হত্যার হুমকি সত্ত্বেও দমে যাননি রুশনারা আলি
যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট নির্বাচনে এবারও সপ্রতাপে লড়ে বিজয়ী হয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রুশনারা আলি। লেবার পার্টি থেকে টানা পঞ্চমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হন তিনি। কিন্তু এবারের নির্বাচনী মাঠে টিকে থাকতে তাকে হত্যার হুমকির মতো কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয়েছে। বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ অভিযোগ করেছেন রুশনারা।
তিনি অভিযোগ করেন, ক্রমাগত হত্যার হুমকি এবং ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানোর হয়েছে। বাধ্য হয়ে তাকে পুলিশি নিরাপত্তা নিতে হয়েছিল। সে সঙ্গে ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে বিভ্রান্তিকর পরিবেশ তৈরির চেষ্টা ছিল। মাঠের প্রচারেও লেবার পার্টিবিরোধীরা বাধার সৃষ্টি করে। এমনকি জনসভায় পরিকল্পিত সহিংসতারও আশঙ্কা ছিল।
রুশনারা অভিযোগের সমর্থনে একটি চিঠি বিবিসির সাংবাদিকদের দেখান। এটি নির্বাচনের প্রচারকালে তার অফিসে পাঠানো হয়েছিল। সেখানে লেবার এমপিকে কয়েক দিনের মধ্যে পিষে মারার কথা হুমকি দেওয়া হয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো কিছু ভিডিওতেও বিবিসি অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে। ওই সব ভিডিওতে দেখা যায়, রুশনারার প্রচার সভায় বিরোধীরা উত্তেজনাকর স্লোগান দিচ্ছেন। তাদের পিছু নিয়ে বিরক্ত করছেন। এমনকি লেবার পার্টির নামে ভুয়া লিফলেট ছাপিয়ে বিতরণও করেছে।
সাক্ষাৎকারে রুশনারা বলেন, জনগণ যাতে লেবার পার্টিকে সমর্থন না করে, তাই তাদের ভয় দেখাতে তার নির্বাচনী প্রচারণাকে 'অস্থিতিশীল' করে তোলা হয়েছিল। আমার অফিসের বাইরে বিক্ষোভ এবং ব্যক্তিগত হুমকি প্রায়ই আসছিল। নির্বাচনের দিন একটি ভোটকেন্দ্রের বাইরে একটি গাড়ি দাঁড় করিয়ে মাইক্রোফোনে আমাকে গালাগাল করা হয়। ভোটারদের ভয় দেখাতে এমনটি করা হয়। পুলিশের সঙ্গে আমাকে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হয়েছিল। কারণ, বিদ্বেষপূর্ণ পরিস্থিতি রাজনৈতিক সহিংসতার দিকে নিয়ে যাওয়ার সব চেষ্টা করা হচ্ছিল। ১৪ বছর ধরে বেথনাল গ্রিনের প্রতিনিধিত্ব করার সময় আমরা অনেক কিছু দেখেছি, কিন্তু এই স্তরের শত্রুতা দেখিনি।
গত সপ্তাহে (৪ জুলাই) অনুষ্ঠিত যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে লেবার পার্টি থেকে টানা পঞ্চমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হন রুশনারা আলি। নির্বাচনে ১৪ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা কনজারভেটিভ পার্টিকে বড় ব্যবধানে হারিয়ে দেয় লেবার পার্টি। সংসদের ৬৫০টির মধ্যে ৪১২ আসনে জয় নিশ্চিত করে দলটি।
পরে গঠিত প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভায় বাসস্থান, কমিউনিটি ও স্থানীয় সরকারের পার্লামেন্টারি আন্ডার সেক্রেটারির দায়িত্ব রুশনারাকে দেওয়া হয়েছে।
রুশনারা আলি বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড স্টেপনি থেকে লড়ে বিজয়ী হয়েছেন। এ আসনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী তিনজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত। তারা হলেন- আজমাল মাশরুর, সুমন আহমেদ ও সামউদ্দিন। এরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে লড়ছেন। এ ছাড়া রেগি অ্যাডামস (স্বতন্ত্র), গ্রিন পার্টি থেকে ফোবি গিল, এনিমেল ওয়েলফেয়ার পার্টি থেকে ভেনেসা হাডসন, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে রাবিনা খান, সোশ্যাল ডেমোক্রেট পার্টি থেকে জন মাবুট, রিফর্ম ইউকে থেকে পিটার স্কিয়েটস, কনজারভেটিভ অ্যান্ড ইউনিয়নিস্ট পার্টি থেকে অস্কার রেনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান।
তিনি ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের সিলেট জেলার বিশ্বনাথে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র ৭ বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে লন্ডনে চলে যান এবং সেখানেই তিনি বড় হন। রুশনারা অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট জনস কলেজ থেকে দর্শন, রাজনীতি ও অর্থনীতি বিষয়ে পড়াশোনা করেন। সে সময় থেকে তিনি রাজনীতি সচেতন ছিলেন।
রুশনারা ২০১০ সালে নির্বাচিত প্রথম তিনজন মুসলিম নারী এমপিরও অন্যতম। সে সময় তার বিজয় লন্ডনে বাংলাদেশি প্রবাসী ও বাংলাদেশে ব্যাপক সাড়া ফেলে। তিনি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সর্বসাধারণের জন্য কাজ করে প্রশংসিত হন। এ ছাড়া যুদ্ধবিরোধী নেত্রী হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করেন। তিনি মনে করেন, যুদ্ধ কোনো সমাধান নয়। যুদ্ধ ভবিষ্যৎকে কেবল রক্তাক্তই করছে। ব্রিটিশ সরকারের যুদ্ধনীতির কারণে তিনি পার্লামেন্টে সরাসরি প্রতিবাদ করেন। এমনকি একবার পদত্যাগও করেছিলেন এ নেত্রী। সূত্র: কালবেলা