বন্যায় সিলেটে শাকসবজির আকাশছোঁয়া দাম, বিপাকে ক্রেতারা
দফায় দফায় বন্যার কারণে সিলেটে বিভিন্ন শাকসবজির দাম কয়েক গুণ বেড়ে গেছে।
শহরে কাঁচামরিচের কেজি ক’দিন আগেও পাইকারি বাজারে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা ও টমেটো ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। কিন্তু গত সপ্তাহে পাইকারি বাজারে কাঁচামরিচ ২৫০-৩০০ টাকা ও টমেটো ৮০-৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
আর বৃহস্পতিবার একই কাঁচামরিচ ৪০০ টাকা ও টমেটো ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। অন্যান্য শাকসবজির দামও বাড়তি। পাইকারি বাজারে দামের সরাসরি প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। মা সবজি ভান্ডারের মালিক ইব্রাহিম মিয়া জানান, বন্যার কারণে প্রতিদিনই দাম কমবেশি হচ্ছে।
ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা বলছেন, বন্যার কারণে স্থানীয় কৃষকরা কোনো সবজিই উৎপাদন করতে পারছেন না। অন্যান্য জেলা থেকেও চাহিদামতো সবজি আসছে না। তাই চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অনেক কম হওয়ায় সিলেটের বাজারে সব শাকসবজির দাম বেড়েছে।
আড়তদার আফতাব মিয়া চৌধুরী জানান, বন্যায় সিলেটের সব উপজেলার অধিকাংশ ক্ষেতখামার পানির নিচে। রাজশাহী, মুন্সীগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা থেকেও চাহিদামতো সবজি মিলছে না।
সিলেটের প্রধান পাইকারি সবজির আড়ত সোবহানীঘাটে দেখা গেছে, আগের মতো ব্যস্ততা নেই। বন্যার আগে যেখানে প্রতিদিন সবজি নিয়ে কয়েকশ ট্রাক প্রবেশ করত, সেখানে এখন সবজিভর্তি ট্রাকের আনাগোনা খুবই কম। সিলেটের বিভিন্ন গ্রামীণ বাজার থেকে আসা খুচরা ক্রেতাও নেই বললেই চলে।
এমনকি যারা ভ্যানে সবজি বিক্রি করেন, তাদের সংখ্যাও কমে গেছে। দামের কারণে আগে যে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ৫ হাজার টাকার সবজি কিনতেন, এখন তিনি কিনছেন ২ হাজার টাকার।
মিরাবাজার এলাকার সবজি বিক্রেতা নুরুল হক জানান, আগে ভোরে ভ্যান নিয়ে আড়তে আসতেন। একটা প্রতিযোগিতা ছিল– কার আগে কে সবজি নিয়ে পাড়া-মহল্লায় যাবে। বন্যার কারণে এখন সেই তাড়া নেই। সবজিও বিক্রি হয় কম। দামের কারণে কেউ কিনতে চান না।
সবজি আড়তে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয় ৫৫-৬০ টাকায়। খুচরা বাজারে এ আলু বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি। এ ছাড়া গাজর ৬০-৭০ টাকা, কচুরমুখি ৭৫-৮০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, শসা ৫০-৬০ টাকা, পটোল ৩০ টাকা, করলা ৭০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয়।
খুচরা বাজারে দেখা গেছে, পাইকারি বাজারের তুলনায় সব সবজিতেই কেজিপ্রতি ৩০ থেকে ৫০ টাকা বেশি দাম।
সোবহানীঘাটের ভাই ভাই বাণিজ্যালয়ের ব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বাইরে থেকে সবজি আমদানি কম হচ্ছে। সে জন্য আগের তুলনায় বেশি দাম পড়ছে সবজির।
এমনিতেই মাছ, মাংস, ডিমের দাম বাড়তি। তার ওপর সবজির দামের এই ঊর্ধ্বগতিতে হিমশিম খাচ্ছেন ক্রেতা।
নগরীর মীরের ময়দানের বাসিন্দা আবুল বশর বাচ্চু বলেন, ১০০ টাকার নিচে কোনো সবজি পাওয়া যায় না। সবাই বন্যার অজুহাত দেয়। পাইকারি বাজারের তুলনায় ভ্যানে করে যারা সবজি বিক্রি করেন, তারা দ্বিগুণ দাম চান।
সিলেট কৃষি অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল খয়ের মোল্লা বলেন, সদরের টুকেরবাজার এলাকা স্থানীয় সবজি উৎপাদনের অন্যতম এলাকা। এ ছাড়া জৈন্তাপুর, বালাগঞ্জ, জকিগঞ্জসহ কয়েকটি উপজেলায় প্রচুর সবজি উৎপাদন হয়। এ সময় মুলা, পালং, নটে, ঢ্যাঁড়স, পুঁইশাক চাষ হয়ে থাকে। কিন্তু বন্যায় এবার তা করতে পারেননি কৃষক। ফলে বাজারে সবজির সংকট রয়েছে।