সমর্থকদের আর্তনাদ কি পৌঁছেছে সিলেট ফ্র্যাঞ্চাইজির কানে?

সমর্থকদের আর্তনাদ কি পৌঁছেছে সিলেট ফ্র্যাঞ্চাইজির কানে?

'ইখতা খোনো খেলা হইলো নি? ইখতা খি দল বানাইলো সিলেট!'-সিলেট স্ট্রাইকার্সের টানা পঞ্চম হারের পর আক্ষেপ করে বলছিলেন আশরাফুল ইসলাম নামের স্থানীয় এক দর্শক। সেই আক্ষেপের পর অবশ্য একটু আশার আলো দেখছিলেন সিলেটের সমর্থকরা। পাঁচ ম্যাচ পর প্রিয় দলের একটি জয় তাদের মুখে হাসি ফুটিয়েছিল। আশায় বুক বেঁধে সিলেটপর্বের শেষ ম্যাচেও দর্শকের ঢল নেমেছিল সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। কিন্তু এই সিলেট যে ভীষণরকম ছন্নছাড়া। টুর্নামেন্টে তাদেরই মতো ধুঁকতে থাকা দুর্দান্ত ঢাকার বিপক্ষে জিতলেও পরের ম্যাচেই ফের মুখ থুবড়ে পড়লো সিলেট স্ট্রাইকার্স। রংপুর রাইডার্সের ১৬৩ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১৬.৫ ওভারে ৮৫ রানেই গুটিয়ে গেলো মোহাম্মদ মিঠুনের দল। নয়দিনের সিলেটপর্বে গ্যালারিভরা দর্শক সমর্থন কোনো কাজেই লাগাতে পারেনি সিলেট স্ট্রাইকার্স। একের পর এক হারে বিপিএলে সাত ম্যাচ শেষে তাদের অর্জনের খাতায় একটিমাত্র জয়। সিলেটের সমর্থকদের হাহাকার আর কষ্ট তাদের চেহারা ঠিকরে বেরিয়ে আসছিল। 'টুর্নামেন্টের প্রথম পাঁচ ম্যাচে তাদের অধিনায়ক খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে খেলেছেন, সেই দলের কাছ থেকে পারফরম্যান্স আশা করা বোকামি'-বাইরে থেকে অনেকে এমন কথা বললেও সিলেটের দর্শকরা বোধ হয় মাশরাফিকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে রাজি নন। বরং মাশরাফি দল ছাড়ার পরও গ্যালারিতে তার নামের অনেক প্ল্যাকার্ড দেখা গেছে। স্টেডিয়াম থেকে অদূরে কুমারাপাড়া পয়েন্ট নামক স্থানে বেশ কয়েকটি বড় ক্লথিং ব্র্যান্ডের আউটলেট। শীতের শেষ সময়ে যেখানে ৩০, ৪০ বা কোথাও ৫০ শতাংশ ছাড়ে জামাকাপড় বিক্রি হচ্ছে। সেখানেই কয়েকটা দোকানে ঢুঁ মেরেছিলাম। কাপড় নাড়াচাড়া করার সময় গলায় অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড দেখে এক বিক্রয়কর্মী তার কষ্ট উগড়ে দিলেন। এক বুক হতাশা নিয়ে বলছিলেন- ‘সিলেট কি আর পারবে ভাই? মাশরাফিকে নিয়ে এত কথা! মাশরাফি যাওয়ার পরও তো খারাপ অবস্থাই!’ নয়ন দাস নামের ওই বিক্রয়কর্মীর কাঠগড়াতেও মাশরাফি নন, সিলেটের স্কোয়াড। তিনি মনে করছেন, জিম্বাবুয়ে-আয়ারল্যান্ড থেকে মানহীন ক্রিকেটারদের কম মূল্যে কিনে এনে দলের সর্বনাশ করেছে সিলেট ফ্র্যাঞ্চাইজি। ভালোমানের কয়েকজন বিদেশি ক্রিকেটার থাকলে সিলেটের এই হাল হতো না, দাবি তার। একইরকম কথা বলছিলেন, স্টেডিয়ামের পথে রাইড শেয়ার করা মোটরবাইক চালক মোজাম্মেল হক। জানালেন, তিনিও একদিন খেলা দেখতে মাঠে গিয়েছিলেন। আক্ষেপ করে বললেন, ‘টিকিটের দাম বেড়েছে। দর্শক নিজেদের টাকার কথা না ভেবে প্রিয় দলের খেলা দেখতে যাচ্ছে আর সিলেট ফ্র্যাঞ্চাইজি টাকা বাঁচাতে গিয়ে যা-তা দল বানিয়ে বসে আছে! তাদের কাছে এই সমর্থকদের আবেগের কোনো মূল্যই নেই।’ লাক্কাতুরা চা-বাগান থেকে শুরু করে সিলেট শহরের আনাচে-কানাচে সব জায়গায়ই শুধু একটাই আলোচনা-এ কেমন দল গড়লো সিলেট ফ্র্যাঞ্চাইজি! ঘরের মাঠের দর্শকরা চাইছিলেন, প্রিয় দলের জয়ে উৎসব করবেন। বারবার তারা সেই আশার বেলুন নিয়ে হাজির হয়েছেন স্টেডিয়ামে, একটি ম্যাচ ছাড়া প্রতিবারই তা চুপসে গেছে। দলের ক্রমাগত ব্যর্থতার পরও সিলেটের মানুষ যেভাবে স্টেডিয়ামে গেছেন, প্রিয় দলের খোঁজ রেখেছেন; এমন আবেগ-অনুভূতির কতটা মূল্যায়ন করতে পেরেছে সিলেট ফ্র্যাঞ্চাইজি? মাঠভরা দর্শক পাওয়ার পরও প্রশ্নটা রয়েই গেলো।