বন্যায় বিপর্যস্ত সিলেটে দুর্ভোগ চরমে
টানা বৃষ্টি ও উজানের পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। নিম্নাঞ্চলের পাশাপাশি নগরীতেও পানি প্রবেশ করেছে। সোমবার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত সিলেটে ২৯৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বলে জেলা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন জানান।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, গত তিনদিনে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ৬৪৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টির পরিমাণ কমেছে।
“যদি বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেড়ে যায় তাহলে সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে। সিলেটে বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। জেলার নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।” যোগ করেন তিনি।
মঙ্গলবার সকালে নগরীর যতরপুর, সোবাহানীঘাট, মাছিমপুর ও উপশহরের কয়েকটি স্থানে ঘুরে কোথাও-কোথাও হাঁটুসমান পানি দেখা গেছে। বন্যার পানি মাড়িয়ে চলাচল করছেন বাসিন্দারা। কেউ হেঁটে, কেউ রিকশা, অটোরিকশা ও ব্যক্তিগত গাড়ি দিয়ে যাতায়াত করছেন।
নগরীর উপশহর সি ব্লকের বাসিন্দা এরশাদ মিয়া বলেন, “সোমবার রাতে বাসার ভেতরে হাঁটু সমান পানি ঢুকে যায়। সারারাত কষ্ট করে কাটিয়েছি সবাইকে নিয়ে। সকালে হাঁট পানি ভেঙে বেরিয়েছি; আবার ওইভাবেই ফিরেছি। পাড়ার বেশির ভাগ ব্লকেই পানি ঢুকেছে।”
একই এলাকার ডি ব্লকের বাসিন্দা আহমেদ হোসেন বলেন, “এই নিয়ে তিন দফায় পানি উঠল বাসায়। সোমবার রাতেই বাসায় পানি উঠে; রাস্তা-ঘাটেও পানি। এভাবে কিছুদিন পর পর পানি উঠলে এই এলাকা ছাড়তে হবে।”
যতরপুর এলাকার মামুন মিয়া চারতলায় থাকেন। কিন্তু বাসার নিচ তলায় পানি ঢুকে পড়ায় যাতায়াতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বলে জানান।
তিনি বলেন, “হাঁটু পানি ভেঙে বের হয়েছি বাজার করতে। কাজে তো বের হতেই হয়। কয়েকদিন পরপর এই যন্ত্রণা আর সহ্য হচ্ছে না।”
নগরীর বেতেরবাজার এলাকার বাসিন্দা পারভেজ আহমদ বলেন, “গতকাল রাতেই পানি উঠেছে। কি যে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তা বলে বোঝানো যাবে না।”
সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মোবারক হোসেন বলেন, “গত দুইদিন ধরে বৃষ্টিপাতের কারণে নদ-নদীর পানি বেড়েছে। তবে এখনও সার্বিক পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা কাজ করছেন; ত্রাণ বিতরণও অব্যাহত আছে।
“ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ, ওসমানীনগর ও বিশ্বনাথে পানি একটু বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি বাড়ার কারণে আবার আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষজন আসতেছেন।”