যুক্তরাজ্যে ই-ভিসা বিড়ম্বনায় যত্রতত্র চলে যাচ্ছে ভিসাধারীদের ব্যক্তিগত তথ্য, মহা কেলেঙ্কারির আশঙ্কা
যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত সকল ভিসাধারীদের ইমিগ্রেশন স্ট্যাটাস প্রমাণ করতে সবাইকে ই-ভিসাতে রূপান্তরিত হতে নির্দেশ দিয়েছে হোম অফিস। ইমিগ্রেশন স্ট্যাটাস প্রমাণে বিগত দিনগুলোতে বায়োমেট্রিক রেসিডেন্ট পারমিট (বিআরপি) ব্যবহার করা হতো। এই কার্ডেই ব্যক্তির সব তথ্য বহন করে এবং বিআরপি কার্ডই পরিচয়পত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কার্ড তৈরিতে আর্থিক খরচ বাঁচিয়ে ড্যামেজ এবং হারিয়ে যাওয়া সহ নানাবিধ জটিলতা কাটাতে সবাইকে ই-ভিসায় রূপান্তরিত হতে ২০২৩ সালে সিদ্ধান্ত নেয় হোম অফিসে কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে একটি বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করেছিল। জানিয়ে দেয়া হয়েছিল ২০২৪ সালের ৩১শে ডিসেম্বর পর্যন্ত বায়োমেট্রিক রেসিডেন্ট পারমিট (বিআরপি) ব্যবহার করতে পারবেন ভিসাধারীরা। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যেই সবাইকে ই-ভিসায় আসতে হবে। তবে হোম অফিসের ওয়েব সাইটে গিয়ে অথবা হোম অফিস কর্তৃক পাঠানো লিংকের মাধ্যমে মোবাইল বা কম্পিউটার ডিভাইস থেকে ই-ভিসা কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে। মোবাইল বা কম্পিউটার ডিভাইস থেকে ই-ভিসা কার্যক্রম সম্পন্ন করতে জটিলতায় পড়ছেন লাখ লাখ ভিসাধারীরা। তবে আইটি এক্সপার্ট ও ইংরেজিতে দক্ষ না হওয়ার কারণে কাজ সম্পন্ন না করতে পেরে জটিলতায় ভুগছেন অনেকেই। তাই ই-ভিসা করতে অন্যের সাহায্য নিতে হচ্ছে তাদের। যার ফলে প্রার্থীর ব্যক্তিগত সব তথ্য জেনে যাচ্ছেন দ্বিতীয় বা তৃতীয় ব্যক্তি। অনেকেই আবার ছোট ছোট ট্রাভেল এজেন্সী ব্যবহার করছেন ই-ভিসা করতে। এতে তাদের কাছেও চলে যাচ্ছে ব্যক্তির সব তথ্য যা ঝুঁকিপূর্ণ।
৩১শে ডিসেম্বরের আগে ই-ভিসায় আসতে অনেকেই এই পদ্ধতিতে অ্যাক্সেস করতে পারছেন না। এই দুরবস্থার কথা স্বীকার করেছে হোম অফিস।
বিভিন্ন দাতব্য প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পেইনারদের মতে, ডিজিটাল স্থানান্তরের সমস্যাগুলি ‘১০-বছরের রুট’ ভিসার অধীনে থাকা লক্ষাধিক মানুষের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। হোম অফিস স্বীকার করেছে যে, অনেক মানুষ, যারা যুক্তরাজ্যে বসবাস ও কাজ করার অধিকার রাখেন, তারা তাদের ই-ভিসা অ্যাক্সেস করতে এবং তাদের থাকার অধিকার প্রমাণ করতে পারছেন না।
মানবাধিকার কর্মীরা সতর্ক করেছেন যে, ই-ভিসা অ্যাক্সেস করার সমস্যা কয়েক হাজার মানুষের জন্য একটি নতুন কেলেঙ্কারির কারণ হতে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা যুক্তরাজ্যে থাকার অধিকার রাখেন, তবে তারা কাজ করার বা বাসা ভাড়া করার অধিকার প্রমাণ করতে পারছেন না। এই মাসের শেষে, হোম অফিস একটি ডিজিটাল অভিবাসন ব্যবস্থায় স্থানান্তরিত হচ্ছে। যুক্তরাজ্যে থাকার অধিকার প্রমাণকারী অধিকাংশ ডকুমেন্ট, যেমন বায়োমেট্রিক রেসিডেন্স পারমিটের মেয়াদও অনেকের শেষ হবার পথে। দ্য গার্ডিয়ান জানতে পেরেছে যে, একটি বৃহৎ অভিবাসী গোষ্ঠীর মধ্যে ই-ভিসা পাওয়ার অধিকার রয়েছে এমন অনেকেই ইতিমধ্যে আবেদন করেলেও তারা এটি পেতে ব্যর্থ হচ্ছেন।
