পর্যটকদের স্বাগত জানাতে হাতছানি দিয়ে ডাকছে সাদা পাথর
যতযদূর চোখ যায় দুইদিকে কেবল সাদা পাথর, মাঝখানে স্বচ্ছ নীল জল আর পাহাড়ে মেঘের আলিঙ্গন, এ যেনো প্রকৃতির অপরূপ এক স্বর্গরাজ্য। বলা হচ্ছে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ সাদা পাথরের কথা।
সিলেট শহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরত্বে সীমান্তবর্তী উপজেলা কোম্পানীগঞ্জে অবস্থিত সাদা পাথর পর্যটনকেন্দ্র। নয়নাভিরাম এ পর্যটনকেন্দ্র একেক মৌসুমে একেক রূপ ধারণ করে। এসব সৌন্দর্য অবলোকন করতে বিভিন্ন উৎসবে অথবা সরকারি ছুটির দিনে ভ্রমণ পিপাসুরা ছুটে আসেন নৈসর্গিক এ পর্যটনকেন্দ্রে।
ঈদ পরবর্তী দিনগুলোতে লাখো পর্যটকের পদচারণায় মূখরিত হয়ে ওঠে ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর। তাই প্রকৃতির আপন মহিমায় গড়ে ওঠা এই পর্যটন প্রস্তুত রয়েছে আগত পর্যটকদের বরণ করে নিতে। ঈদকে সামনে রেখে পর্যটন কেন্দ্রের আবাসিক হোটেল, রেস্টুরেন্টসহ বিভিন্ন কসমেটিকস সামগ্রীর দোকানগুলো সাজানো হয়েছে নতুন করে।
কোম্পানীগঞ্জে সাদা পাথর, উৎমা, তুরং ও শাহ—আরফিন টিলা নামক চারটি পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে। প্রতিটি পর্যটনকেন্দ্রের রয়েছে আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য ও সৌন্দর্য। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পর্যটক ভিড় করেন ভোলাগঞ্জের সাদা পাথরে। সাদা পাথরের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে সাদা সাদা পাথর, স্থানীয়রা এই পাথরকে সাদা সোনা বলে আখ্যায়িত করেন। চারিদিকে সাদা পাথরের ছড়াছড়ি দেখে মনে হয় প্রকৃতি যেনো শুভ্র বিছানা বিছিয়ে রেখেছে। মাঝখানে স্বচ্ছ নীল পানি, চতুর্দিকে ছোট বড় অনেক পাহাড়, পাহাড় ঘেঁষে মেঘের খেলা। সব মিলিয়ে প্রকৃতির এক স্বর্গরাজ্য, যা নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবেনা।
প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য উপভোগের জন্য দেশের নানানপ্রান্ত থেকে আসা পর্যটকদের সচেতনতার অভাবে অনেক সময় ঘটে যায় অনাকাঙ্ক্ষিত দূর্ঘটনা। অনেকেই সাতার না জেনে পানিতে নেমে গোসল করার সময় পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণ করেন। বিষয়টি লক্ষ্য রেখে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্রের স্থানগুলো পর্যটকবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি ও আগত পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এরই মধ্যে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যটকদের জন্য বাড়তি নিরাপত্তা জোরদার করার পাশাপাশি পর্যটন কেন্দ্রের বিভিন্ন স্থানে সতর্কতামূলক নির্দেশনা সংবলিত সাইনবোর্ড দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে স্থানীয় এলাকার জনপ্রতিনিধিসহ পর্যটন সংশ্নিষ্ট ব্যবসায়ী ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোকে এ বিষয়ে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। প্রশাসনের পাশাপাশি তারা যেন পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়ে সচেতন থাকেন।
