কে হবেন যুক্তরাজ্যের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী?
যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচন আজ। সংসদের নিম্নকক্ষ ‘হাউস অব কমন্স’-এর ৬৫০ আসনে ভোট গ্রহণ করা হবে। এসব আসনে নির্বাচিত হওয়ার জন্য ৯ রাজনৈতিক দল মনোনীত প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মিলিয়ে ৪ হাজার ৫১৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এখন পর্যন্ত এটাই রেকর্ডসংখ্যক প্রার্থী।
এদিকে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেই প্রচারণায় নেমে পড়েছেন যুক্তরাজ্যের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। লেবার পার্টির নেতা কেয়ার স্টারমারও থেমে নেই। দুই নেতাই ভোটারদের নিজ নিজ দলে ভোট দেয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করছেন। দেশটির পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী কে হবেন তা নিয়ে কোনো অনুমান করা না গেলেও, জনমত জরিপ দিচ্ছে চমকপ্রদ তথ্য।
জনমত জরিপে দেখা গেছে, ১৪ বছর শাসন করার পর অনেকটা পিছিয়ে আছে সুনাকের দল কনজারভেটিভ পার্টি। সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, লেবার পার্টির তুলনায় কনজারভেটিভ পার্টি ২০ শতাংশ পিছিয়ে আছে।
অন্যদিকে, আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে দলের অনেককেই একইসঙ্গে অবাক ও ক্ষুব্ধ করেছেন ঋষি সুনাক। বৃহস্পতিবার প্রচারণায় গিয়ে সুনাক জানান, ব্রিটেনের অর্থনীতি একটি কোণে ঘুরছে এবং অবৈধ অভিবাসন মোকাবিলায় তার একটি পরিকল্পনা রয়েছে।
সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের জরিপ অনুসারে, গত মঙ্গলবার পর্যন্ত অন্তত ৪০ দশমিক ৩ শতাংশ ভোটার কিয়ার স্টারমারের নেতৃত্বে লেবার পার্টিকে বেছে নেয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। বিপরীতে ঋষি সুনাকের কনজারভেটিভ পার্টিকে বেছে নেয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন মাত্র ২০ দশমিক ৭ শতাংশ ভোটার, যা লেবার পার্টির প্রায় অর্ধেক।
জানা গেছে, এ নির্বাচনে অভিবাসী নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা অন্যতম বড় তুরুপের তাস। কনজারভেটিভ পার্টি জিতলে রুয়ান্ডা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে আর লেবার পার্টি ক্ষমতায় এলে সেই রুয়ান্ডা পরিকল্পনা বাতিল হবে। এ ছাড়া কনজারভেটিভ ঘোষিত স্বামী বা স্ত্রী আনার ক্ষেত্রে যে ২৯ হাজার পাউন্ড বেতন করা হয়েছে যেটা আগামী জানুয়ারিতে ৩৮ হাজার করার পরিকল্পনা সেটা ২৯ হাজারেই রাখবে লেবার পার্টি। এ ছাড়া অবৈধদের শনাক্ত করে তৃতীয় কোনো দেশে না পাঠিয়ে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর চিন্তা করছে লেবার পার্টি। এদিকে ব্রেক্সিট ও কভিডে ভয়াবহ অর্থনীতির পতন ঘটে ব্রিটেনের। তার ওপর আবার লিজ ট্রাসের স্বপ্নবিলাসী বাজেটের কারণে রাতারাতি ধস নামে বিশ্বের অন্যতম অর্থনীতির শক্তিশালী দেশ ব্রিটেনের। মুদ্রাস্ফীতি ১১ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। সেই জায়গা থেকে দেড় বছরে অর্থনীতি একটা সম্মানজনক জায়গায় এনেছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। মূলত এই কারণেই তিনি আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দেন। ঘোষণার পর মুদ্রাস্ফীতি ২ শতাংশ কমে ২.৩ শতাংশ হয়েছে। সেটা নিজের সাফল্য ধরলেও লেবার পার্টি বলছে তারা কর কমিয়ে কর্মীদের বেতন বৃদ্ধি করে অর্থনীতির চাকা সচল করবে। যারাই সরকার গঠন করবে তাদের অন্যতম দায়িত্ব হচ্ছে দেশের অর্থনীতির হারানো শক্তি ফিরিয়ে আনা।
কভিডে ব্রিটেনে স্বাস্থ্যসেবা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়। লাখ লাখ মানুষ মারা যান, হাসপাতালে তৈরি হয় বিশাল জট। এখনো সেই চিকিৎসা জট থেকে বের হতে পারেনি দেশের স্বাস্থ্য খাত। একই সঙ্গে জুনিয়র ডাক্তার, নার্স ও হাসপাতাল স্টাফদের বেতন বৃদ্ধি, কর্মঘণ্টা কমানো এবং নতুন লোকবল নিয়োগ নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে দেশে।
লেবার পার্টি বলছে, এনএইচএস (ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস)-কে ভবিষ্যতের জন্য তৈরি করতে হবে। তারা ওয়েটিং টাইম কমানোর বিষয়ে জোর দিয়েছে তাদের নির্বাচনি প্রচারণায়। এদিকে কনজারভেটিভও বলছে তারা এনএইচএসে রোগীদের অপেক্ষার তালিকা কমানোর লক্ষ্যে কাজ করবে। দুই দলই এনএইচএসকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা করেছে।
এদিকে সব জরিপে এগিয়ে আছে লেবার পার্টি। ইউগোভ বলছে, মেজরিটি নিয়ে লেবার ক্ষমতায় যাবে। আর কনজারভেটিভ পাবে মাত্র ৫৫ আসন। এদিকে সাভান্থা জরিপে নিজ আসনে হেরে যাওয়ার আশঙ্কায় আছেন কনজারভেটিভ দলনেতা সুনাক। আগের সব জরিপ যদি সঠিক হয় তাহলে ১৪ বছর পর ব্রিটেনে ক্ষমতায় আসতে যাচ্ছে লেবার পার্টি। আর সেটি হলে নতুন প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য অপেক্ষমাণ আছেন স্যার কিয়ার স্টারমার।