সরকারের সংলাপের আহ্বান প্রত্যাখ্যান আন্দোলনকারীদের

শনি ও রবিবারের জন্য কর্মসূচি ঘোষণা করেছে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা শিক্ষার্থীদের প্লাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের সমবেত হওয়ার কথা জানা যাচ্ছে। সংলাপের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আহ্বান জানালেও তা প্রত্যাখ্যান করেছে আন্দোলনকারীরা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মোঃ নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ''সরকারের কাছে বিচার চাওয়া বা সংলাপে বসারও সুযোগ আর নেই। ক্ষমা চাওয়ার সময়ও পার হয়ে গেছে।''
টেলিগ্রামে দেয়া এক বার্তায় তিনি লিখেছেন, ''যখন সময় ছিল তখন সরকার ব্লক রেইড দিয়ে শিক্ষার্থীদের গ্রেফতার করেছে, নির্যাতন করেছে। আখতার হোসেন, আরিফ সোহেলসহ রাজবন্দীদের কারাগারে রেখে আমরা কোনো ধরনের সমঝোতায় যাবো না।''
তিনি লিখেছেন, ''১৯শে জুলাই আমরা কারফিউ ভঙ্গ করে শাটডাউন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছিলাম। আমাদের সে বক্তব্য কোনো মিডিয়ায় প্রচার করতে দেওয়া হয় নাই। সে রাতে আমাকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম অত্যাচার করা হয় এ ঘোষণার জন্য এবং আন্দোলন প্রত্যাহার ও সরকারের সাথে আলোচনায় বসার জন্য জবরদস্তি করা হয়।''
''ছাত্রজনতা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছিল৷ সরকার দমন-পীড়ন করে সেটিকে সংঘাত ও সহিংসতার দিকে ঠেলে দিয়েছে। কারফিউ ও ইন্টারনেট বন্ধ করে শত শত মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। এবার এরকম পরিস্থিতি হলে কারো জন্যই পরিণতি ভালো হবে না।''
নাহিদ ইসলাম লিখেছেন, ''পরবর্তীতে ডিবি অফিস থেকেও আমাদের প্রধানমন্ত্রীর দফতরে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। আমাদের অনশন ও রাজপথে আন্দোলনের কারণে সে পরিকল্পনা সফল হয়নি।''
''আমরা এখনো শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের আন্দোলন অব্যাহত রাখতে চাই। আমরা কোনো সহিংসতা, প্রতিহিংসা ও প্রাণনাশ চাই না৷ নিরাপত্তা বাহিনীকেও এরজন্য সহযোগিতা করতে হবে। আওয়ামী সন্ত্রাসীদের রাজপথে দেখা গেলে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে এর দায়ভার নিতে হবে'', লিখেছেন নাহিদ ইসলাম।
''তবে রক্ত ঝড়লে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। আমরা ন্যায়বিচার ও জীবনের নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করতে চাই। গণজোয়ার তৈরি হয়েছে। কোনো ধরনের দমন-পীড়ন, প্রোপাগাণ্ডা ও ষড়যন্ত্র করে এ আন্দোলন থামানো যাবে না,'' নাহিদ ইসলাম।
রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করা শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ শহীদ মিনারের সামনে জড়ো হয়েছে। অনেক শিক্ষার্থীর সঙ্গে তাদের অভিভাবকরাও রয়েছেন।
এর আগে, বেলা ১২টার পর ঢাকার সায়েন্স ল্যাব মোড়ে এসে অবস্থান নিতে শুরু করে বিক্ষোভকারীরা।
দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত সেখানে প্রায় পাঁচশো আন্দোলনকারীদের জড়ো হতে দেখা গেছে।
সেখানে অবস্থান করা বিবিসি সংবাদদাতা জানান, আন্দোলনকারীরা ছোটো ছোটো দলে ভাগ হয়ে সায়েন্স ল্যাব মোড়ে এসে জড়ো হন। সেখান থেকে শিক্ষার্থীদের শহীদ মিনারের দিকে মিছিল নিয়ে আগানোর কথা জানা যাচ্ছে।
