টানা ছুটিতে সিলেটে পর্যটকের ঢল: প্রাণ ফিরেছে পর্যটন খাতে

টানা ছুটিতে সিলেটে পর্যটকের ঢল: প্রাণ ফিরেছে পর্যটন খাতে

প্রকৃতির মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্যে ঘেরা সিলেট জেলার পর্যটনস্পটগুলোতে টানা ছুটিতে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে।

শারদীয় দুর্গাপূজা, সাপ্তাহিক ছুটি ও সরকারি ছুটির সংমিশ্রণে সৃষ্ট চার দিনের দীর্ঘ অবকাশে হাজারো পর্যটক ছুটে যান সিলেটের জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান—জাফলং, বিছনাকান্দি, লালাখাল, সাদা পাথর, রাতারগুল ও খাসিয়াপল্লিসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে।

গত বুধবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত সিলেটের গোয়াইনঘাট ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে পর্যটকের ঢল নামে। পাহাড়, ঝরনা, নদী আর সবুজ প্রকৃতির টানে দলবেঁধে আসা মানুষরা উপভোগ করেন নৌকা ভ্রমণ, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, খাসিয়া সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যবাহী খাবার।

জাফলংয়ে ছিল সবচেয়ে বেশি ভিড়। সারাদেশ থেকে পরিবার-পরিজন ও বন্ধু-বান্ধব নিয়ে আসা পর্যটকরা মুগ্ধ হন ঝুলন্ত ব্রিজ, নদী আর পাহাড়ের মনোরম দৃশ্য দেখে। কেউ ছবি তোলায় ব্যস্ত, কেউবা নদীর পাড়ে সময় কাটাতে কাটান দিনভর।

হোটেল ও মোটেলগুলো আগেই বুকড থাকায় অনেক পর্যটককে থাকতে হয় বিকল্প ব্যবস্থায়। হোটেল, রেস্টুরেন্ট, দোকান ও স্থানীয় ফটোগ্রাফারদের ছিল ব্যস্ত সময়। 

ব্যবসায়ীরা জানান, ছুটির এই ক’দিনে বিক্রি দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে।

চট্টগ্রাম থেকে আসা পর্যটক সোহেল আহমদ বলেন, টানা ছুটি পেয়ে পরিবারকে নিয়ে ঘুরতে এলাম। জাফলংয়ের সৌন্দর্য মন ছুঁয়ে গেছে।

পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সক্রিয় ছিল ট্যুরিস্ট পুলিশ। জাফলং ট্যুরিস্ট পুলিশের ইনচার্জ তপন তালুকদার জানান, সব স্পটেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল, কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

এদিকে, সাদাপাথর এলাকায় পূর্বের কিছু অনিয়মের অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে, সিলেটের ছয়টি প্রধান পর্যটন স্পটকে ঘিরে সরকারের উদ্যোগে তৈরি হচ্ছে একটি সমন্বিত ও পরিবেশবান্ধব ‘পর্যটন মাস্টারপ্ল্যান’।

জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম জানান, এই মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়িত হলে সিলেটের পর্যটন খাত নতুন দিগন্তে পৌঁছাবে।

পরিকল্পনার আওতায় প্রাধান্য পাচ্ছে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা, স্থানীয়দের কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং টেকসই পর্যটন অবকাঠামো গড়ে তোলা। এরই অংশ হিসেবে সাদা পাথর এলাকা পরিদর্শন করেছে ১৩ সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি, যা ধাপে ধাপে অন্যান্য স্পটও পরিদর্শন করবে।

স্থপতি ইনস্টিটিউটের সভাপতি অধ্যাপক ড. আবু সাঈদ এম আহমেদ বলেন, আমরা পর্যটনকে আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব করতে চাই। 

সবুজ সচেতন স্থাপত্যের প্রবক্তা অধ্যাপক মো. রফিক আজম যোগ করেন, প্রাকৃতিক পরিবেশ অক্ষুণ্ন রেখেই পর্যটন অবকাঠামো গড়াই আমাদের লক্ষ্য।

মাস্টারপ্ল্যান সমন্বয় কমিটির সভাপতি ড. বজলুর রশিদ জানান, প্রকল্প বাস্তবায়নে নেদারল্যান্ডস সরকারের সম্ভাব্য অর্থায়নের বিষয়েও আলোচনা চলছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়িত হলে সিলেট হবে দেশের অন্যতম পরিবেশবান্ধব ও কর্মসংস্থানসমৃদ্ধ পর্যটন নগরী।