আপনার হৃদযন্ত্র (হার্ট)-এর ঝুঁকিগুলো জেনে নিন

আপনার হৃদযন্ত্র (হার্ট)-এর ঝুঁকিগুলো জেনে নিন

নিজেকে অনেক প্রাণোচ্ছল ও সুস্থ্য ভাবতেন সারাহ। বুকের ব্যাথা নিয়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সেই ভাবনায় কখনো ছেদ পড়েনি তাঁর।

”ডাক্তার বললেন, ‘আপনার হার্ট অ্যাটাক (হৃদযন্ত্র আক্রান্ত) হয়েছিল।‘ কিন্তু আমি অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়েছিলাম”, বললেন সারাহ।

সারাহ যোগ করলেন, “আমি জানতাম, আমার পরিবারে হার্ট অ্যাটাকের ইতিহাস রয়েছে। কিন্তু আমি স্বপ্নেও ভাবিনি যে, সেটা আমারও হবে। আমার বয়স ছিল ৪৬। আমার  কখনোই উচ্চ রক্তচাপ ধরা পড়েনি, কখনো ধূমপান করিনি, আর আমি সচারচর অ্যালকোহোল পান করি না।

এসব কারণে আমি ভেবেছিলাম, আমি ভালো অবস্থায় আছি। আসলে, আমি সর্বদাই ভালো অনুভব করেছি বলে, ধরে নিয়েছিলাম আমি ভালো আছি।”

ডাক্তার মোহিত মান্দিরত্তা বলছেন, সারাহ এ ক্ষেত্রে একা নন। এটা চিন্তা করা খুবই সহজ যে, হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক হয় কেবল অন্যদের। “কিন্তু এটা আমার-আপনার যে কারওরই হতে পারে। তাই এ সংক্রান্ত বিভিন্ন ধরণের ঝুঁকির বিষয়গুলো আমাদের জেনে রাখাটা জরুরি” বললেন মিডল্যান্ডস এলাকার এই জিপি।

ডাক্তার ক্রিস ওলুকান্নি এসেক্সের থরক এলাকার একজন জিপি, যিনি কার্ডিওভাস্কুলার হেলথ বিষয়ের বিশেষজ্ঞ। তিনি যোগ করলেন: “আপনি এ ধরণের ঝুঁকি কমাতে অনেক কিছুই করতে পারেন। সেগুলো জানিয়ে দেওয়ার জন্য আমরা প্রস্তুত আছি। প্রয়োজনের সময় আপনি কোথা থেকে সাহায্য নেবেন, সে বিষয়ে আমরাই আপনাকে জানিয়ে দেব।”

আপনার হৃদযন্ত্রের যত্ন নেওয়ার জন্য সাতটি পদক্ষেপ

১. প্রতিদিন শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকুন। প্রতি সপ্তাহে ১৫০ মিনিট মাঝারি ধরণের শারীরিক কর্মকাণ্ড (আপনার শ্বাস-প্রশ্বাস বাড়ানোর জন্য) বা ৭৫ মিনিট জোরালো ধরণের শরীরচর্চা করুন।

২. সুষম খাবার গ্রহণের মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা। বিনামূল্যে এনএইচএস ডিজিটাল ওজন ব্যবস্থাপনা প্রোগ্রাম অতিরিক্ত ওজনের অর্থাৎ স্থূলকায় ব্যক্তি যাদের ডায়াবেটিস এবং/অথবা উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে তাদেরকে সহায়তা দিয়ে থাকে।

৩. ধূমপান করবেন না। সব ধরনের তামাক (চিবানোর তামাক এবং শিশাসহ) আপনার ক্যান্সার এবং কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। এ ব্যাপারে আপনার স্থানীয় ধূমপান বন্ধ করার পরিষেবা থেকে বিনামূল্যে পরামর্শ নিন।

