ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে সিলেটে বিভিন্ন সংগঠনের বিক্ষোভ

ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে সিলেটে বিভিন্ন সংগঠনের বিক্ষোভ

চট্টগ্রামে সংঘর্ষে আইনজীবী নিহতের প্রতিবাদ ও ইসকনকে নিষিদ্ধের দাবিতে শুক্রবার সিলেট নগরে বিক্ষোভ করেছে বিভিন্ন দল ও সংগঠন। এসব বিক্ষোভ থেকে ইসকনকে উগ্রবাদী সংগঠন আখ্যা দিয়ে নিষিদ্ধের দাবি জানানো হয়।

ছাত্র জমিয়ত:

ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কর্মসূচি জাতীয় ছাত্র সংহতি সপ্তাহ উপলক্ষে জুলাই গণহত্যার বিচার ও আদালত প্রাঙ্গণে এডভোকেট শহীদ সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার বিচার নিশ্চিতকরণ এবং ইসকনকে রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষিদ্ধের দাবিতে ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ সিলেট জেলা উত্তর, দক্ষিণ ও মহানগর এর যৌথ উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করা হয়।

শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) বাদ জুমুআ সিলেট বন্দরবাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ থেকে আরম্ভ হওয়া এই মিছিল কয়েকটি পয়েন্ট প্রদক্ষিণ করে কোর্টপয়েন্ট মসজিদের সামনে এসে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

ছাত্র জমিয়ত সিলেট জেলা উত্তরের সভাপতি জাকির হুসাইন ও জেলা দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান নোমান এর যৌথ পরিচালনায় মহানগর এর সভাপতি আবুল খায়ের এর সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য পেশ করেন ছাত্র জমিয়ত সিলেট জেলা দক্ষিণের সভাপতি কাওছার আহমদ।

বক্তারা অন্তর্র্বতীকালীন সরকারকে জুলাই-আগষ্ট ছাত্র জনতার সফল গণঅভ্যুত্থানকে নশ্বাৎ করতে তৎকালীন পেটুয়াবাহিনীর মাধ্যমে যে হত্যাকান্ড চালানো হয়েছে এর বিচার করতে হবে এবং জঙ্গি সংগঠন ইসকনকে রাষ্ট্রায়ীভাবে নিষিদ্ধ করত তাদের সকল কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে। এছাড়াও আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবী শহীদ সাইফুল ইসলাম আলিফকে নৃশংসভাবে হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচার নিশ্চিতকরণ এবং মসজিদ হামলাকারীদেরকেও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের দাবি জানান।

সাথে সাথে সিলেটে ইসকনকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেন এবং ইসকনের ক্ষেত্রে প্রশাসন ও জনসাধারণকে সজাগ দৃষ্টি রাখার আহবান জানান।

সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের উত্তরের সভাপতি মাওলানা আতাউর রহমান, ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশের সাবেক কেন্দ্রিয় সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আব্দুল মালিক চৌধুরী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম সিলেট জেলা উত্তরের সাধারণ সম্পাদক মুফতি এবাদুর রহমান, জমিয়ত উলামায়ে ইসলাম সিলেট দক্ষিণের ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক হাসান বিন ফাহিম, ছাত্র জমিয়ত সিলেট মহানগরের সাবেক সভাপতি লুৎফুর রহমান, যুব জমিয়ত নেতা আব্দুল করিম দিলদার, মহানগর ছাত্র জমিয়তের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম, ছাত্র জমিয়ত সিলেট জেলা দক্ষিণের প্রশিক্ষণ সম্পাদক আব্দুল আহাদ।

তালামীযে ইসলামিয়া

চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবী খুনের প্রতিবাদে ও বাংলাদেশে ইসকনের কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবিতে তালামীযে ইসলামিয়া সিলেট মহানগর ও জেলার উদ্যোগে আধ্যাত্মিক রাজধানী পুণ্যভূমি সিলেট নগরীতে শুক্রবার (২৯ নভেম্বর, ২০২৪) বাদ জুমআ বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বিক্ষোভ মিছিল পরবর্তী সমাবেশে তালামীযে ইসলামিয়ার কেন্দ্রীয় সভাপতি মাহবুবুর রহমান ফরহাদ বলেন, ন্যায়ের পক্ষে কথা বলায় আদালত প্রাঙ্গণে দিনেদুপুরে আইনজীবীকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, এখনো আসামীদের নাম জনসম্মুখে প্রকাশ করা হয় নাই। আমরা প্রকৃত দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি চাই। আইনজীবীদের নামাযের জন্য বানানো মসজিদও নাকি গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা কোনো ধর্মের বিরুদ্ধে নই, কিন্তু যেখানেই উগ্রবাদ বা সন্ত্রাসবাদ, সেখানেই আমাদের প্রতিবাদ। ছাত্রদের আন্দোলনের ফসল হিসেবে যে সরকার মসনদে আছেন, তাদেরকে দেশের মানুষের পালস বুঝতে হবে। সন্ত্রাসী ইসকনের কার্যক্রম এদেশে নিষিদ্ধ করতে হবে এবং আইনজীবীর হত্যাকারীকে সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে হবে।
 
সংগঠনের সিলেট মহানগরীর সভাপতি হুসাইন আহমদ এর সভাপতিত্বে এবং সিলেট পশ্চিম জেলা সভাপতি শেখ রেদওয়ান হোসেন ও সিলেট পূর্ব জেলা সভাপতি মুহাম্মদ জিল্লুর রহমান এর যৌথ সঞ্চালনায় বিক্ষোভ মিছিল পরবর্তী সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী এডভোকেট মাওলানা আব্দুর রকিব, তালামীযে ইসলামিয়ার সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি সভাপতি মাওলানা মুফতি বেলাল আহমদ, আনজুমানে আল ইসলাহ'র প্রশিক্ষণ সম্পাদক মাওলানা আবু ছালেহ মোহাম্মদ কুতবুল আলম, তালামীযে ইসলামিয়ার সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা রেদওয়ান আহমদ চৌধুরী ফুলতলী প্রমুখ।