পাশেই নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান করলেও তাদের আন্দোলনে কোনো বাধা দিতে দেখা যায়নি।
এদিকে মৎস্যভবন থেকেও একটি মিছিল শহীদ মিনারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে জানান সেখানে উপস্থিত এক আন্দোলনকারী।
মিছিলে তাদের নানা স্লোগান দিতে শোনা যায়।
বাড্ডা-রামপুরা সড়কেও অবস্থান নিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। বেলা ১২টার দিকে ইস্ট-ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে একটি দল আফতাবনগরে জড়ো হতে থাকে।
তাদের সঙ্গে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও যোগ দেয়। পরে ব্র্যাকের সামনে দিয়ে বাড্ডা-রামপুরা-বনশ্রীতে সমবেত হয়।
দুপুর তিনটার দিকে সেখান থেকে শহীদ মিনারে যাবার কথা জানায় শিক্ষার্থীরা।
ঢাকার মিরপুর-১০’এর গোলচত্বরের নিচে রাস্তা বন্ধ করে কিছু শিক্ষার্থীকে বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে।
মাথায় বাংলাদেশের পতাকা বেঁধে এবং সড়কে ৯ দফা লিখে তাদের বিক্ষোভ করতে দেখা যায়। একইসঙ্গে বিভিন্ন স্লোগান দেয় আন্দোলনকারীরা।
চলমান আন্দোলনে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে বিক্ষোভের খবর পাওয়া যাচ্ছে।
গাজীপুরের স্থানীয় সাংবাদিক শনিবার বিকাল তিনটায় বিবিসিকে জানিয়েছেন, সেখানে “এখনও বিক্ষোভ চলছে”। এদিন সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে মহাসড়কে জড়ো হতে শুরু করেন।
এতে করে গাজীপুরে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এছাড়া, বিক্ষোভ চলাকালে “ব্যাপক মারামারি” হয় এবং এতে কয়েকজন আহত হন বলেও জানান তিনি।
“আন্দোলনকারীরা গাজীপুরের চন্দ্রাতে গাড়ি পুড়িয়েছে” বলেও জানান তিনি।
এছাড়া, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ডাকা বিক্ষোভ সমাবেশে সাড়া দিয়েছেন সিলেটের মানুষও।
সমাবেশে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকবৃন্দসহ ডাক্তার, আইনজীবী, শ্রমজীবীদের পাশাপাশি অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন।
কিন্তু আন্দোলনকারীদের বাঁধা দিতে সিলেটের টিলাগড়, পাঠানটুলা ও মদিনা মার্কেট এলাকাসহ বিভিন্ন পয়েন্ট লাঠিসোঁটা ও দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়েছে বলে জানা গেছে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে দেশব্যাপী শিক্ষার্থীদের হামলা ও হত্যার প্রতিবাদে এবং নয় দফা বাস্তবায়নের দাবিতে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করেছে বরিশালের শিক্ষার্থীরা।
শনিবার বেলা ১১টায় বরিশালে এ কর্মসূচি পালিত হয় বলে জানান স্থানীয় সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম।
নথুল্লাবাদ থেকে মিছিল নিয়ে আমতলা মোড় যাওয়ার সময় চৌমাথা পুলিশ বক্সে হামলা ভাংচুর করা হয়। ঘটনার সময় পুলিশ থাকলেও তারা কোন বাধা দেয়নি বলে তিনি জানান।
এছাড়া, রংপুরেও শত শত মানুষ বিক্ষোভ-মিছিল করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
এদিন বিকাল তিনটা থেকে চট্টগ্রামের নিউমার্কেটের মোড়েও বিক্ষোভ সমাবেশ চলছে। কুমিল্লাতে বিক্ষোভ ঘিরে সহিংসতার ঘটনায় মোট ১০ জনের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এর বাইরে রাজশাহীর স্থানীয় সাংবাদিক আনোয়ার আলী হিমু জানিয়েছেন যে শনিবার সকালে রাজশাহীর হাজারখানেক শিক্ষার্থী বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বের হয়েছে এবং কিছু সংঘর্ষের ঘটনাও সেখানে ঘটেছে।