৪. আপনার মদপানের মাত্রা (অ্যালকোহল) কমান । দীর্ঘমেয়াদে অতিমাত্রায় মদ্যপানের ফলে আপনার হৃদপিণ্ড বড় হয়ে যেতে পারে।

৫. সুরক্ষা নিন – যারা বিনামূল্যে এনএইচএস টিকা পাবার উপযুক্ত তাদেরকে রুবেলা এবং ফ্লুর মতো অসুস্থতা যা হার্টের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে তা থেকে ভ্যাকসিন সুরক্ষা  দেয় ।

৬. ভাল থাকুন – NHS স্ক্রীনিং, ৪০-৭৪ বছর বয়সীদের জন্য NHS স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং দীর্ঘমেয়াদী অসুস্থতার কারণে রুটিন অ্যাপয়েন্টমেন্টে আপনি উপস্থিত থাকলে, সমস্যাগুলি আরও ভালভাবে চিহ্নিত করা যায় এবং দ্রুত চিকিৎসা  করা যায়।

৭. সুপারিশ মতো  ওষুধ সেবন করুন। আপনার ফার্মাসিস্ট আপনাকে আপনার ওষুধপত্র ব্যবস্থাপনা  করতে এবং প্রেসক্রিপশন খরচের জন্য সাহায্য পাওয়ার বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করতে পারেন।

কার্ডিওভাস্কুলার রোগ কী?

ডাক্তার ওলুকান্নি বিষয়টার ব্যাখা দিতে গিয়ে বলেন, কার্ডিওভাস্কুলার রোগ সিভিডি নামে পরিচিত। এটা এমন এক স্বাস্থ্যগত সমস্যা যা হৃদযন্ত্র বা রক্তনালীকে প্রভাবিত করে। যেমন স্ট্রোক, ভাস্কুলার ডিমেনশিয়া ও হৃদরোগ।

তিনি বলেন, “বিশ্বব্যাপী অকালমৃত্যু ও বিকলাঙ্গতার জন্য অন্যতম বড় কারণ হচ্ছে কার্ডিওভাস্কুলার রোগ। কোনো ধরণের উপসর্গ ছাড়াই এই রোগ হতে পারে, যেটা ঘটেছে সারাহর ক্ষেত্রে। হতে পারে, আপনার অসুস্থতার প্রথম লক্ষণটাই হচ্ছে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক।

করোনারি হার্ট ডিজিজ হচ্ছে একধরণের কার্ডিওভাস্কুলার রোগ, যেখানে হৃদযন্ত্রে রক্তের প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায় বা কমে যায়। সাধারণত, আমাদের দেহের ধমনি বা শিরায় চরবি জমে সেগুলো সংকীর্ণ হয়ে যাওয়ার ফলে এটা ঘটে। এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় আথারোস্কেলারোসিস, যা রূপ নিতে পারে এন্জাইনা, হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকে

ঝুঁকি বলতে আমরা কী বোঝাই?

ডাক্তার মান্দিরত্তা বিষয়টার ব্যাখ্যা করে বলছেন, আমাদের কার্ডিওভাস্কুলার রোগ (সিভিডি) হওয়ার ঝুঁকি কতটা, তা নির্ভর করে আমাদের জীবনযাত্রাসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পছন্দ-অপছন্দের ওপরে।

ধূমপান, খুব বেশি অ্যালকোহোল পান, শারীরিকভাবে যথেষ্ট সক্রিয় না থাকা বা দেহের মাত্রাতিরিক্ত ওজন- এগুলোর সবই  দেহের ধমনি বা শিরায় চর্বি জমে সেগুলো সংকীর্ণ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি ত্বরান্বিত অর্থাৎ দ্রুত করে। এর ফলে উচ্চ রক্তচাপের মতো বাড়তি কিছু সমস্যাও দেখা দিতে পারে। পরিণামে আমাদের দেহের স্বাভাবিক কর্মপ্রক্রিয়া ব্যহত হতে পারে।

