সিলেট বিআরটিএ’র শতকোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পায়তারা!

সিলেট বিআরটিএ’র শতকোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পায়তারা!

অনেকটা গোপনে সিএনজি অটোরিকশার রেজিস্ট্রেশন দিয়ে শতকোটি হাতিয়ে নেওয়ার পায়তারা চলছে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি সিলেট বিআরটিএ কার্যালয়ে। সিএনজি অটোরিকশার রেজিস্ট্রেশন (নিবন্ধন) সহ বিভিন্ন ইস্যুতে আজ বুধবার (৬ মার্চ) মেট্টো আরটিসির বৈঠক বসছে পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ে। 

বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি-বিআরটিএ’র সিলেট কার্যালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক পদস্থ কর্মকর্তা ও আরটিসি’র কয়েক সদস্য এমনটি নিশ্চিত করেছেন।

তারা বলেন, মেট্টো আরটিসির সভাপতি সিলেট মেট্টোপলিটন পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ে আজ বুধবার সকাল ১০টায় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। যে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল আজ সকাল ১১টায়। পরবর্তীতে এক ঘন্টা পিছিয়ে সকাল ১০টায় বৈঠকের সময় নির্ধারণ করে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি সংশ্লিষ্ট ১১ জনকে চিঠি দেন বিআরটিএ সিলেটের বিভাগীয় উপ পরিচালক (ইঞ্জি:) ও মেট্টো আরটিসির সদস্য সচিব মো. ডালিম উদ্দীন। 

এদিকে, সিএনজি অটোরিকশার রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হচ্ছে এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে বিআরটিএ কার্যালয়ে অনিবন্ধিত বা রেজিস্ট্রেশন বিহীন সিএনজি অটোরিকশার মালিকরা ধর্ণা দিচ্ছেন। অটোরিকশার রেজিস্ট্রেশন পেতে তারা ধর্ণা দিচ্ছেন কর্মকর্তাদের কাছে।

বিআরটিএ সূত্র জানায়, ইতিমধ্যে মালিকদের কাছ থেকে ৫ হাজার সিএনজি অটোরিকশার ফাইল গচ্ছিত করেছেন বিআরটিএ সিলেটের সহকারি পরিচালক, মোটরযান পরিদর্শকসহ রেজিস্ট্রেশন শাখার কর্মকর্তারা। 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সিলেটে অনিবন্ধিত প্রায় ৩৫/৪০ সহস্রাধিকসহ ৬০/৬৫ হাজারের অধিক সিএনজি অটোরিকশা রয়েছে সিলেট জেলা ও মেট্টো এলাকায়। এরমধ্যে বিভিন্ন সময়ে প্রায় ৫ হাজার গাড়ির কাগজ রেজিস্ট্রেশনের জন্য হাতে নিয়েছেন বিআরটিএ সিলেটের কর্মকর্তারা। আর মেইন স্টিয়ারিংয়ে রয়েছেন বিআরটিএ সিলেটের সহকারি পরিচালক (ইঞ্জিঃ) রিয়াজুল ইসলাম, মোটরযান যান পরিদর্শক আব্দুল বারী ও মো. দিলোয়ার হোসেন।যেগুলো অনেকটা সংগোপনে ডাটা এন্ট্রি করে রাখা হয়েছে বিআরটিএ সিলেটের রেজিস্ট্রেশন শাখার অফিস সহায়ক ইসমাইল হোসেনের মাধ্যমে।  

বিআরটিএ অফিস সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য মতে, গত অক্টোবরে ইসমাইল হোসেন স্বপরিবারে যুক্তরাজ্য গমন করেন। তাতে রেজিস্ট্রেশন নিয়ে অনেকটা বিপাকে পড়েন কর্মকর্তারা। কেননা, রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ার নাড়ি নক্ষত্র জানতেন ইসমাইল হোসেন। তিনি ৩ মাস যুক্তরাজ্যে অবস্থান করার পর ফিরে এসে অফিসে স্বপদে যোগদান করেন। এই সময় অফিসে অনুপস্থিতির জন্য ইসমাইলের ছুটি নিয়েও সন্ধিহান সহকর্মীরাও।  তার কারণে রেজিস্ট্রেশন পিছিয়ে নেওয়া হয়েছিল। 

