মধ্যপ্রাচ্য থেকে নিঃশ্ব হয়ে ফিরছেন হাওর পাড়ের নারীরা

একটু সুখের আশায় আর সংসারের হাল ধরতে পরিবার পরিজনের মায়া ছেড়ে বিদেশ পাড়ি দেয়া সুনামগঞ্জের নারীরা ফিরছেন শূন্য হাতে। তাদের মুখে শুধুই ফেলে আশা দিনের করুন কাহিনী আর আর্তনাদ।
শুধু শূন্য হাতেই নয় শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়ে অনেকেই এখন অসুস্থ হয়ে আছেন নিজ বাড়িতেই, অনেকেই অর্থের অভাবে চিকিৎসাও নিতে পারছেননা। আবার ফেরত আসা অনেক নারীরাই এখন কৃষি কাজে আর সংসার সামলাচ্ছেন।
এসব নারীরা জমিজমা বিক্রি করে কেউবা ব্যাংক লোন নিয়ে কেউবা চড়া সুধে টাকা নিয়ে বিদেশে গিয়েছিলেন বেশি টাকা উপার্জন করার আশায়। কিন্তু সেখানে গিয়েও উপন করতে না পারায় তারা এখন নিঃস্ব। আবার বাড়ি ফিরে দেখেন কষ্টের পাঠানো টাকাও আত্মসাৎ করছে ভাই বোন সহ পরিবারের সদস্যরা। ফেরত আসা বেশির ভাগ নারীরাই মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা।
জীবন জীবিকার অন্বেষনে সৌদি আরবে যাওয়া এমনি একজন জেসমিন বেগম (২৭)। বৃহস্পতিবার বিকেলে শনি হাওর পাড়ে তার নিজ বাড়িতে কথা হয় জেসমিনের সাথে।
তিনি জানান, স্বামী সংসারী না হওয়ায় নিজেই গিয়েছিলেন টাকা দেনা করে। কিন্তু হলো না টাকা উপার্জন। শূন্য হাতেই ফিরেছেন নিজ জন্ম ভূমির মাটিতে পরিবারের পরিজনের কাছে।
তার রয়েছে তিন ছেলে। বড় ছেলে ইয়াসিন মিয়া (১৯) বিয়ে করে সবাইকে ফেলে চলে গেছে। আর ২য় ছেলে সংসারের হাল ধরতে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখা পড়া করে আর প্রাইমারি স্কুলে ঘন্ডি পার হতে পারে নি সুহেল মিয়া (১৪) এখন টমটম চালাক। তৃতীয় ছেলে সুমন মিয়া (৯) ৫ম শ্রেণির।
তিনি জানান, ২০১৭ সালের দিকে তিনি ধার দেনা করে প্রায় দুই লাখ টাকা খরচ করে গিয়েছিলেন সৌদি আরবের আলকাসিম মিচকিন। সেখানে এক শেখের বাড়িতে পরিছন্নতা কর্মী হিসাবে কাজ করতাম। তারা পরিবারে লোকজন ছিল ১০-১২ জন। তাদের সবার খাবার রান্না করা কাপড় পরিস্কার করার কাজ করতাম। কাজ করার পর মাত্র দু থেকে তিন ঘন্টা বিশ্রাম পেতাম। তাদের কাজের পর তারা আবার অন্যের বাড়িতেও কাজ করাত কিন্তু টাকা দিত এক বারে কম। ৮ শত সৌদির টাকা। তারা কাজের নির্যাতন ও খাবারের নির্যাতন করত। যে কষ্ট তা বলে বুজানোর মত না। তাই দেশে চলে এসেছি গত বন্যার পূর্বে। আমি চাই না আমার মত কেউ এই ভাবে কষ্ট করুক। কিন্তু দেশে এসেও শান্তি নাই তিন বছর সৌদি থেকে যে টাকা পাঠিয়েছি সেই টাকাও যাদের মাধ্যমে পাঠিয়েছি তাও আমার পরিবারের সদস্যরাও হিসাব দেয়নি তাই কষ্ট টা আরও বেড়ে গেছে।
এখন শরীল ও মানে কষ্ট করতে হাতে সমস্যা হয় তাই মেজ ছেলে টমটম চালিয়ে সংসার চালায়। আমি এখন কিছুই করতে পারি না।
শুধু জেসমিন বেগমেই নয় জেলার সদর উপজেলা গৌরারং ইউনিয়নের উত্তর শ্রী গ্রামের বাসিন্দা জাহানারা বেগম। তিনি ২০২২ সালে গিয়ে ছিলে সৌদি আরব। সেখানে গিয়ে কাজ করেন এক শেখের বাড়িতে। কিন্তু ঐ বাড়ির মালিক ও তার ৭ মেয়েসহ পরিবারের লোকজন ভাল ব্যবহার করত না শারীরিক মানসিক নির্যাতন করত। পরে মালিকের মেয়ে তার ৩ লাখ টাকা রেখে জোর করে রেখে দেয়। এনিয়ে ঝগড়া করে দেশে চলে আসেন তিনি।
সাদেক আলী, জহিরুল হকসহ সচেতন মহল বলছেন মধ্যপ্রাচ্যে গিয়ে কোনো নারীই সফল হতে পারেনি। তারা নানান ভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। পরে বাধ্য হয়ে দেশে ফিরে আসছেন। অনেকেই নানান ভাবে নির্যাতনের শিকারের কথা প্রকাশ করেছেন না লজ্জায়। তবে সরকারী ভাবে এই সব নারীদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সাবলম্বী করা প্রয়োজন।
সুনামগঞ্জ জেলা মহিলা পরিষদের সভাপতি গৌরী ভট্টাচার্য বলেন, বিভিন্ন ভাবে নারীরা বিদেশে গিয়ে প্রতারনার শিকার হয়ে দেশে ফিরে এসেছেন। আমরা সরকারের কাছে দাবী জানাি তাদের কে আর্তীক সহায়তার পাশা পাশি জীবিকার তাগিদে ব্যবস্থা গ্রহণ করার।
গেল ৮ মাসে সুনামগঞ্জের প্রায় ৮ হাজারের অধিক প্রবাসরা দেশে ফিরেছেন বলে জানিয়েছেন সুনামগঞ্জ ওয়েলফেয়ার সেন্টার এর সহকারী পরিচালক গাজী নাজমুল ইসলাম।
তিনি জানান, যারা প্রবাস ফেরত তাদেরকে আমরা বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সাবলম্বী করার জন্য কাজ করছি। তাদের এক কালিন ১৩হাজার ৫ শত টাকা দেয়া হচ্ছে যাতে করে তারা প্রাথমিক ভাবে নিজেদেরকে গোছাতে পারে।