ঝুঁকির বিষয়গুলোর মধ্যে অন্তর্ভূক্ত হতে পারে সেসবও যা আমরা জানতে পেরেছি সবচেয়ে প্রভাবিত মানুষদের সম্বন্ধে এবং তাঁরা সাধারণত কী কী বিষয়ে মিল রয়েছে। যেমন, তাঁদের জাতীয়তা, বয়স বা যেখানে তাঁরা বাস করেন।”

“আপনি যদি কৃষ্ণাঙ্গ, এশীয় বা এমন কোনো সংখ্যালঘু জাতিগত সম্প্রদায়ের সদস্য হন, তাহলে শ্বেতাঙ্গ সম্প্রদায়ের চেয়ে আপনার সিভিডি হওয়ার ঝুঁকি বেশি। আমাদের আরো কিছু স্বাস্থ্যগত সমস্যা থাকার আশংকা রয়েছে, যা অন্যান্য ঝুঁকি যেমন কিডনি রোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।

একজন মানুষের একাধিক ঝুঁকি থাকার বিষয়টি কখনোই অস্বাভাবিক নয়। এর মধ্যে কিছু ঝুঁকি কমানোর জন্য আমরা কিছু করতে পারি। কিন্তু কিছু ঝুঁকির বিষয়ে আমাদের কোনো হাত নেই। যেমন আমাদের বয়স বা জাতিগত পরিচয়।

আশার কথা হচ্ছে, বিষয়টি এমন  নয় যে, এটা যদি আপনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়ে থাকে, তাহলে আপনার অবশ্যই সিভিডি হবে। ইতিবাচক জীবনযাপন কমিয়ে দিতে পারে আপনার কার্ডিওভাস্কুলার রোগ। ভালোভাবে জীবনযাপনের জন্য উপদেশ ও সহায়তা নিন, কোনো ধরণের স্বাস্থ্যগত সমস্যা থাকলে তার সঠিক ব্যবস্থাপনা করুন। আবশ্যকীয় হলে এনএইচএস থেকে ফ্রি ভ্যাকসিন, স্ক্রিনিং ও স্বাস্থ্যগত পরীক্ষার সেবা নিন।”

আপনি কি এবিসি সম্বন্ধে জানেন?

ডাক্তার ওলুকান্নি ব্যাখ্যা করে বললেন, সিভিডির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ধরা হয় তিন ধরেণের স্বাস্থ্যগত অবস্থাকে, যাকে অনেকে এবিসি হিসেবে উল্লেখ করেন।

“যদিও এই স্বাস্থ্যগত অবস্থাগুলো চিকিৎসায় নিরাময়যোগ্য, তারপরও বহু মানুষ সমস্যাগুলো বিরাট আকার ধারণ করার আগ পর্যন্ত টেরই পান না।”

ক: আট্রিয়াল ফিব্রিলেশন (এএফ)। অনিয়মত হৃদস্পন্দন বা নাড়ির স্পন্দন (হার্ট বিট) ঘটায় এএফ। এটি স্ট্রোকের অন্যতম বড় কারণ। বয়স্ক মানুষদের মধ্যে বা হূদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, মাত্রাতিরিক্ত ওজন এবং হার্ট-ভাল্ব সমস্যা এ ধরণের স্বাস্থ্যগত সমস্যায় থাকা মানুষদের মধ্যে এটা সচারচর দেখা যায়।

ডাক্তার ওলুকান্নি বলেন: “কখনো কখনো এএফ-এর কোনো উপসর্গ থাকে না। তবে কিছু মানুষ মাথাঘোরা, ক্লান্তি, বুকে অস্বাভাবিক স্পন্দন বা হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া খুব বেশি বা কম হওয়ার মতো উপসর্গের কথা বলেন। আপনি কখোনো এ ধরণের উপসর্গ টের পেলে, আপনার নাড়ির স্পন্দন পরীক্ষা করে নেবেন এবং আপনার জিপি প্র্যাক্টিসের সঙ্গে কথা বলবেন। স্বাভাবিক নাড়ির স্পন্দন হচ্ছে প্রতি মিনিটে ৬০ থেকে ১০০।

