প্রবাসীকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়, নারীসহ গ্রেপ্তার ৩

প্রবাসীকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়, নারীসহ গ্রেপ্তার ৩

গত ২৮ মার্চ বিকেলে গোলাপগঞ্জ পৌর শহরের চৌমুহনী থেকে সোহেল আহমদ নামের এক দুবাই প্রবাসীকে অপহরণ করে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। এই চক্রটি ওই প্রবাসীকে অপহরণ করে প্রাইভেট কারে করে মৌলভীবাজার উপজেলার কমলগঞ্জে নিয়ে তার সর্বস্ব লুটে নেয়। সেখানে তাকে আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন করে। এই চক্রটি সুকৌশলে ওই প্রবাসীর পরিবারের কাছ থেকে থেকে মুক্তিপণ আদায় করে। এই চক্রের ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে প্রেরণ করেছে গোলাপগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ। সেই প্রবাসীর লুটে নেওয়া মালামালও উদ্ধার করা হয়েছে।

সোমবার রাত ১০টায় গোলাপগঞ্জ মডেল থানায় প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গোলাপগঞ্জ সার্কেল) সজল কুমার সরকার।

ভুক্তভোগী প্রবাসীর সোহেল আহমদ উপজেলার ঢাকাদক্ষিণ ইউনিয়নের নগর গ্রামের ময়না মিয়ার ছেলে।

গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা হলো সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার রাধাকুনা গ্রামের মৃত আখল মিয়ার মেয়ে সুবর্ণা আক্তার লাকী (৩২), শাহপরান পীরের বাজারের উত্তর মোকামেরগুল গ্রামের মো. শহীদ মিয়ার ছেলে মো. জাহাঙ্গীর আলম রুবেল (২৭), ওসমানীনগর উপজেলার দক্ষিণ রাইগদারা গ্রামের মৃত আতিক মিয়ার ছেলে জাহেদ আহমদ (৩৮) ও একই গ্রামের আজমল আলীর ছেলে সুমন রশীদ (৩৩)।

জানা যায়, প্রবাসী সোহেল আহমদ গত ২৮ মার্চ বিকেল ৪টার দিকে উপজেলার গোলাপগঞ্জ চৌমুহনী থেকে রামদা বাজার যাওয়ার জন্য সিএনজি অটোরিকশায় উঠেন। এরপর যাত্রী বেশে থাকা প্রতারক চক্র তাকে চোখে মুখে স্প্রে মেরে অজ্ঞান করে হুমায়ুন রশীদ চত্বরে নিয়ে যায়। এরপর তারা পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে তাকে মৌলভীবাজার উপজেলার কমলগঞ্জের একটি চা বাগানে নিয়ে যায়। এরপর তারা তার সাথে থাকা নগদ ৫২ হাজার টাকা ও স্মার্ট ফোন এবং ঘড়ি, আঙটি লুটে নেয়। এরপর এই চক্রটি তার উপর শারীরিক নির্যাতন করে তাকে পরিবারের কাছ থেকে ফোন দিয়ে মুক্তিপণ আনতে বলে। এক পর্যায়ে সোহেল আহমদ তাদের কথামত বাড়িতে ফোন দিয়ে বিকাশের মাধ্যমে ৪০ হাজার টাকা অপহরণ চক্রকে এনে দেন। এরপর ওইদিন রাত আড়াইটার দিকে তারা তাকে কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর এলাকায় ছেড়ে দেয়।

পরে বুধবার (৩ এপ্রিল) বাড়ি ফিরে সোহেল আহমদ গোলাপগঞ্জ মডেল থানায় ঘটনার বিষয়টি অবগত করেন। তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি আমলে নিয়ে অপহরণকারীদের গ্রেপ্তারের অভিযানে নামে থানা পুলিশ।

পরে তথ্য প্রযুক্তির সহযোগিতায় শনিবার (৬ এপ্রিল) গোলাপগঞ্জ মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সুমন চন্দ্র সরকারের এর নেতৃত্বে এসআই মো. আসিব ইকবাল ও এএসআই মাহমুদুল হাসানসহ পুলিশের একটি টিম সিলেট মহানগরীর একটি হোটেল থেকে সুবর্ণা আক্তার লাকীকে গ্রেপ্তার করে।

লাকির দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে সিলেট শহরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তার সহযোগী জাহাঙ্গীর আলম রুবেল ও জায়েদ আহমদকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এই চক্রের মূল পরিকল্পনাকারী
সুমন রশীদকে ওসমানীনগর উপজেলার তাজপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এসময় তার কাছে থাকা প্রবাসী সোহেলের কেডস, দামি ঘড়ি, মোবাইল ফোন ও বিদেশী আঙটি উদ্ধার করা হয়। যার আনুমানিক মূল্য ৬০ হাজার টাকা। এছাড়াও অপহরণের কাজে ব্যবহৃত প্রাইভেট কার (ঢাকা মেট্রো - গ - ২৩-১৫৯০) জব্দ করা হয়।

এ ঘটনায় প্রবাসী সোহেল আহমদ বাদী হয়ে ৪ জনের নাম উল্লেখ করে ও আরও ২ জনকে অজ্ঞাত রেখে মামলা দায়ের করেন।

এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী প্রবাসী সোহেল আহমদ জানান, স্প্রে দিয়ে অজ্ঞান করে তারা প্রথমে আমায় হুমায়ুন রশীদ চত্বরে নিয়ে যায়। এরপর আমায় মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে একটি চা বাগানের নির্জন স্থানে নিয়ে গিয়ে একটি ঘরে আটকে রেখে আমার সাথে থাকা টাকা মোবাইলসহ সব লুটে নিয়ে তারা আমার উপর অমানবিক নির্যাতন শুরু করে। আমায় বলে আমি যেন তাদের বাড়ি থেকে টাকা এনে দেই। এক পর্যায়ে আমি নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তাদের টাকা এনে দিই।

গোলাপগঞ্জ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মাছুদুল আমিন জানান, এই চক্রটি দীর্ঘদিন থেকে অপহরণের সাথে জড়িত রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের ৪ জনকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। এরপর তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে।

তাদের গ্রেপ্তারের পর অনেকেই আমাদের সাথে যোগাযোগ করছে। আরও অনেকেই হয়তো তাদের অপহরণের শিকার হয়েছে। এর সাথে জড়িত আর কেউ থাকলে পুলিশ তাদেরও গ্রেপ্তার করবে বলে জানান তিনি।