প্রধান উপদেষ্টার নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার পর রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিক্রিয়া

প্রধান উপদেষ্টার নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার পর রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিক্রিয়া

আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধে সাধারণ নির্বাচনের (পার্লামেন্ট নির্বাচন) ঘোষণা দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস। শুক্রবার (৬ জুন) সন্ধ্যা ৭টায় জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে তিনি এই ঘোষণা দেন।

প্রধান উপদেষ্টার নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার পর প্রতিক্রিয়া দিয়েছে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো। রোডম্যাপে বিএনপি অসন্তোষ প্রকাশ করলেও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সন্তোষ প্রকাশ করেছে। এছাড়া বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, আমার বাংলাদেশ- এবি পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, গণতন্ত্র মঞ্চ, নাগরিক ঐক্য, গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি), জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ইতিবাচক হিসেবে দেখছে নির্বাচনী এ রোডম্যপকে। আগামী বছর এপ্রিলের প্রথমার্ধের যেকোনো সময় ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে পারে।

এদিকে বিএনপিসহ বেশিভাগ দল চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্য নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছিল। প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে এপ্রিলের নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা নিয়ে বিএনপিসহ জাতির প্রত্যাশা পূরণ হয়নি বলে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ।

বিএনপির প্রতিক্রিয়া

শুক্রবার রাতে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের পর এক প্রতিক্রিয়া দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, বিএনপিসহ ৫০ -এর অধিক দল ডিসেম্বরের মধ্য নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে। ডিসেম্বরে নির্বাচন আয়োজনের জন্য আমরা যোক্তিকভাবে আমাদের বক্তব্য দিয়ে আসছি। তিনি বিষয়টি আমলে নেননি।

এপ্রিলে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার সমালোচনা করে তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা এমন সময়ে নির্বাচনের আয়োজনের কথা বলেছে ওই সময়ে অনেকগুলো পাবলিক পরীক্ষা থাকে, আবহাওয়া সঠিক থাকে না। আমাদের জানামতে ফেব্রুয়ারির ১৬ অথবা ১৮ তারিখের দিকে পবিত্র রমজান শুরু হবে। তাহলে ঈদ হবে মার্চের মাসে শেষার্ধে। নির্বাচন তফশিল ঘোষণা ক্যাম্পেইনের জন্য যে ৪৫ দিন সময় প্রয়োজন। সেটা তাহলে রমজানের মধ্য পড়ে যাবে। এটা একটা অযোক্তিক সময়। দ্বিতীয়ত, ওই সময় এইচএসসি ও এসএসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ডিসেম্বরে নির্বাচন না হলে খুব বেশি হলে জানুয়ারি মাসে নির্বাচন হতে পারতো। হয়তো এটা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হতো। কিন্তু তিনি সেটা আমলে নেননি। এছাড়া এপ্রিলে নির্বাচন হলে এক মাসের মধ্য পরবর্তী অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করতে হবে যা অনেক কঠিন। কারণ আমাদের অনেক বেশি পরিকল্পনা রয়েছে।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রতিক্রিয়া

প্রধান উপদেষ্টা ৬ জুন সন্ধ্যা ৭টায় জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান এক বিবৃতি প্রদান করেছেন।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘অন্তর্বতীকালীন সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মাদ ইউনূস ৬ জুন সন্ধ্যা ৭টায় জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণে বলেছেন, ‘ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধের যেকোনো একটি দিনে অনুষ্ঠিত হবে।’ তার এই ঘোষণায় জাতি আশ্বস্ত হয়েছে এবং ঘোষিত সময়ের মধ্যেই একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে জাতি আশা প্রকাশ করছে।

তিনি আরো বলেন, জাতির তীব্র আকাঙ্ক্ষা সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন এই ৩টি বিষয়ের ভিত্তিতে এবং ‘জুলাই সনদ’ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশকে একটি সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হবেন।’