লক্ষাধিক মানুষ হোম অফিসের একটি কঠিন ভিসা ব্যবস্থার অধীনে রয়েছেন, যা ‘১০-বছরের রুট’ নামে পরিচিত, যেখানে তাদের প্রতি নবায়নে বিপুল পরিমাণ অর্থ দিতে হয়। এই রুটে থাকা অনেক মানুষই নিম্ন আয়ের এবং বিভিন্ন জাতি ও বর্ণের। প্রতিবার ভিসা নবায়নে প্রায় এক বছর বিলম্ব হয় এবং তারা অপেক্ষার সময়ে ‘থ্রি-সি লিভ’ পান, যা তাদের কাজ করার বা সম্পত্তি ভাড়া করার অনুমতি দেয়। তবে যারা ভিসা নবায়নের জন্য অপেক্ষার সময়ে ই-ভিসার জন্য আবেদন করেছেন, তারা অনলাইনে আবেদন করার সময় সমস্যায় পড়ছেন। একটি স্ক্রিনে তাদের ই-ভিসা থাকার বার্তা দেখালেও, এটি খোলার চেষ্টা করলে একটি ত্রুটি বার্তা আসে।
এতে লেখা থাকে: ‘আমরা আপনার স্ট্যাটাসের প্রমাণ দেখাতে পারছি না। এর কারণ হতে পারে যে আপনার স্ট্যাটাস এখনও এই সেবা দেখার জন্য প্রস্তুত নয়।’ নিক বেলস, এসেক্স ও লন্ডনের রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেন্ট ফোরামের ক্যাম্পেইনিং প্রধান, সতর্ক করেছেন যে, ই-ভিসার সমস্যাগুলি উইন্ডরাশ কেলেঙ্কারির মতো ঘটনার দিকে নিয়ে যেতে পারে। ভিসা ব্যবস্থা এক মাসের মধ্যে ডিজিটালে রূপান্তরিত হবে, এবং এটি জরুরি যে অভিবাসন স্ট্যাটাসে থাকা প্রত্যেক ব্যক্তি ই-ভিসা যাতে অ্যাক্সেস করতে পারেন। নতুবা এটি নিশ্চিত যে, ২০২৫ সালে থ্রি-সি লিভের অধীনস্থ হাজার হাজার মানুষ ভুলভাবে চাকরি থেকে বরখাস্ত হবে, প্রতিবন্ধী ভাতা থেকে বঞ্চিত হবে এবং অন্যান্য মৌলিক সেবা থেকে বঞ্চিত হবে। হোম অফিসের সূত্রগুলো দ্য গার্ডিয়ানকে জানিয়েছে, ডিজিটাল ভিসা সিস্টেম ধাপে ধাপে উন্নত করা হয়েছিল, তাই কিছু মানুষ, যারা তাদের আবেদন ডিজিটাল রেকর্ড স্ট্যাটাস তৈরি হওয়ার আগে করেছিলেন, তাদের ডিজিটাল থ্রি-সি লিভ নেই। বিভাগটি দাবি করেছে যে কেবলমাত্র ডিজিটাল অভিবাসন স্ট্যাটাস ব্যবস্থাগুলোকে আরও নিরাপদ করবে, তবে অনেকে অভিযোগ করেছেন যে তারা ই-ভিসা অ্যাক্সেস করতে পারছেন না।
যারা ই-ভিসা পেয়েছেন, তারাও অনলাইনে তাদের ডিজিটাল অ্যাকাউন্ট অ্যাক্সেস করতে পারছেন না ইন্টারনেট অ্যাক্সেসের অভাব বা সিস্টেমের প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে। ই-ভিসা অনলাইনে আপডেট হয়, তবে এটি ডাউনলোড করার জন্য কোনো কিউআর কোড নেই। হোম অফিসের একজন মুখপাত্র বলেছেন: ‘যারা অনলাইনে তাদের অভিবাসন স্ট্যাটাস দেখতে অক্ষম, তাদের অধিকার এখনও বিভিন্ন চ্যানেলের মাধ্যমে প্রমাণ করা যায়। যার মাধ্যমে কারো কর্মসংস্থান, পড়াশোনা এবং অন্যান্য সুবিধার অধিকার নিশ্চিত করা যেতে পারে। আমরা সবকিছু ডিজিটাল সিস্টেমে রূপান্তর করছি। এবং ক্রমবর্ধমান সংখ্যক থ্রি-সি লিভে থাকা মানুষ অনলাইনে তাদের অভিবাসন স্ট্যাটাস দেখতে এবং প্রমাণ করতে যাতে পারে সেদিকেও নজর দিয়েছি। সূত্র: মানবজমিন