীকার করেছেন, লুট হওয়া পাথরের অন্তত ৩০ শতাংশ আর উদ্ধার সম্ভব হয়নি। স্থানীয়রা বলছেন, গত এক বছরে ২-৩ কোটি ঘনফুট পাথর লুট হয়েছে।
তদন্ত ও বিতর্ক
সাদাপাথর লুট নিয়ে তিনটি পৃথক তদন্ত কমিটি কাজ করছে। জেলা প্রশাসনের কমিটি ১৩৭ জনকে অভিযুক্ত করে প্রতিবেদন দিলেও তা প্রকাশ করা হয়নি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গঠিত কমিটির প্রতিবেদনও এখনো জমা পড়েনি। অপরদিকে, সিআইডি বলছে তারা ৫০ জনের বিরুদ্ধে তথ্য পেয়েছে।
দুদকের প্রতিবেদনে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি ও আওয়ামী লীগের নেতাদের নাম আসায় রাজনৈতিক অঙ্গনেও তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। অভিযুক্তরা অভিযোগ অস্বীকার করে প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছেন।
প্রশাসনের বদলি
লুট ঠেকাতে ব্যর্থতার কারণে সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. শের মাহবুব মুরাদ, কোম্পানীগঞ্জের ইউএনও আজিজুন্নাহার এবং থানার ওসি উজায়ের আল মাহমুদকে বদলি করা হয়েছে। এর আগে পুলিশের ২২ সদস্যকেও বদলি করা হয়।
সরকারের অবস্থান
সোমবার সিলেট সফরে এসে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “দুদকের প্রতিবেদন সরকার গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখছে। প্রমাণিত হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা হবে। তবে মিথ্যা প্রমাণিত হলে দুদক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”