আরও উপস্থিত ছিলেন- সংগঠনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মনজুরুল করিম মহসিন, সহ-সাধারণ সম্পাদক এস এম মনোয়ার হোসেন, সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মো. জাহেদুর রহমান, কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কবির আহমদ, কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ইমাদ উদ্দীন তালুকদার, কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ সম্পাদক কুতুব আল ফরহাদ, কেন্দ্রীয় সহ-শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক ছাদেকুর রহমান, আনজুমানে আল ইসলাহ সুনামগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মাহবুবুর রহমান তাজুল, সংগঠনের কেন্দ্রীয় সদস্য এম. শামস উদ্দিন, রেজাউল করিম, সাবেক কেন্দ্রীয় সদস্য মাওলানা এনাম উদ্দিন আহমদ, দক্ষিণ সুরমা উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান, গোলাপগঞ্জ উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান নাবেদ হোসাইন।

অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন- সংগঠনের সিলেট মহানগরীর সহ-সভাপতি মাহমুদুল হাসান, সিলেট পূর্ব জেলা সহ-সভাপতি লাবিবুর রহমান লাভলু, সিলেট পশ্চিম জেলা সহ-সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক সাজু, সিলেট মহানগরীর সাধারণ সম্পাদক আরিফ হোসাইন সামাদ, সিলেট পূর্ব জেলা সাধারণ সম্পাদক হোসাইন আহমদ, সিলেট পশ্চিম জেলা সাধারণ সম্পাদক ইমরান আহমদ সূফি, সুনামগঞ্জ জেলা সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন প্রমুখ।

নাজিরবাজার:  দক্ষিণ সুরমা উপজেলার নাজিরবাজারে এলাকার সর্বস্তরের তাওহিদি জনতার উদ্যোগে ইসকনবিরোধী  মিছিল ও পথসভা হয়েছে। চট্টগ্রামে আইনজীবি সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাকারীদের দ্রুত কঠোর শাস্তি ও দেশে ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) জুমআর নামাজের পর এ কর্মসূচি পালিত হয়।

শুরুতেই বৃহত্তর নাজিরবাজার এলাকার কয়েক শ তাওহিদি জনতা সিলেট-ঢাকা মহাসড়কে বিক্ষোভ মিছিল করেন। পরে বাজারে পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট সালিশি ব্যক্তিত্ব ও সাবেক ইউপি সদস্য মো. জিলা মিয়া।

সাংবাদিক মো. রেজাউল হক ডালিমের পরিচালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন- লালাবাজার ইউনিয়ন পরিষদের সদ্যসাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, প্যানেল চেয়ারম্যান-১ ও ৭ নং ওয়ার্ড সদস্য নজরুল ইসলাম মনির, দারুল কুরআন মাদরাসা নাজিরবাজার’র মুহাদ্দিস মাওলানা আব্দুল মতিন বাহুবলী, বিশিষ্ট সমাজসেবক মুহিত হোসেন চৌধুরী, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ফয়জুর রহমান শামিম, হাছনরাজা লোকসাহিত্য ও সংস্কৃতি কেন্দ্রীয় পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সহ-সভাপতি আসাদুজ্জানাম নুর, সাবেক ছাত্রনেতা ইকবাল আহমদ, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সালিশি ব্যক্তিত্ব জয়নুল হক আলম, বিশ্বনাথ ইউনিয়ন পরিষদ মেম্বার নাজিম উদ্দিন রাহিন, দারুল কুরআন মাদরাসার সিনিয়র শিক্ষক মাওলানা মকসুদ হাসান, খেলাফত মজলিস নেতা শামিম আহমদ, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মুহিউদ্দিন, জিতু মিয়া, শামসুল ইসলাম, দারুল কুরআন মাদরাসার ছাত্র ও প্রতিভাবান ইসলামি সংগীতশিল্পী আবিদুর রহমান খান, মো. মুহিব হোসেন ও হাফিজ সালিম আহমদ প্রমুখ।

সভায় বক্তারা বলেন- সনাতন ধর্ম আর ইসকন এক নয়। ইসকন কোনো ধর্ম নয়, এটি বিশ্বব্যাপী একটি চিহ্নিত সন্ত্রাসী সংগঠন। এটির জন্মই হয়েছে ইসলামের বিরোধীতা করার জন্য। বিশ্বের অনেক দেশে সংগঠনটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এই সংগঠনের উগ্র সদস্যরা চট্টগ্রামে দিনের বেলা প্রকাশ্যে একজন মুসলিম আইনজীবিকে জবাই করে হত্যা করেছে। হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির পাশাপাশি অবিলম্বে সন্ত্রাসী সংগঠন ইসকনকে এ দেশে সরকারিভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে।

বক্তারা আরও বলেন- বাংলাদেশের হিন্দু নাগরিকদের নগ্নভাবে উস্কানি দিচ্ছে ভারত ও দেশটির হলুদ মিডিয়া। তাদের মনে রাখা দরকার- একাত্তরে হিন্দু-মুসলিমসহ সব ধর্মের মানুষেরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করেছে বিজয় নিয়ে এসেছেন। এ দেশে হিন্দু-মুসলিম সবার শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান রয়েছে। সুতরাং ভারতকে এখনই সাবধান হয়ে যেতে হবে এবং উস্কানি ও উগ্রতার পথ থেকে সরে আসতে হবে। তা না হলে ভারতকে চরম মূল্য দিতে হবে।