খ: উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন: যুক্তরাজ্যে প্রতি চারজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মধ্যে একজন এই সমস্যায় ভুগছেন। এ দেশে যত মানুষের হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক হয়, তার অর্ধেকের জন্যই দায়ী করা হয় এই উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশনকে। উচ্চ রক্তচাপ থাকা মানুষজনের অর্ধেকই জানেন না, তাঁদের এই সমস্যা আছে। কারণ, এই সমস্যার কোনো উপসর্গ সাধারণত থাকে না।

ডাক্তার ওলুকান্নি যোগ করেন: “আপনি যদি কৃষ্ণাঙ্গ বা দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভুত হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার উচ্চ রক্তচাপ সমস্যা থাকার ঝুঁকি অনেক বেশি। এ ক্ষেত্রে রক্তচাপ পরীক্ষা করাই হচ্ছে সমস্যা আছে কি না- তা জানার একমাত্র উপায়।

গ:  উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল: এটা দেহের ধমনিতে আথেরোস্কেলেরোসি-এর মাধ্যমে রক্তপ্রবাহ আটকে দিতে পারে।

“উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল সাধারণত হয়ে থাকে আমাদের জীবনাচারণের কারণে”, বলছিলেন ডাক্তার ওলুকান্নি। “তবে বংশগত কারণেও এটা হতে পারে। অতীতে পরিবারের কারও এই সমস্যা থাকলে, তা জিনগতভাবে পরের প্রজন্মে স্থানান্তরিত হতে পারে। এর ফলে যে স্বাস্থ্যগত সমস্যা হয়, তাকে বলা হয় ফ্যামিলিয়াল হাইপারকোলেস্টেরলামিয়া সংক্ষেপে এফএইচ। এর ফলে চরম মাত্রার কোলেস্টেরল হতে পারে,” বিষয়টার ব্যাখ্যা করে জানালেন এই চিকিৎসক। তিনি জানান, কোলেস্টেরল মাত্রা জানার একমাত্র উপায় হচ্ছে রক্ত পরীক্ষা বা ফিঙ্গার প্রিক টেস্ট।

আপনার পারিবারিক ইতিহাস থেকে সমস্যার সূত্র খুঁজুন

ইয়র্কশায়ারে একজন এনএইচএস ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেন সারাহ। জানতেনই না যে, তিনি বংশগতভাবে পেয়েছেন উচ্চমাত্রার লিপপ্রোটিন (এ) বা এলপি (এ)। এটা এমন এক ফ্যাটি প্রোটিন যা রক্তে কোরেস্টেরল বহন করে। হার্ট অ্যাটাক করার পর পর্যন্ত এই কোলেস্টেরল ছিল সারাহর দেহে। কিছু মানুষের দেহে এটার পরিমাণ থাকে কম মাত্রায়। কিন্তু সারাহর মতো কিছু মানুষ জন্মই নেন উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল নিয়ে যা তাদের ধমনিতে রক্তপ্রবাহ বন্ধ করে দিতে পারে।

“সমস্যার সূত্র ছিল আমার পারিবারিক ইতিহাসেই। কিন্তু আমি কখনোই কাউকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করিনি“, বলছিলেন সারাহ, “আমার খুব মনে আছে আমন্ত্রণ পেয়েও আমি এনএইচএস হেলথ চেক করাইনি। হাসপাতাল থেকে পরীক্ষা করার আগ পর্যন্ত আমার কোলেস্টেরল মাত্রা জানতাম না। আমি যদি আমার ঝুঁকির বিষয়গুলো ভালোভাবে জানতাম, আমি সেগুলো কমাতে কিছু একটা করতে পারতাম।”

ডাক্তার মান্দারিত্তা বলছেন, আপনার পরিবারের অন্যদের স্বাস্থ্যগত ইতিহাসগুলা আপনার জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বটে। “রোগীরা প্রায়ই অবাক হন. যখন আমি তাঁদের পারিবারিক ইতিহাস জানতে চাই। কিন্তু এই বিষয়টাই আমাকে বুঝতে সহায়তা করে তাঁদের মারাত্মক অসুস্থ্যতার ঝুঁকিগুলোকে। যেমন, রক্তের সম্পর্ক থাকা একজন নিকটাত্মীয়র যদি উচ্চ রক্তচাপ থাকে, তাহলে আপনারও এই সমস্য হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। অথবা আপনার বাবা, মা, বোন বা ভাইয়ের যদি অতীতে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক হয়ে থাকে (পুরুষের ক্ষেত্রে ৬০ বছর আর নারীর ক্ষেত্রে ৬৫ বছরের আগে), তাহলে আপনারও স্ট্রোক হতে পারে। তবে বিষয়টা এমন নয় যে, আপনার জন্য এটা অনিবার্য।”

আপনি যদি এ ধরণের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির বিষয়ে সতর্ক থাকেন, তাহলে আপনি তা প্রতিরোধ করার একটা সুযোগ পাবেন বা এর উপসর্গর দিকে চোখ রাখতে পারবেন। আপনি বড় ধরণের কার্ডিয়াক (হার্ট) সমস্যা বা স্ট্রোক সমস্যায় পড়ার আগেই তা শনাক্ত ও চিকিৎসা করতে পারবেন।”

আমি কীভাবে ঝুঁকিগুলো শনাক্ত করবো?

ডাক্তার ওলুকান্নি ব্যাখ্যা করে বলেন, আপনার যদি করোনারি হার্ট ডিজিজ বা অন্যান্য স্বাস্থ্যগত সমস্যার পারিবারিক ইতিহাস থেকে থাকে, তাহলে জিপি প্র্যাকটিস হয়তো আপনার কোলেস্টেরল বা রক্তচাপ নিময়মিত পরীক্ষা করতে চাইবে। তারা বাড়তি অনেক রক্ত পরীক্ষার অনুরোধও করতে পারে, যাতে করে বংশগত স্বাস্থ্যগত সমস্যা নির্ণয় করতে পারে।

“৪০ বা তার বেশি বয়সী সবাইকে একটি ফ্রি এনএইচএস হেলথ চেক প্রতি পাঁচ বছর অন্তর করানোর বিষয়ে আমি সবাইকে পরামর্শ দেই। এই পরীক্ষা করানো যেতে পারে নিজ নিজ জিপি প্র্যাকটিস, স্থানীয় কাউন্সিল বা কিছু ফার্মেসী থেকে। এর ফলে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের লক্ষণ আগেভাগেই শনাক্ত করা যায়। পাশাপাশি কিডনি রোগ, ডিমেনশিয়া এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিসও এভাবে শনাক্ত করা যায়।

অনেক ফার্মেসী ফ্রি রক্তচাপ পরীক্ষার ‍সুযোগ দিয়ে থাকে। পাশাপাশি তারা ধূমপান ছাড়া ও অ্যালকোহোল সেবনের পরিমাণ কমানোর বিষয়ে কার্যকর পরামর্শ দিয়ে থাকে। আপনি এনএইচএস ওয়েবসাইট থেকে আপনার স্থানীয় ফার্মেসীর ঠিকানা ও তারা কী কী সেবা দিয়ে থাকে, সেই তথ্য জেনে নিতে পারেন।

