৭ বছর ধরে বন্ধ সিলেটের পাথর কোয়ারি, কর্মহীন লাখো শ্রমিক

৭ বছর ধরে বন্ধ সিলেটের পাথর কোয়ারি, কর্মহীন লাখো শ্রমিক

দীর্ঘ ৭ বছর ধরে বন্ধ সিলেটের সবক’টি পাথর কোয়ারি। ভোলাগঞ্জ, জাফলং, বিছনাকান্দি, শ্রীপুর, লোভাছড়াসহ সবক’টি পাথর কোয়ারি বন্ধ রয়েছে। এতে স্থানীয় অর্থনৈতিক অবস্থার চরম সংকট দেখা দিয়েছে। এ খাতে বিনিযোগকারী হাজার হাজার ব্যবসায়ী ও ৩ উপজেলার লাখো শ্রমিক কর্মহীন জীবনযাপন করছেন। পাথর ভাঙার কাজে ব্যবহৃত স্টোনক্রাশার মিল সমূহের আসবাবপত্র, যন্ত্রপাতি, মালামাল বিনষ্ট হচ্ছে। ফলে পানির দরে বিক্রি করতে হচ্ছে এসব যন্ত্রপাতি।

এদিকে, পাথর কোয়ারি উৎসমুখের পাথর অপসারণ না করাতে প্রতিবছর জমছে পাথরের বিশাল স্তূপ। দিন দিন বেড়ে চলেছে উজান থেকে নেমে আসা এসব পাথরের স্তূপ। এতে করে প্রতি বছরই বর্ষা মৌসুমে নদ নদীর সাধারণ পানি প্রবাহে দেখা দিচ্ছে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা। জাফলং জিরো পয়েন্টে পিয়াইন নদীর উৎসমুখে বিগত প্রলয়ংকারী বন্যায় উজান থেকে নেমে আসা পাথরের স্তূপে ৩০-৪০ ফুট উচ্চতায় ভরাট হয়েছে নদীর উৎসমুখ। এতে নদ-নদীর নাব্য হ্রাস পেয়েছে। 

সবক’টি নদীতেই নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে মারাত্মকভাবে। নদী সমূহের উৎসমুখে পাথরজট তৈরি হওয়াতে বর্ষা মৌসুমে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যার পানিতে তীব্র স্রোত দেখা দেয় এবং পানির তোড়ে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়। ফসলি জমি, পান সুপারির বাগান, বাড়িঘর, স্কুল, মাদ্রাসাসহ নানা স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। হুমকির মুখে রয়েছে আরও অগণিত মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল, হাট-বাজার, চা বাগানসহ বিস্তৃত পতিত জমি। সিলেটের গোয়াইনঘাটের পাথর কোয়ারিগুলোও একই সময় থেকে বন্ধ রয়েছে। 

এমতাবস্থায় মাঝে মধ্যে লুকিয়ে কিংবা প্রশাসন, পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে কোয়ারিতে সনাতন পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলনে গেলেও প্রশাসনের মোবাইলকোর্টের অভিযান আর পুলিশের ধর পাকড়ের শিকার হচ্ছে শ্রমিক ব্যবসায়ীরা। এ বিষয়ে জাফলং বল্লাঘাট পাথর ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি আনোয়ার হোসেন খান আনু বলেন, দীর্ঘ ৭ বছর থেকে জাফলংসহ সিলেটের সকল পাথর কোয়ারী থেকে সনাতন পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। এ কারণে পাথর ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা মানবেতর জীবনযাপন করে আসছেন। দীর্ঘদিন ধরে পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় সবক’টি কোয়ারিতে বহুগুণ বেড়েছে পাথরের পরিমাণ। তাছাড়া প্রতিবছর পাহাড়ি ঢলেও উজান থেকে নেমে আসে পাথর। ফলে উৎসমুখে পাথরের স্তূপে নেমে আসা পানি প্রবাহের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। এসব পাথর দ্রুত অপসারণ না করলে এলাকায় নদী ভাঙন প্রকট আকার ধারণ করবে। 

জাফলং স্টোনক্রাশার মিল মালিক সমিতির সভাপতি বাবলু বখ্‌ত বলেন, পাথর কোয়ারি সমূহের কার্যক্রম বন্ধ থাকাতে স্টোন ক্রাশারমিল সমূহ দীর্ঘদিন থেকে বন্ধ রয়েছে। শত শত স্টোনক্রাশার মিল বন্ধ থাকায় এসব প্রতিষ্ঠানে ঝং ধরেছে। কোয়ারি বন্ধজনিত কারণে স্টোনক্রাশার মিল প্ল্যান্ট বন্ধ। লাখ লাখ টাকা বিনিযোগ করে গড়ে তোলা একেকটি প্রতিষ্ঠান পানির দরে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। একদিকে পরিবার পরিজনের দৈনন্দিন খরচ, অপরদিকে ব্যাংকের দেনা টাকার কিস্তি নিয়ে মারাত্মক কষ্টে দিনযাপন করছেন। এমন অর্থনৈতিক সংকটের সময় আমাদের এসব ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়ানোর কেউ নেই। কোম্পানিগঞ্জ প্রেস ক্লাব সভাপতি ও পাথর ব্যবসায়ী শাব্বির আহমদ বলেন, আমরা সরকারের কাছে বার বার সনাতন পদ্ধতিতে পাথর কোয়ারি খুলে দিতে দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু সরকারের তরফে বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগ নেই। সিলেট চেম্বার অ্যান্ড কমার্স ইন্ড্রাস্টির সাবেক সভাপতি তাহমিন আহমদ বলেন, সিলেটের পাথর কোয়ারি বন্ধ থাকার কারণে বিনিয়োগকারী ব্যবসায়ীরা বছরের পর বছর কোটি কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন। কোয়ারির বিষয়ে আমরা একরকম ষড়যন্ত্রের শিকার। আশা করছি সরকার আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে সনাতন পদ্ধতিতে আবারো সবক’টি পাথর কোয়ারী খুলে দিতে দ্রুত পদক্ষেপ নেবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, সরকারি সিদ্ধান্তে জাফলং বিছনাকান্দিসহ বিভিন্ন পাথর কোয়ারি বন্ধ আছে। বর্তমানে কোয়ারি পাথর, বালি উত্তোলন অবৈধ। তাই অবৈধভাবে উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।