জাতীয় নাগরিক পার্টি’র (এনসিপি) প্রতিক্রিয়া

আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে- অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের এমন ঘোষণার পর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।

দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ঘোষিত সময়ের মধ্যে যদি ‘জুলাই সনদ’, ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ ও গৃহীত সংস্কার বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়, তাহলে ওই সময়ে নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে তাদের কোনো আপত্তি নেই।

শুক্রবার (৬ জুন) সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম, ‘জুলাই সনদ’ ও ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’- এর আনুষ্ঠানিকতা শেষে নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য আসবে। তারপরও যদি ঘোষিত সময়সীমার মধ্যেই এসব বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়, তাহলে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।’

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া তরুণদের উদ্যোগে গঠিত রাজনৈতিক দল এনসিপি শুরু থেকেই জাতীয় নির্বাচনের পাশাপাশি গণপরিষদ নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে।

তাদের রাজনৈতিক এজেন্ডায় রয়েছে- স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে সম্পন্ন করার প্রস্তাব, পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠনের দাবি। জুলাই অভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগের বিচার এবং রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কারকেই তারা নিজেদের প্রধান রাজনৈতিক অগ্রাধিকার হিসেবে তুলে ধরছে।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস প্রতিক্রিয়া

২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সীমা ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। দলটি মনে করে, শুধু সময়সূচি নির্ধারণ যথেষ্ট নয়; একটি কার্যকর, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে হলে এখনই প্রয়োজন সর্বাত্মক প্রস্তুতি, রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও ন্যায্য পরিবেশের বাস্তব নিশ্চয়তা।

শুক্রবার (৬ জুন) এক যৌথ বিবৃতিতে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক, সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ এবং মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ এ মন্তব্য করেন।

এতে তারা বলেন, জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস নির্বাচন বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও প্রত্যাশিত বার্তা উপস্থাপন করেছেন। আমাদের মতে নির্বাচন ফেব্রুয়ারির মধ্যে হলে ভালো হতো, তবুও আমরা সুনির্দিষ্ট সময়সীমা ঘোষণাকে স্বাগত জানাই। তবে শুধু তারিখ ঘোষণা করলেই একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত হয় না। এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো- নির্বাচনী পরিবেশকে পেশিশক্তিমুক্ত, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এবং সকলের জন্য সমান সুযোগসম্পন্ন করে তোলা।

নেতৃবৃন্দ বলেন, ইতিহাসে সবচেয়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের যে অঙ্গীকার উচ্চারিত হয়েছে, তা বাস্তবায়নের একমাত্র পথ হলো জনগণের সর্বাত্মক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরপেক্ষতা বজায় রাখা, নির্বাচন কমিশনের সাহসী ও স্বাধীন ভূমিকা, গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের অবাধ পর্যবেক্ষণ নিশ্চিত করা।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে তিনটি মৌলিক শর্ত পূরণ অপরিহার্য- ১. নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ প্রশাসনিক কাঠামো। ২. ভোটাধিকার প্রয়োগে নিরাপদ ও সহনীয় পরিবেশ। ৩. রাজনৈতিক দলসমূহের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিতকরণ।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, একটি অংশগ্রহণমূলক ও অবাধ নির্বাচনই পারে দেশে গণতান্ত্রিক ধারার পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানিয়ে নেতৃবৃন্দ বলেন, আপনার সদিচ্ছাকে বাস্তব রূপ দিতে হলে এখনই প্রয়োজন- ফ্যাসিবাদী অপশক্তির বিরুদ্ধে চলমান বিচারিক কার্যক্রমে গ্রহণযোগ্য পর্যায়ের অগ্রগতি ও চলমান সংস্কার প্রক্রিয়াকে বেগবান ও কার্যকর করা।

পাশাপাশি ‘জুলাই-সনদ’ যথাসময়ে প্রকাশ ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা- আগামীর বাংলাদেশের গন্তব্য নির্ধারণ ও ফ্যাসিবাদ মোকাবিলার জন্য যা অত্যন্ত জরুরী।

