ড. ইউনূস প্রসঙ্গ

সেই ১২ সিনেটরকে ‘বাংলাদেশি আমেরিকানদের’ পাল্টা চিঠি

সেই ১২ সিনেটরকে ‘বাংলাদেশি আমেরিকানদের’ পাল্টা চিঠি

শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে হয়রানি বন্ধ করতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানিয়ে সম্প্রতি চিঠি দেন যুক্তরাষ্ট্রের ১২ জন সিনেটর। এবার সেই চিঠির বিপরীতে চিঠি দিয়েছেন কংগ্রেস অব বাংলাদেশি আমেরিকানরা।

ওই ১২ সিনেটরের একজন রিচার্ড জে ডার্বিন। তার উদ্দেশে লেখা পাল্টা চিঠিতে বলা হয়েছে, আমরা বাংলাদেশি আমেরিকানরা, ২২ জানুয়ারি অন্য ১১ জন সিনেটরের সঙ্গে আপনারা যে চিঠি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লিখেছেন, সে বিষয়ে আমরা বাংলাদেশি আমেরিকানরা হতাশা ব্যক্ত করছি।

গত ২২ জানুয়ারি রিচার্ড ডার্বিনসহ ১২ জন সিনেটর শেখ হাসিনাকে একটি চিঠি পাঠান। ওই চিঠিতে ড. ইউনূসকে বিদ্যমান হয়রানি বন্ধ করা ও একই সঙ্গে সরকারের সমালোচকদের টার্গেট করে বিচারব্যবস্থার যে লঙ্ঘন করা হচ্ছে, সেই ধারা বন্ধের আহ্বান জানানো হয়।

সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে কংগ্রেস অব বাংলাদেশি আমেরিকানরা যে চিঠি দিয়েছেন তাতে বলা হয়েছে, চিঠিতে আপনারা (১২ সিনেটর) একজন বাংলাদেশি নাগরিক ড. মুহাম্মদ ইউনুসের মামলার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, যিনি তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের আনা অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছেন।

চিঠিতে ১২ সিনেটরের উদ্দেশে আরও বলা হয়, শ্রমিকেরা দাবি করেছেন, ড. ইউনূস দেশের শ্রম আইনের অধীনে তাদের কর্মসংস্থান অধিকার লঙ্ঘন করেছেন। একটি স্বাধীন দেশের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের জন্য চিঠিতে আরও সম্মান দাবি করে। কারণ, এটি তাকে অভিবাদন দিয়ে শুরু না করে একটি ভিত্তিহীন অভিযোগ করাটা সার্বভৌম সরকারের প্রধানকে সম্বোধন করার ন্যূনতম শিষ্টাচারের পরিপন্থি।

সেখানে বলা হয়, একটি বিদেশি রাষ্ট্রে চলমান বিচারিক মামলার বিষয়ে মন্তব্য করার আগে আরও বিবেচনা করার প্রয়োজনীয়তার কথা নির্দেশ করে। কারণ, চিঠির (সিনেটরদের) ভাষা যুক্তির পরিবর্তে ক্রোধের প্রভাবে প্রভাবিত বলে মনে হয়েছে। আমরা উদ্বিগ্ন যে, দেশের (যুক্তরাষ্ট্রের) আইন প্রণেতারা দেওয়ানি আদালতের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করছেন এবং আইন-আদালতকে সম্মান করছেন না। কিন্তু আদালতের রায় নিয়ে নানাভাবে বাহ্যিক প্রভাবের চেষ্টা করছেন।

চিঠিতে সিনেটরদের অবস্থানগত বিষয়ে সমালোচনা করেছেন বাংলাদেশি আমেরিকানরা। তারা বলেছেন, আমরা আপনাকে (রিচার্ড জে ডার্বিন) এবং অন্য সিনেটরদের বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য এবং শেখ হাসিনার কার্যালয়কে সম্মান জানানোর জন্য অনুরোধ করছি। আমরা আপনাকে একজন শক্তিশালী করপোরেট প্রধান ড. ইউনূসের পক্ষ না নিতে এবং এর বদলে দরিদ্র ও অসহায় সাধারণ কর্মচারী-শ্রমিকদের আইনি ও আর্থিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া এবং তাদের পক্ষে অবস্থান নিতে উৎসাহিত করছি।

বাংলাদেশি আমেরিকানরা চিঠিতে বলেছেন, মার্কিন মূলধারার মিডিয়া, সিবিএস নিউজ, তাদের অনলাইন সংবাদে যা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল তার প্রতিফলন আপনাদের চিঠিতে আমরা প্রত্যক্ষ করি যখন কি না তারা বলেছিলেন, যেমন ইউনূস পশ্চিমের রাজনৈতিক অভিজাতদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের জন্য পরিচিত, বিশেষত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। অনেকে মনে করেন এই রায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

চিঠিতে অনুরোধ করা হয়, আপনি (রিচার্ড জে ডার্বিন) এবং অন্য সিনেটররা ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সত্যতা যাচাই করুন, বাংলাদেশ সরকার নয়। প্রয়োজনে আমরা আপনাকে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ ও আইনজীবীদের বাংলাদেশে পাঠাতে ও আইনি প্রক্রিয়ার মূল্যায়ন এবং ইউনূসের বিরুদ্ধে অভিযোগের সঙ্গে জড়িত নথি পরীক্ষা করতে অনুরোধ করছি। আমরা আপনাকে ওই চিঠি থেকে আপনার নাম প্রত্যাহার করতে উৎসাহিত করছি, যা (সিনেটরদের চিঠি) আমরা মানহানিকর ও অপ্রমাণিত তথ্যের ভিত্তিতে লেখা বলে বিবেচনা করি।

কংগ্রেস অব বাংলাদেশি আমেরিকানের চিঠিতে সই করেছেন কংগ্রেস অব বাংলাদেশি মোহাম্মদ আলী সিদ্দিক, শামীম চৌধুরী, মঞ্জুর চৌধুরী, ড. প্রদীপ রঞ্জন করসহ আরও ৩৪ আমেরিকান বাংলাদেশি।

এদিকে, ড. ইউনূসের সাজার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে যুক্তরাষ্ট্রের ১২ সিনেটরের দেওয়া চিঠি প্রত্যাহার চেয়ে পৃথক পাল্টা চিঠি পাঠানো হয়েছে। গত ২৫ জানুয়ারি দুপুরে ই-মেইল ও তাদের ঠিকানায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লবসহ তিনজন আইনজীবী এ চিঠি পাঠান।

এ বিষয়ে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন গত ২৪ জানুয়ারি এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ড. ইউনূসকে হয়রানি বন্ধের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবর যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটের ১২ জন সদস্যের চিঠিতে বাংলাদেশের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলা ‘দুর্ভাগ্যজনক’।