কোম্পানীগঞ্জ ফটোগ্রাফি সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক কবির আহমদ বলেন সাদা পাথরে ভ্রমণে আসা দর্শনার্থীদের সঠিক গাইড দিতে ও তাদের ভ্রমনকে স্মৃতি হিসেবে চিরস্মরণীয় করে রাখতে ভালো মানের ছবি তোলে তাদের সেবা প্রদানে আমরা বদ্ধপরিকর। আমাদের কোন ফটোগ্রাফারের মাধ্যমে কোন পর্যটক হয়রানি হবেনা ইনশাআল্লাহ। কোন ফটোগ্রাফারের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ পেলে আমরা সাথে সাথেই সেই ফটোগ্রাফারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।
সাদা পাথর হোটেল এন্ড রিসোর্টের চেয়ারম্যান হাজী আলকাছ আলী বলেন, প্রতি বছর ঈদুল ফিতরে ঢল নামে পর্যটকদের। এবারো পর্যটকদের আনাগোনা আগের থেকেও বেশি হতে পারে। আমাদের পক্ষ থেকে পর্যটকদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি আমরা।
কোম্পানীগঞ্জ প্রেসক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক ও পরিবেশবাদী সোহরাব আহমদ বলেন, ঈদ ও পহেলা বৈশাখের ছুটি উপলক্ষ্যে সাদা পাথরে প্রচুর পর্যটকের সমাগম ঘটে। লাখো পর্যটকের আনাগোনা যেখানে সেখানে নিরাপত্তার জন্য নেই ট্যুরিস্ট পুলিশ। সাদা পাথরে সার্বক্ষণিক ট্যুরিস্ট পুলিশের ব্যবস্থা করলে পর্যটকরা নির্বিঘ্নে বিচরণ করতে পারতেন।
কোম্পানীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ বলেন, কোম্পানীগঞ্জের পর্যটন স্পটসমূহে বেড়াতে আসা পর্যটকদের চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, ইভটিজিং, প্রতারণাসহ অনাকাঙ্ক্ষিত সকল দূর্ঘটনার হাত থেকে পর্যটকদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য আমাদের থানা পুলিশের পক্ষ থেকে পোশাকধারী ও সিভিল ড্রেসে একাধিক ইউনিট সার্বক্ষণিকভাবে টহলে থাকবে। এছাড়াও আমাদের ভোলাগঞ্জ পুলিশ ফাড়িতে বলে দিয়েছি সার্বক্ষণিক নজরদারি করবে ফাড়ি পুলিশ। পর্যটকরা আমাদের সম্মানীত মেহমান। স্থানীয় নৌকার মাঝি, ফটোগ্রাফার, দোকানদারসহ পর্যটনের সাথে সংশ্লিষ্ট কারো দ্বারা হয়রানি হলে আমরা কঠোরভাবে পদক্ষেপ নেবো। পর্যটকদের নিরাপদ ভ্রমণে আমাদের সার্বক্ষণিক নজরদারি জোরদার থাকবে। এছাড়াও আমাদের পুলিশ সুপার মহোদয়ের নির্দেশ কোন পর্যটক যেনো কোনভাবে হয়রানি না হয়, তারা যেনো নির্বিঘ্নে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন, আমরা থানা পুলিশ সেই লক্ষ্যেই কাজ করছি।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুনজিত কুমার চন্দ বলেন, সাদা পাথরে আসা পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা ও তাঁদের ভ্রমণ নির্বিঘ্নকরণে উপজেলা প্রশাসন পদক্ষেপ নিয়েছে। দেশের বিভিন্ন যায়গা থেকে আসা পর্যটকরা যাতে নির্বিঘ্নে ভ্রমণ করে যেতে পারেন সে দিকে উপজেলা প্রশাসন সব সময় স্বোচ্ছার থাকবে। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ছুটির দিনগুলোতে প্রশাসনের বিভিন্ন টিম মাঠে নিযুক্ত থাকবে। পর্যটনকেন্দ্রে সকল প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে উপজেলা প্রশাসনের পাশাপাশি কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, আনসার, গ্রাম পুলিশ ও পর্যটন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা যৌথভাবে কাজ করবেন।