এছাড়া সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক পক্ষগুলোর সাথে নিয়মিত ও অর্থবহ সংলাপের ধারা চালু রাখা ও নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক ও প্রশাসনিক কাঠামো গঠন করা জরুরি বলে জানিয়েছে দলটি।

বিবৃতির শেষাংশে নেতৃবৃন্দ বলেন, আমরা আল্লাহ তায়ালার সাহায্য কামনা করি- দেশবাসী যেন একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে প্রকৃত জনমতের প্রতিফলন প্রত্যক্ষ করতে পারে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ (পীর সাহেব চরমোনাই) প্রতিক্রিয়া

নির্বাচনের সময় ঘোষণাসহ জুলাই অভ্যুত্থান স্বার্থক করতে সরকারের কর্মকাণ্ড তুলে ধরায় ডক্টর মুহাম্মাদ ইউনূসকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম, পীর সাহেব চরমোনাই।

আজ সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের প্রেক্ষিতে এক বিবৃতিতে বলেছেন, নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা আজকে এপ্রিল-২৬ এর প্রথমার্ধে নির্বাচনের সময় ঘোষণা করে সেই অস্থিরতা প্রশমিত করায় তাকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। একই সাথে বন্দর, মানবিক করিডোর নিয়ে সরকারের অবস্থান পরিষ্কার করে উদ্বেগ দূর করায় ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, রাষ্ট্রসংস্কারই ছিলে জুলাই অভ্যুত্থানের প্রধান লক্ষ এবং অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম কর্তব্য। সেই সংস্কার কাজের যে অগ্রগতির বিবরণ তিনি তুলে ধরেছেন তাতে আমরা আশান্বিত হয়েছি। আমরা প্রত্যাশা করি- তিনি ও তার সরকার সকল বাধা উপেক্ষা করে সংস্কারের কাজ শেষ করবেন। বিচারের ক্ষেত্রে যে অগ্রগতির বিবরণ দিয়েছেন তা জাতিকে আশ্বস্ত করেছে।

পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, কোরবানির চামড়া যা মূলত গরীবদের হক তা নিয়ে বিগত সরকার সীমাহীন জালিয়াতি করেছে। সরকার এই ক্ষেত্রে ইতিবাচক যেসব উদ্যোগ নিয়েছে বলে প্রধান উপদেষ্টা জানিয়েছেন, তা আশাব্যাঞ্জক। একই সাথে হজ নিয়ে গৃহিত পদক্ষেপের সুফল জাতি পেয়েছে।

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে এই সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা সাধুবাদ যোগ্য। অর্থনীতির সংস্কার এবং দেশকে সঠিক ধারায় উত্তরণে এই সরকারের যে প্রচেষ্টা প্রধান উপদেষ্টা তুলে ধরেছেন, তার প্রশংসা করতেই হবে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির বলেন, প্রধান উপদেষ্টা যথার্থই বলেছেন; দেশ যুদ্ধাবস্থায় আছে। নানামুখী চক্রান্ত ও অপপ্রচার দেশকে আষ্টেপৃষ্টে আঁকড়ে ধরছে। এমন পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সমর্থন ও সহযোগীতা দেশের স্বার্থেই আবশ্যক। নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চিয়তার কুয়াশা রাজনৈতিক অঙ্গনে ছিল তা আজকে কেটে গেছে। ফলে সংস্কার ও বিচারের কাজে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার যে আহ্বান তিনি করেছেন তাতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ বরাবরের মতো সাড়া দেবে।

এবি পার্টির বক্তব্য ও প্রতিক্রিয়া

‘এপ্রিলে নির্বাচনকে কিছুটা বিলম্বিত মনে করলেও সরকারের উপর আস্থা রাখতে চায় এবি পার্টি’