স্ক্রিনিং সম্বন্ধে কিছু তথ্য

কার্ডওভাসকুলার রোগ স্ক্রিনিং করে না এনএইচএস। তবে তারা পুরুষের অ্যাবডোমিনাল অ্যারোটিক অ্যানিউরিজমস-এর (এএএ) স্কিনিং সেবা দিয়ে থাকে। এগুলো হচ্ছে ধমনি ফুলে যাওয়া, যা মহাধমনি নামে পরিচিত। এই মহাধমনি রক্ত বহন করে হৃদযন্ত্র থেকে পেটে। এটা যদি ফেটে যায়, তাহলে শুরু হতে পারে প্রাণঘাতী রক্তক্ষরণ।

এএএ স্কিনিং স্ক্রিনিংয়ের সুযোগ দেওয়া হয় শুধু একবারই। বয়স ৬৫তে পড়ার পরই এই সুযোগ পেলে। এই প্রক্রিয়ায় থাকে পেটে খুব দ্রুত ও ব্যাথামুক্ত এক আলট্রাসাউন্ড স্ক্যান। এ ধরণের স্ক্যান সাধারণত করা হয়ে থাকে গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে।

ডাক্তার মানদিরাত্ত ব্যাখ্যা করে বলেন: “এএএ সাধারণত করা হয় ৬৫ বছরের বেশি বয়সী সেসব মানুষের, যাদের আছে উচ্চ রক্তচাপ বা উচ্চমাত্রার কোরেস্টেরল সমস্যা, যারা ধূমপান করেন বা অতীতে করতেন এবং আরও কিছু স্বাস্থ্যগত সমস্যা থাকা মানুষের, যেমন করোনারি হার্ট ডিজিজ। স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে এসব মানুষের মহাধমনি ফোলা কি না, তা এমন পর্যায়ে শনাক্ত করা যায়, যখন তা নিরাময়যোগ্য থাকে।“

“আপনি ওজন কমানোর মাধ্যমে, ধূমপান ছাড়ার মাধ্যমে, ব্যায়াম করার মাধ্যমে এবং স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণের মাধ্যমে আপনার বিভিন্ন জটিলতার ঝুঁকি কমাতে পারেন।”

বিনিয়োগ করুন স্বাস্থ্যে

“নিজের প্রতি যত্ন নিতে আমি এখন অনেক বেশি সময় দিই। সঙ্গে প্রতিদিন ওষুধ গ্রহণ করছি,” বলছিলেন সারাহ, “আমি এখন এমন খাবার অনেক বেশি গ্রহণ করছি যা আমার হৃদপিন্ড (হার্ট)-এর জন্য ভাল। আমার স্বাস্থ্যকেই সবার আগে রাখছি।”

“একবার হার্ট অ্যাটাক হওয়া মানে আমি আবার হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিতে আছি। নিজের প্রতি আমি এখন যত্ন নিচ্ছি মানে, যদি এমন কিছু ঘটে বা আমার যদি বাড়তি চিকিৎসার দরকার পড়ে, আমার সেটা নেওয়ার যথেষ্ট সুযোগ থাকছে এবং আমি দ্রুত সেরে উঠতে পারবো।”

ডাক্তার ওলুকান্নির মতে, “কেউ আমাদের কাছে উপদেশ নিতে আসার আগে কোনো একটা স্বাস্থ্যগত সমস্যায় পড়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুক, সেটা আমরা চাই না “ তিনি বলেন, “সারাহর মতো আপনিও আপনার নিজের সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণে একটা বৃহৎ পার্থক্য গড়ে তুলতে পারেন। সেটা করতে পারেন জীবনযাপনে আপনার সঠিক পছন্দগুলো বেছে নেওয়া ও সমস্যা আসার আগেই সক্রিয় হওয়ার মাধ্যমে। এমনকি আপনার যদি ইতিমধ্যেই কার্ডওভাসকুলার রোগ ধরা পড়ে থাকে, তবুও সেটা সম্ভব।

“অভ্যাস বদল করা খুবই কঠিন হতে পারে। কিন্তু এ থেকে আপনি যা অর্জন করবেন, তা হয়তো আপনার জীবন বদলে দেবে; এমনকি বাঁচিয়ে দিতে পারে আপনার জীবন।”