১৩ বছর পর সিলেটে শিশু হত্যার দায়ে সৎ পিতার যাবজ্জীবন

সিলেট নগরের বালুচরে দেড় বছরের শিশু আলমগীরকে হত্যার দায়ে সৎ পিতার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সেই সাথে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামীকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো ছয় মাসের বিনাশ্রমে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (০৪ এপ্রিল) দুপুরে সিলেট বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মোঃ শাহাদৎ হোসেন প্রামানিক চাঞ্চল্যকর এ রায় ঘোষনা করেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত চান মিয়া (৩৫) দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর থানার ফরিকটিলা ধুপিপাড়ার (বাবুপাড়া) রশিদ আলীর ছেলে। তিনি বর্তমানে নগরের উত্তর বালুচর এলাকার আব্দুল গফফারের কলোনীর বাসিন্দা ছিলেন।
আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. আহম্মদ আলী রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, রায় ঘোষণাকালে দন্ডপ্রাপ্ত চান মিয়া পলাতক রয়েছেন।
মামলার বরাত দিয়ে আদালত সূত্র জানায়, ১৩ বছর আগে নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা থানার পূর্ব তিলাশপুর গ্রামের মৃত আব্দুল মজিদের মেয়ে বিলকিছ বেগমের সঙ্গে একই থানার নশুপুর গ্রামের রিকশা চালক মানিক মিয়ার বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাদের সংসারে হুসনা বেগম (১০), প্রিয়া বেগম (৬) ও ছেলে আলমগীরের জন্ম হয়।
ঘটনার ৭ মাস আগে বিলকিছ বেগম পূর্বের স্বামীর ৩ সন্তানকে নিয়ে চান মিয়ার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের পর চান মিয়া স্ত্রী ও সৎ ৩ সন্তানকে নিয়ে নগরের উত্তর বালুচর এলাকার আব্দুল গফ্ফারের কলোনীতে বসবাস করে আসছিলেন। সন্তানদের অন্যত্র নিয়ে রেখে আসার জন্য বিলকিছ বেগমকে চাপ সৃষ্টি করলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়। পাশাপাশি পূর্বের সন্তানদের মারপিট করে আসছিলেন চান মিয়া।
২০১০ সালের ৩১ আগষ্ট শিশু আলমগীর কান্নাকাটি করলে চান মিয়া তাকে মারধর করেন। এক পর্যায়ে ওইদিন সন্ধ্যা ৭ টার দিকে চান মিয়া সৎ ছেলে দেৎ বছরের আলমগীরকে সঙ্গে নিয়ে পাশ্ববর্তী উত্তর বালুচর ২ নং মসজিদের পাশের দোকানে দুধ আনার কথা বলে নিয়ে যান। কিন্তু দোকানে না গিয়ে উত্তর বালুচর আল ইসলাম পুরাতন ক্লাব মাঠে আলমগীরকে শ্বাসরোধে হত্যা করে হত্যার পর মরদেহ মাঠে ফেলে আসেন চান মিয়া।
এদিকে, নিহতের মা বিলকিছ বেগম শিশু আলমগীরকে না পেয়ে সম্ভব্য সকল স্থানে খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন। পরদিন ১ সেপ্টেম্বর সকাল ৮ টার দিকে উত্তর বালুচর আল-ইসলাহ পুরান ক্লাব মাঠে শিশু আলমগীরের মরদেহ দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা থানায় খবর দেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে।
এ ঘটনায় বিলকিছ বেগম বাদি হয়ে তার দ্বিতীয় স্বামী চান মিয়াকে অভিযুক্ত করে কোতোয়ালী মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা (৩(৯)’১০) দায়ের করেন।
দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০১১ সালের ১৮ জানুয়ারী তৎকালীন কোতোয়ালী থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) মো. আব্দুর রহিম একমাত্র চান মিয়াকে অভিযুক্ত করে আদালতে মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র নং-৩২) দাখিল করেন। ২০১২ সালের ২ অক্টোবর আসামী চান মিয়ার বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে আদালতে এ মামলার বিচারকার্য্য শুরু হয়।
দীর্ঘ শুনানী ও ১১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালতের বিচারক আসামী চান মিয়াকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ২০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো ৬ মাসের বিনরাশ্রমে কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেন।
এছাড়া ২০১ ধারায় ২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ২ মাসের বিনাশ্রমে কারাদণ্ডে দন্ডিত করেন।
মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন স্পেশাল পিপি অ্যাডভোকেট মোঃ ফখরুল ইসলাম ও আসামীপক্ষে ষ্টেইট ডিফেন্স অ্যাডভোকেট মো. আমিনুল ইসলাম।