সম্প্রতি পরিবার যুক্তরাজ্য রেখে বিআরটিএ’র সহকারি পরিচালক রিয়াজুল ইসলামের আস্থাভাজন রেজিস্ট্রেশন শাখার অফিস সহকারি কাম কম্পিউটার অপারেটর ইসমাইল হোসেন আবারো স্বপদে ফিরলে তড়িগড়ি করে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া শুরু করা হয় বলেও গুঞ্জন রয়েছে।এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার ফের রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ার প্রস্তাব উঠতে পারে মেট্টো আরটিসির সভায়।  

এ বিষয়ে জানতে মেট্টো আরটিসির সভাপতি পুলিশ কমিশনার মো. জাকির হোসেন খান, মেট্টোপলিটন পুলিশের উপ কমিশনার (ট্রাফিক),বিআরটিএ সিলেটের বিভাগীয় উপ পরিচালক (ইঞ্জি:) ও মেট্টো আরটিসির সদস্য সচিব  মো. ডালিম উদ্দীন, বিআরটিএ’র সহকারি পরিচালক রিয়াজুল ইসলামকে ফোন দিলেও তারা রিসিভ করেননি। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিএনজি অটোরিকশার রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া চলে আসছে দীর্ঘদিন থেকে সর্বশেষ ২০১৪ সালে মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ সহকারি পরিচালক থাকাকালে ২ হাজার ২শ’ গাড়ির রেজিস্ট্রেশন দিয়ে প্রতিটি গাড়ি থেকে লাখ টাকা করে হাতিয়ে নিয়ে সিলেট ছাড়েন বলে অভিযোগ রয়েছে। সে সময় রেজিস্ট্রেশন পাওয়া সিলেট-থ-১২ সিরিয়ালের শেষ ধাপ ও সিলেট থ- ১৩ সিরিয়ালের গাড়ির মালিকরা এক লাখ ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে রেজিস্ট্রেশন করেয়ে নেন বলেও জানা গেছে। সেই মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ চারদিন আগে সিলেট বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত পরিচালক হিসেবে যোগদান করেছেন বলেও নিশ্চিত হওয়া গেছে। বিআরটিএ কার্যালয়ের অভ্যন্তরে বলাবলি হচ্ছে, সিএনজি অটোরিকশার রেজিষ্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতেই মীরপুর ছেড়ে তার সিলেট আসা। 

দীর্ঘ ১০ বছর পর বিআরটিএ সহকারি পরিচালক পদে ৫ কর্মকর্তার বদলীর পর মোটরযান পরিদর্শক থাকা রিয়াজুল ইসলাম চলতি দায়িত্ব পান। ২০২২ সালের শেষের দিকে তিনি পরিচালকের পূর্ণ দায়িত্বে আসেন। তিনি দায়িত্বে আসার পর থেকে সিএনজি অটোরিকশার রেজিস্ট্রেশন দিতে তৎপরতা শুরু করেন। এ ইস্যুতে গত বছরের ৬ এপ্রিল আরটিসির সভায় সিএনজি অটোরিকশার নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বিষয়টি সংবাদ মাধ্যমে আসলে সেটি বাতিল করা হয়। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন পরিবহণ নেতারা জানিয়েছেন,, নতুন সিএনজি অটোরিকশার নিবন্ধন (রেজিস্ট্রেশন) বাবদ তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে গাড়ি প্রতি ২ লাখ টাকা করে নেওয়া হয়েছে। 

সূত্রমতে, ৫ হাজার সিএনজি অটোরিকশার নিবন্ধন দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই হিসেব মতে, গাড়িপ্রতি ২ লাখ করে এ খাতে শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হবে। 

সূত্র আরো জানায়, সিলেট কালেক্টরেট কম্পাউন্ডে দালাল ও সংশ্লিষ্ট অফিসের কর্মচারীদের মারফতে অন্তত ৫ সহস্রাধিক সিএনজি অটোরিকশার রেজিস্ট্রেশন দিতে কাগজ জমা নিয়েছেন কর্মকর্তারা। 

সূত্র জানায়, ২০১৪ সালে সিএনজি অটোরিকশার সিলেট-থ-১২ ও ১৩ সিরিয়ালের অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর সিলেট জেলা ও মহানগর এলাকায় সিএনজি অটোরিকশা বেড়ে যাওয়ায় যানজট ও প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা বেড়েই চলে। এ অবস্থায় গত বছর পুনরায় সিএনজি অটোরিকশার নিবন্ধন দিতে উদ্যোগী হন বিআরটিএর কর্মকর্তারা। তবে সিলেট পরিবহন মালিক সমিতির প্রতিবাদের মুখে সিএনজি অটোরিকশার নিবন্ধন স্থগিত রাখা হয়েছিল। সুত্র: শ্যামল সিলেট