কুশিয়ারায় ড্রেজার দিয়ে বালি উত্তোলন, ঝুঁকিতে রাণীগঞ্জ সেতু
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার কুশিয়ারা নদীতে রাণীগঞ্জ সেতু‘র পাশে ড্রেজার দিয়ে বালু ও বালু মিশ্রিত মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে। নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো নদীর উপর নির্মিত সেতুর ১ কিলোমিটারের মধ্যে খনন কাজ না করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, সরকারের মেগা প্রকল্প রাণীগঞ্জ সেতু‘র আশেপাশের কয়েকশ’ ফুটের মধ্যেই ড্রেজারের সাহায্যে অবাণিজ্যিকভাবে বালু ও বালু মিশ্রিত মাটি উত্তোলন করছে মেসার্স একতা এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। নদী খনন নীতিমালা লঙ্ঘন করে বিগত কয়েক মাস ধরে দেদারসে বালু মিশ্রিত মাটি উত্তোলন করায় নদী ভাঙ্গণের কবলে ১৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই নান্দনিক সেতু এলাকা ও আশেপাশের গ্রাম। নদী তীরবর্তী জনবসতি এলাকার কাছে পরিবেশ বিধ্বংসী ড্রেজার দিয়ে মাটি ও বালি উত্তোলন করায় হুমকির মুখে পড়েছে ফসলি জমিসহ অসংখ্য বসতভিটা।
জানা গেছে, উপজেলার নারিকেল তলা গ্রামের পাশে কৃষি ইনস্টিটিউটের মাটি ভরাটের জন্য কুশিয়ারা নদীর জেগে উঠা চর থেকে বালু উত্তোলনের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ের শাখা থেকে একটি স্মারকে পঞ্চান্ন লাখ ঘনফুট বালু ও বালু মিশ্রিত মাটি উত্তোলনের অনুমোদন নেয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স একতা এন্টারপ্রাইজের মালিক শফিক মো. জাবেদ। অভিযোগ রয়েছে, ওই কাগজের উপর ভিত্তি করে কৃষি ইনস্টিটিউটের মাটি দেয়ার নামে নদীতে গণহারে চলছে বালু উত্তোলনের মহোৎসব। এতে নদীর উভয় তীরের মানুষের ফসলি জমি সহ ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। হুমকির মুখে পড়েছে দুই ইউনিয়নের ১০টি গ্রামের মানুষ।
সরেজমিনে দেখা যায়, কৃষি ইনস্টিটিউটের মাটি ভরাটের অনুমোদন পত্রের উপর ভর করে নদীতে একাধিক ড্রেজার মেশিন চালিয়ে বালু উত্তোলন করে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হচ্ছে। পাশাপাশি কিছু লোক দিয়ে জেগে উঠা চর থেকে মোটা বালু নৌকা ভর্তি করে বিক্রি করছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। বালি বিক্রির সত্যতা পাওয়া যায় রাণীগঞ্জের ইসলামপুর, ঘন্ডবপুর গ্রামে। ব্যক্তিমালিকানাধীন একাধিক নিচু স্থান ভরাট করা হয় বলে জানান স্থানীয়রা।
এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, নদী থেকে ড্রেজারের সাহায্যে বালি তুলে নৌকা ভরাট করে তা নদী পথে হবিগঞ্জ, শেরপুর নিয়ে বিক্রি করছে চক্রটি। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের যোগসাজশে এমন হচ্ছে বলে জানান একাধিক বাসিন্দা। নদীতে বালি উত্তোলন করে বিক্রির ব্যাপারে স্থানীয় রাণীনগর গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে চলতি মাসের প্রথম দিকে জেলা প্রশাসক বরাবরে একটি লিখিত আবেদন করেন ৪৪ জন বাসিন্দা। সরকারি প্রতিষ্ঠান ভরাটের নামে বালি বিক্রি বন্ধ ও নদী ভাঙ্গণের কবল থেকে গ্রামবাসীকে রক্ষার দাবি জানান গ্রামবাসী।
রানীনগর গ্রামের রাশিদ মিয়া জানান, নদী তীরবর্তী স্থান থেকে মাটি উত্তোলন করায় আমাদের গ্রামের বাড়িঘর নদী ভাঙ্গণের কবলে পড়েছে। গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে নিষেধ দেয়া হলেও তারা মানে না। সরকারি প্রতিষ্ঠানের নাম করে মাটি তুলে অন্য জায়গায় নিয়ে বিক্রি করছে। তারা প্রভাবশালী আমাদের কথা শুনে না। এভাবে যদি বাড়িঘর নদীগর্ভে চলে যায়, আমরা গরীব মানুষ যাবো কই। গ্রামবাসীর দাবি এই মাটি উত্তোলন বন্ধ করা হোক। নতুবা মানুষের ক্ষয়ক্ষতি বাড়তে থাকবে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, অনুমোদনের আড়ালে কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে। ইজারাদারের যোগসাজশে স্থানীয় বালু উত্তোলনকারীদের নিয়ে একটি সিন্ডিকেট বানিয়ে দিগলবাগ মৌজা ও পাইলগাঁও মৌজা থেকে প্রায় কয়েক কোটি টাকার বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক শফিক মো. জাবেদের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ‘আমাকে যতটুকু বালু তোলার অনুমোদন দেয়া হয়েছে ততটুকু তুলছি। সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে বালি উত্তোলনের এলাকা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এর বাইরে কোথাও ড্রেজার চালানো হচ্ছে না। সেতু আমাদের জেলাবাসীর সম্পদ। সেতুর কোনো ক্ষতি হবে সেটা আমিও চাইবো না। এখন ড্রেজার বন্ধ রয়েছে, তারপরও খোঁজ খবর নিয়ে দেখছি।’
জগন্নাথপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আল বশিরুল ইসলাম জানান, অনুমোদনের বাইরে কেউ বালু উত্তোলন করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী।