সৌদি বাদশাহর কাছে বাংলাদেশি ভ্যানচালকের চিঠি, অতঃপর...
মুসলমানদের জন্য পবিত্র ভূমি মক্কা। যেখানে একবারের জন্য হলেও যেতে চায় অধিকাংশরা। তবে অর্থের কারণে অনেকে যেতে পারেন না এই ভূমিতে। তেমনি একজন ভ্যানচালক আব্দুল সালাম। ঝিনাইদহ জেলায় ভ্যান চালানোর পাশাপাশি স্থানীয় একটি মসজিদে চার বছর ধরে মুয়াজ্জিনের দায়িত্ব পালন করেছেন। দীর্ঘদিনের ইচ্ছা ছিল মক্কা-মদিনায় যাবেন। ইবাদত করবেন। তবে আর্থিক সামর্থ্য না থাকায়, সেটা সম্ভব হচ্ছিল না।
কিন্তু তিনি থেমে থাকেননি। সাহস করে ইচ্ছা পূরণে সৌদি আরবের বাদশাহর কাছে চিঠি লিখেছিলেন। তার চিঠির জবাবও দিয়েছেন সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ। ঢাকায় সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলানের মাধ্যমে বর্তমানে সৌদিতে আছেন ভ্যানচালক আব্দুল সালাম।
আব্দুল সালাম গণমাধ্যমকে বলেন, আমি সৌদি আরবের বাদশাহর কাছে চিঠি লিখেছিলাম মক্কা ও মদিনাসহ পবিত্র স্থানগুলো দেখার জন্য। তারপর ঢাকায় সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলান আমাকে সৌদি আরব নিয়ে আসার ব্যবস্থা করেন।
স্বপ্ন পূরণ করার জন্য সৌদি বাদশার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন আব্দুল সালাম।
সৌদি আরবের ইসলাম ও দাওয়াহবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে গেস্ট অব কাস্টডিয়ান অব টু হলি মস্ক প্রোগ্রামের আওতায় বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদের আমন্ত্রণে সৌদিতে আছেন বাংলাদেশের ৩৪ সদস্যের প্রতিনিধি দল।
এই প্রতিনিধি দলের অন্যতম আব্দুল আজিজ। প্রতিনিধি দলে বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, শিক্ষক, সাংবাদিক, ছাত্র, আইমান সাদিক ও মুনজেরিন শহিদের মতো ইনফ্লুয়েন্সরা রয়েছেন। আইমান ও মুনজেরিন অনলাইনে ইংরেজি শিক্ষার মাধ্যম টেন মিনিট স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা। সৌদি বাদশাহর আমন্ত্রণে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা ওমরাহ পালন করবেন।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি (বুধবার) ঢাকায় সৌদি দূতাবাস এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাদের বিদায় জানায়।
এ সময় সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলান বলেন, ‘ এই বিষয়টিকে বিশ্ববাসীকে সেবা করার সুযোগ বলেই মনে করে সৌদিবাসী। এখন সৌদি-বাংলাদেশ সম্পর্ক কেবল কর্মী পাঠানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। ব্যবসা, খেলাধুলাসহ নানা খাতে দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করছে এবং যা সম্পর্ককে আরও গভীর করছে।’
গত ৩ জানুয়ারি সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ এক রাজকীয় নির্দেশনায় এ বছর বিশ্বের সব দেশ থেকে সর্বমোট এক হাজার মুসলিম ব্যক্তিত্বকে পবিত্র ওমরাহ করানোর অনুমোদন দেন।
ইতিমধ্যে ২৯ দেশের পাঁচ শতাধিক ইসলামি ব্যক্তিত্ব পবিত্র ওমরাহ পালন করেছেন। গত ১ ফেব্রুয়ারি ওমরাহ প্রোগ্রামের দ্বিতীয় দফায় এবার ১৫ দেশ থেকে ২৫০ জন ওমরাযাত্রী মদিনায় পৌঁছেন।
পবিত্র ওমরাহ পালনের পাশাপাশি তাদের মক্কা ও মদিনার ঐতিহাসিক স্থানগুলো পরিদর্শন করানো হয়। মদিনায় অবস্থানকালে পবিত্র মসজিদে নববি, মসজিদে কুবা, বদর ও ওহুদ প্রান্তরসহ ইসলামের ইতিহাস সংশ্লিষ্ট স্থান পরিদর্শন করেন। আর মক্কায় অবস্থানকালে পবিত্র কাবাঘরের গিলাফ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান কিং আবদুল আজিজ কমপ্লেক্সসহ পবিত্র মসজিদুল হারামের আশপাশ এলাকা পরিদর্শন করেন।
সৌদি আরব প্রতি বছর রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে এক হাজারের বেশি মুসলিম ব্যক্তিত্বের পবিত্র হজের আয়োজন করে থাকে। গত বছর দেশটির সরকার বিশ্বের ৯০টির বেশি দেশ থেকে কয়েক হাজার জনকে হজ করিয়েছে।
হজ-ওমরার এই ব্যবস্থা ছাড়াও গত বছরের ডিসেম্বরে সৌদি আরবের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় পবিত্র ওমরাহ সফরে যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের বিশেষ প্রচেষ্টা এবং ঢাকায় নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলানের সহযোগিতায় তারা এ সফরের সুযোগ পান।
গত বছরের ৮ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো সৌদি রাষ্ট্রদূত আরবি বিভাগের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে অংশ নেন। তখন তিনি পাঁচ মেধাবী শিক্ষার্থীকে ওমরাহ সফরে নেওয়ার ঘোষণা দেন।