ইউরোপজুড়ে ছড়িয়েছে বিক্ষোভ

গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে ‘বিশ্ববিদ্যালয় দখল’

গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে ‘বিশ্ববিদ্যালয় দখল’

যুক্তরাষ্ট্রের পথ ধরে এবার ইউরোপেও ছড়িয়ে পড়ছে গাজায় যুদ্ধবিরতি ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে বিক্ষোভ। এ বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিচ্ছেন নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, ফ্রান্স, সুইডেন, অস্ট্রিয়া, গ্রিসসহ বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আন্দোলনকারীদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এ সময় অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু তার পরও বিক্ষোভ ঠেকাতে পারছেন না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।

মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মতো ইউরোপীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরাও গাজায় যুদ্ধবিরতি ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার পাশাপাশি ইসরায়েলি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের যাবতীয় চুক্তি বাতিলের দাবিও সামনে আনছেন। মঙ্গলবার নেদারল্যান্ডসের রাজধানী আমস্টারডামে অবস্থিত ইউনিভার্সিটি অব আমস্টারডাম (ইউভিএ) ক্যাম্পাসে অভিযান চালিয়ে ১৬৯ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ, পাশাপাশি ব্যাপক মাত্রায় লাঠি, পিপার স্প্রে এবং টিয়ার গ্যাসের শেল ব্যবহারের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। ইউনিভার্সিটি অব আমস্টারডামের পাশাপাশি নেদারল্যান্ডসের অন্য দুই বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব আটরেশট এবং ইউনিভার্সিটি অব ডেলফেও ফিলিস্তিনপন্থি শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করেছেন। এদিকে মঙ্গলবার সকালে জার্মানির পূর্বাঞ্চলীয় শহর লিপজিগের প্রধান

বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব লিপজিগের একটি লেকচার হল দখল করেন ৫০ থেকে ৬০ জন শিক্ষার্থীর একটি দল। দখলের পর তারা হলের সামনে ব্যানার টানান। সেখানে লেখা ছিল, ‘গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয় দখল’। ব্যানার টানানোর পাশাপাশি লেকচার হলের সামনে ব্যারিকেড স্থাপন করে সেটিকে ‘মুক্তাঞ্চল’ ঘোষণা এবং হলের আশপাশের ফাঁকা জমিতে অস্থায়ী তাঁবুও স্থাপন করেন তারা। বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা ফিরে না যাওয়ায় সন্ধ্যার দিকে পুলিশ ডাকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পুলিশ এসে অবস্থান নেওয়া বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করেনি লিপজিগ পুলিশ, তবে হল দখলের পরিকল্পনা ও উসকানি দেওয়ার অভিযোগে ১৩ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার ফ্রান্সের সাইন্সেস পো ইউনিভার্সিটিতে ইসরায়েলি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের স্বাক্ষরিত যাবতীয় চুক্তি বাতিলের দাবিতে অনশন ধর্মঘট শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। একই দিন সন্ধ্যায় প্যারিসের সরবোন বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্ফিথিয়েটারে অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থীদেরও সরিয়ে দিয়েছে পুলিশ। ইসরায়েলি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের দাবিতে চলতি সপ্তাহে সুইজারল্যান্ডের প্রধান তিন বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব ল্যুজান, ইউনিভার্সিটি অব জেনেভা এবং ইউনিভার্সিটি অব জুরিখে অন্দোলন শুরু হয়। অস্ট্রিয়ার বিখ্যাত ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে গত বৃহস্পতিবার থেকে অবস্থান নিয়েছেন কয়েক ডজন ফিলিস্তিনপন্থি শিক্ষার্থী। বেলজিয়ামের গেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়েও এক সপ্তাহ ধরে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শতাধিক শিক্ষার্থী। এ ছাড়া গত এক সপ্তাহে আয়ারল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক, ইতালি, স্পেন এবং যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন ক্যাম্পাসেও ফিলিস্তিনপন্থি আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে। গ্রিসের রাজধানী এথেন্সে ফিলিস্তিনপন্থি সমাবেশ চলাকালে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ফিলিস্তিনি পতাকা ও ব্যানার বহনকারী ৩০০ জনেরও বেশি বিক্ষোভকারী ওই সমাবেশে অংশ নেন। এ সময় তাদের হাতে ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে লেখা বিভিন্ন ধরনের প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।