জাতির উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা আজ সন্ধ্যায় যে ভাষণ দিয়েছেন সে বিষয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)। দলের চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু ও সাধারণ সম্পাদক ব‍্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে বিচার, সংস্কার, নির্বাচন এবং সরকারের গৃহীত কার্যক্রম নিয়ে যে বক্তব্য রেখেছেন তা আমরা গভীর আগ্রহ নিয়ে অবলোকন করেছি। বেশ কিছুদিন ধরে আমরা সরকারের কাছে এ সকল বিষয়ে সুস্পষ্ট রূপরেখা প্রদানের আহ্বান জানিয়ে আসছিলাম। আজ তার প্রতিফলন ঘটায় প্রধান উপদেষ্টাকে ধন‍্যবাদ ও স্বাগত জানাচ্ছি।

তিনি এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচনের যে ঘোষণা দিয়েছেন তা আমাদের পূর্ববর্তী প্রস্তাব ও এ সংক্রান্ত পর্যালোচনার সাথে না মিললেও আমরা তার উপর আস্থা রাখতে চাই। আবহাওয়াজনিত কারণে এপ্রিল মাসে নির্বাচন অনুষ্ঠানে কিছু সমস‍্যা তৈরী হতে পারে বলে অনেকের আশঙ্কা। তবে প্রধান উপদেষ্টা যেহেতু সামগ্রিক প্রস্তুতির বিষয়ে আলোকপাত করেছেন এবং প্রাসঙ্গিকভাবে সময়ের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছেন তাতে আমরা উনার সরকারের প্রতি সহযোগিতামূলক মনোভাব বজায় রাখতে চাই। আমরা আশা করি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে সুষ্ঠু নির্বাচন উপযোগী করা ও নির্বাচন কমিশনকে জনগণের আস্থা অর্জনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন‍্য তার সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।

সংস্কার ও বিচারের একটা সন্তোষজনক অগ্রগতি এবং নির্বাচনের পরিবেশ তৈরীর জন্য এপ্রিল পর্যন্ত সময়টা আপাত দৃষ্টিতে বিলম্বিত মনে হলেও সকল পক্ষের এ ব‍্যপারে ঐকমত‍্য প্রয়োজন। আশা করি সরকার ও সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষ ত‍্যাগের মনোভাব দেখিয়ে এ ব্যাপারে একটি ঐকমত্যে পৌঁছাতে সচেষ্ট হবেন।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রতিক্রিয়া

অন্তবর্তী সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার জাতির উদ্দেশে আজকের ভাষণ আমরা মনোযোগের সাথে শুনেছি। গণঅভ্যুত্থানের জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করার জন্য আমরা শুরু থেকেই বলে এসেছি, বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে সরকারের সুস্পষ্ট পরিকল্পনা ঘোষণা করা দরকার। এই তিনটি বিষয়ে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপের প্রয়োজনীয়তার কথা সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে বারবার বলা হয়েছে। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার আজকের ভাষণে এর প্রতিফলন ছিল সেটা ইতিবাচক। তবে অধিকাংশ রাজনৈতিক দলই চলতি বছরের ডিসেম্বরে নির্বাচন দেয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছিল। আমরা এটাও বলেছিলাম, ডিসেম্বরে নির্বাচন দিতে না পারলে তার কারণ সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট হওয়া দরকার। প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের সময় হিসেবে এপ্রিলের প্রথমার্ধের কথা উল্লেখ করেছেন, যে সময়টি, প্রতিকূল আবহাওয়া, পাবলিক পরীক্ষা এবং এর আগে রোজার কারণে, সবমিলিয়ে নির্বাচনের জন্য কতটা অনুকূল ও বাস্তবসম্মত হবে- সে ব্যাপারে আশঙ্কা রয়েছে। এ বিষয়ে অংশীজনদের সাথে আরো আলোচনা ইতিবাচক হবে বলে আমরা মনে করি।

পাশাপাশি, সংবিধান সংস্কারে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য ও এই সংস্কারকে সুরক্ষিত করার জন্য আমরা আগামী নির্বাচনকে ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদ’-এর নির্বাচন হিসেবে সম্পন্ন করার আহ্বান জানিয়েছিলাম। প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে এ বিষয়ে কোনো দিকনির্দেশনা আসেনি।

বন্দর বিদেশীদেরকে দেয়ার ব্যাপারে নানা মহলের প্রশ্ন ও সমালোচনা আছে। কিন্তু সেটাকে অপপ্রচার বলে 'প্রতিহত' করার জন্য যে আহ্বান প্রধান উপদেষ্টা জানিয়েছেন, সেটা তার কাছ থেকে কাম্য নয়। সরকারের বরং এই ইস্যু নিয়ে সকল অংশীজনদের সাথে আলোচনা করা দরকার।

গণতন্ত্র মঞ্চের প্রতিক্রিয়া

আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য নিয়ে জোটের বৈঠক করে প্রতিক্রিয়া জানাবে বিএনপির ফ্যাসিবাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের প্রধান শরীক জোট গণতন্ত্র মঞ্চ।

শুক্রবার রাতে জোটটির সমন্বয়ক ও ভাসানী জনশক্তি পার্টির প্রধান রফিকুল ইসলাম বাবলু এ কথা জানান। তবে তিনি তার দলের প্রধান হিসাবে প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আমাদের দাবি ছিল ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন। প্রধান উপদেষ্টা বলছেন, এপ্রিলের প্রথম দিকের কথা। ভালো হতো যদি নির্বাচনটা ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে হতো। তবে প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণায় নির্বাচনের শিডিউল নিয়ে যে টেনশন চলছিল তা থেকে জাতি মুক্তি পেল। নির্বাচন হওয়াটা খুব প্রয়োজন।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নার প্রতিক্রিয়া

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী বছরের এপ্রিল মাসের প্রথমার্ধের যেকোনো দিন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তবে ওই সময় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে কিছুটা সংশয় প্রকাশ করেছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। তারপরও তিনি মনে করেন, এ ঘোষণার ফলে একটা বড় টেনশন দূর হলো।

শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে ঘোষিত নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‍‌‍‍‌‌‌‌‌‌‍‍‍‍'একটা বড় টেনশন দূর হলো বলে আমি মনে করি। ডিসেম্বর নিয়ে সবার মধ্যে একটা সংশয় তৈরি হয়েছিল। সেইটাকে একটা মাঝামাঝি জায়গায় আনা গেছে।'

তবে তিনি প্রশ্ন তোলেন, এটা (নির্বাচন) যদি আমি এপ্রিলের প্রথমার্ধেই করতে পারি, তাহলে মার্চের বা ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে করতে অসুবিধা কী?

মান্না আরো বলেন, প্রধান উপদেষ্টা মার্চ মাসে রোজার মধ্যে সংস্কার- সংক্রান্ত সংলাপ বা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার কথা বলেছেন। এই প্রক্রিয়া সফল হবে কি না, সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ‘আমি মনে করি, নির্বাচন হচ্ছে এবং নির্বাচনপ্রক্রিয়া নসাৎ করে দেয়ার মতো ঘটনা ঘটবে না।’

গণঅধিকার পরিষদের (জিওপি) প্রতিক্রিয়া

গণ অধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদ সদস্য ও গণমাধ্যম সমন্বয়ক আবু হানিফ বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের ৯ মাস পেরিয়ে গেলেও সরকার যে সংস্কারের কথা বলছে, তার কোনো দৃশ্যমান অগ্রতি দেখা যায়নি। রাজনীতিক দলগুলোর দাবির প্রেক্ষিতে দৃশ্যত নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়নি। তবুও প্রধান উপদেষ্টার নির্বাচনী এ রোডম্যাপকে ইতিবাচক হিসেবেই আমরা দেখছি। ডিসেম্বর বা জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন দিলে বেটার হতো। যেহেতু, এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচনী রোডম্যাপ দিয়েছে এজন্য আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানাই।