মধ্যরাতে সিকৃবিতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রদলের সংঘর্ষ

মধ্যরাতে সিকৃবিতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রদলের সংঘর্ষ

ব্যানার ছেঁড়াকে কেন্দ্র করে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (সিকৃবি) ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে ক্যাম্পাসের ২ নম্বর গেটে এ সংঘর্ষ হয়। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী চলা এই সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোজাম্মেল হক সংঘর্ষের ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

এ ঘটনার পর রাতেই সিকৃবি ছাত্রদলের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। সংগঠনের দপ্তর সম্পাদক (সহসভাপতি পদমর্যাদা) মো. জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় বিলুপ্ত ঘোষণা করা হলো। শিগগিরই ওই ইউনিটির নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে। ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির আজ এ সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেন।’

এদিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে ঘটনার তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন উপাচার্য।

সংঘর্ষের সূত্রপাত নিয়ে শিক্ষার্থীরা জানান, ক্যাম্পাস রাজনীতিমুক্ত ঘোষণার পরও বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ও তৃতীয় ফটকে ব্যানার টানান ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। ব্যানারটি কেউ একজন ছিঁড়ে ফেললে সিকৃবি ছাত্রদলের বিগত কমিটির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন সনি ও সহসভাপতি মো. সাহেদুল ইসলাম রোমেন বহিরাগতদের নিয়ে শিক্ষার্থীদের মারতে গেলে সংঘর্ষ হয়। প্রক্টরের উপস্থিতিতে বহিরাগতরা রামদা নিয়ে ক্যাম্পাসে ঢুকে ছাত্রদের ওপর হামলা করে বলে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ গেলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

পরে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন অভিযোগ করে প্রক্টরকে অবরুদ্ধ করে পদত্যাগের দাবি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বরে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় লিপ্ত হন তাঁরা। পরে উপাচার্য এসে তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা হলে ফিরে যান।

ইশতিয়াক আজমি নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা লাঠি নিয়ে প্রতিরোধ করতে গেলে প্রক্টর স্যার আমাদের বাধা দেন। তখন আমরা স্যারকে বলি, বহিরাগতরা যদি রামদা নিয়ে আসে তাহলে তো আমাদের প্রটেক্ট করা লাগবে। তখন আমরা লাঠি ফেলে দিয়ে পুলিশ না আসার ব্যাপারে প্রক্টর স্যারকে জিজ্ঞেস করলে স্যার বলেন, “তোমরাই তো আগে ইট মেরেছ।” আমরা আগে ইট মারার ব্যাপারটি অস্বীকার করলে তিনি বলেন, “তোমরা তো মুনাফিক!”’

তবে সংঘর্ষ শুরুর পরপরই পুলিশকে ফোন দিয়ে আসতে বলেছিলেন বলে দাবি করেন প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোজাম্মেল হক। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘রাত ১১টার দিকে কেউ একজন আমাকে কল দিয়ে জানায় যে, ছাত্রদল ব্যানার লাগিয়েছে সে সেটা খুলে ফেলবে। তখন আমি বলি, তোমরা এটা খুলতে গেলে গ্যাঞ্জাম লাগতে পারে, আমরাই এটা খুলে ফেলব। তবে একটু পরই কেউ একজন ব্যানারটি খুলে ফেললে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে উভয়পক্ষ ইট পাটকেল ছোড়ে। এ সময় আমার গায়েও ঢিল পড়েছে। আমি পুলিশকে কল দিলে প্রথমে ফোর্স পাঠায়নি। পরে আমি আবার কল দিলে দেরিতে পুলিশ আসে।’

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সংঘর্ষের অনেক পরে ক্যাম্পাসে পুলিশ আসে। এ ছাড়া সেনাবাহিনীকেও অনেক দেরিতে জানানো হয়েছে।

সিকৃবির বর্তমান শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রদলের কর্মী হিসেবে পরিচিত বাফিল আহমেদ বলেন, ‘আমরা যাঁরা ছাত্রদল করি, তাঁরা চাইছিলাম নতুন ধরনের রাজনীতি। কিন্তু এখানে ছাত্রদলের আগের কমিটির তারা আসে এবং আমরা ছাত্রদল করি জেনে আমাদের সঙ্গে ছবি তুলে প্রচার করে। এটা নিয়ে শুরু থেকেই তাদের সঙ্গে আমাদের বিরোধ ছিল। তারা আমাদের না জানিয়ে ব্যানার টানায়। আমরা ব্যানার খুলে ফেলতে প্রক্টর স্যারকে জানাই এবং সেটা খুলে ফেলার কথা ছিল। আজ তারা আমাকে কল দিয়ে জানায় যে, কেউ একজন ব্যানার ছিঁড়েছে, তাকে মারতে আসবে। আমি তাদের বারণ করি এবং বলি প্রয়োজনে স্যারদের নিয়ে বিচার হবে, কিন্তু আমরা কোনো অরাজকতা চাই না। কিন্তু তারা ক্যাম্পাসে লাঠি নিয়ে এলে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়। এরা মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি নিয়ে এই অরাজকতা করেছে, এরা সংগঠনের কেউ না। আমি নিজে পুলিশকে জানিয়েছি এবং প্রয়োজনে আইনের আশ্রয় নেব। সাধারণ ছাত্রদের জন্য যা করার প্রয়োজন করব।’

আজ শুক্রবার ভোর ৪টা পর্যন্ত চেষ্টা করে পুলিশ-সেনাবাহিনী ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পরিস্থিতি শান্ত করে। ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় সেনাবাহিনী ও পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিকৃবির প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোজাম্মেল হক বলেন, কৃষি গুচ্ছ ২০২৩–২৪ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসের প্রধান দুই ফটকে দলীয় ব্যানার টানায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল। পরবর্তী সময়ে কে বা কারা ব্যানার ছিঁড়ে ফেললে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে দুই পক্ষে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। পরে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী চলে সংঘর্ষ। তিন কার্যদিবসের মধ্যে এ ঘটনার সঠিক তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন উপাচার্য।’

ড. মোজাম্মেল হক আরও বলেন, আজ সকালে কৃষি গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ২০২৩–২৪ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (সিকৃবি) ক্যাম্পাসে যথারীতি অনুষ্ঠিত হবে। এ পরীক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯টি কেন্দ্রে প্রায় ৪ হাজার ২১০ জন পরীক্ষার্থীর আসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।