সিলেটে সব থানার দায়িত্বে পুলিশ, সড়কে ট্রাফিক

সিলেটে সব থানার দায়িত্বে পুলিশ, সড়কে ট্রাফিক

পুলিশের টানা ছয়দিনের কর্মবিরতি শেষে অবশেষে সিলেটের থানাগুলোতে শুরু হয়েছে সেবাদান কার্যক্রম। ফলে সচল হতে শুরু করেছে থানাগুলো, ফিরেছে প্রাণচাঞ্চল্য। মহানগরীর ছয় থানা ও জেলার ১১টি থানায় সীমিত পরিষরে কার্যক্রম শুরু হয়েছে, জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। মহানগর এলাকার প্রতিটি থানায় প্রায় ৪০ থেকে ৬০ ভাগ পুলিশ সদস্য এসে কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন। সে তুলনায় জেলার থানাগুলোতে কম সংখ্যক পুলিশ সদস্যরা এসে যোগদান করেছেন, অবশ্য নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সকলে এসে কর্মস্থলে হাজির হবেন, আশাবাদি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

সোমবার নাগরিক সেবাদান শুরুর প্রথম দিনেই কোতোয়ালি থানায় ৫টি সাধারণ ডায়েরী করা হয়েছে। এছাড়া জালালাবাদ ১টি জিডি ও শাহপরান (র.) থানায় একটি জিডির পাশাপাশি অভিযোগ এসেছে।

সিলেট মহানগর পুলিশের কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম নুনু মিয়া বলেন, থানায় ৭১ জন পুলিশের মধ্যে দুই ওসি ছাড়াও উপ পরিদর্শক (এসআই) রয়েছেন ১৬ জন, উপ সহকারি পুলিশ পরিদর্শক (এএসআই) ১৩ জন রয়েছেন। সোমবার রাত ৯টা পর্যন্ত ৫০ জন যোগদান করেছেন।

তিনি বলেন, প্রথম দিনেই থানার কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চলছে। সোমবার পৃথক ৫টি সাধারণ ডায়েরী নেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে একটি মেয়ে ও একজন বৃদ্ধ নিখোঁজের ঘটনায় এবং ৩টি কাগজপত্র ও চেক বই হারানোর ৩টি জিডি হয়েছে। তবে কোনো মামলা হয়নি।

জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, থানায় দুই ওসিসহ মোট ৫৩ জন সদস্য রয়েছেন। এরমধ্যে ফোর্স ব্যতিরেকেও এসআই ১৪ এবং এএসআই ১২ জন। সোমবার রাত ৯টা পর্যন্ত ৪০ জন এসে কর্মস্থলে যোগদান করেছেন। প্রথম দিনে কোনো মামলা হয়নি, তবে একটি জিডি নেওয়া হয়েছে।

এয়ারপোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেবাংশু কুমার দে বলেন, থানায় ৬০ জন পুলিশ সদস্যের মধ্যে ৫৬ জন এসে কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন। থানায় এসআই ১৪ জন ও এএসআই ১০ জন রয়েছেন। রাত ৮টা থেকে ডিউটি অফিসার কাজ শুরু করেছেন। তবে কোনো মামলা বা জিডি হয়নি।

শাহপরান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুনুর রশিদ চৌধুরী বলেন, থানায় দুই ওসিসহ মোট ৬০ জন পুলিশ সদস্য রয়েছেন। এরমধ্যে এসআই ১০ জন ও এএসআই ৮ জন। সোমবার রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ৪৫ জন এসে কাজে যোগ দিয়েছেন। এ পর্যন্ত থানায় একটি অভিযোগ ও একটি জিডি এসেছে।

মোগলাবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, দুই ওসি, ১০ এসআই, ১০ এএসআইসহ থানায় ৭০ জন পুলিশ ফোর্স রয়েছেন।

তবে দক্ষিণ সুরমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়ারদৌস হাসানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ না করায় তথ্য পাওয়া যায়নি।

এদিকে, সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) মোহাম্মদ সম্রাট তালুকদার বলেন, সোমবার থেকে জেলার ১১টি থানায় কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সব থানায় খবর নিয়েছি, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ রয়েছে। এরই মধ্যে থানাগুলোতে ৪০ ভাগের বেশি সদস্য এসে যোগদান করেছেন। অনেকে দূরদূরান্ত থেকে আসার কারণে দেরি হচ্ছে। তবে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেধে দেওয়া হয়েছে। তাই নির্দিষ্ট সময়ের ভেতরে এসে সবাই যোগদান করবেন আশাবাদি।

অপরদিকে টানা ছয়দিন পর সোমবার সকাল থেকে নগরীর সড়কের শৃঙ্খলা ফেরাতে কাজে যোগ দিয়েছে ট্রাফিক পুলিশ। প্রথম দিনে বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেও সড়কে যানবাহন নিয়ন্ত্রণে অর্ধশতাধিক পুলিশ ফোর্স কাজ করছে। প্রথম দিনে আম্বরখানা, জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা, সুবহানীঘাট, কোর্ট পয়েন্টে ও সিটি পয়েন্টে ট্রাফিকিং কার্যক্রম শুরু হয়।

সরেজমিন ট্রাফিক কার্যক্রম পরিদর্শন ও সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষায় থাকা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের ধন্যবাদ জানান এসএমপি কমিশনার মো. জাকির হোসেন খান। 

মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (মিডিয়া) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রতিটি পয়েন্টে ৮ জন করে পুলিশ ট্রাফিকের দায়িত্বে রয়েছেন। তাদের নেতৃত্বে উপ কমিশনার (ট্রাফিক), অতিরিক্ত উপ কমিশনার (ট্রাফিক), সহকারি কমিশনার (ট্রাফিক) ও ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) সড়কে শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে তদারকিতে রয়েছেন।

তিনি বলেন, পুলিশ সদস্যরা ক্রমান্বয়ে কাজে যোগ দিচ্ছেন। যে কারণে পর্যায়ক্রমে সদস্য সংখ্যাও বাড়বে, সেই সঙ্গে কাজের পরিধিও বাড়ানো হবে।

তিনি আরো বলেন, এই ছয়টি পয়েন্ট ছাড়াও নগরের নাইওরপুর উপশহর, শিবগঞ্জ, টিলাগড়, মেজরটিলা, সুরমা গেইট পর্যন্ত ট্রাফিক পুলিশ দায়িত্ব পালন করে থাকেন। নগরের অভ্যন্তরে লামাবাজার, রিকাবিবাজার, জিতু মিয়ার পয়েন্ট, নয়াসড়ক,  শাহী ঈদগাহ, মদীনা মার্কেট,  সুনামগঞ্জ সড়কে টুকেরবাজার তেমুখী পয়েন্টে পর্যন্ত, উপশহর থেকে হুময়ন রশিদ চত্বর, কদমতলী, দক্ষিণ সুরমার চন্ডিপুল পর্যন্ত ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করে থাকেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সিলেট নগরে কখনো ভারি আবার কখনো গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। এরমধ্যেও যানবাহন নিয়ন্ত্রণে সড়কে কাজ করছেন ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা। নগরের ব্যস্ততম কোর্ট পয়েন্ট, সিটি পয়েন্ট, বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা,  আম্বরখানা ও সুবহানীঘাট পয়েন্টে ট্রাফিক সার্জেন্টসহ ৮ জন করে পুলিশ সদস্য সড়কে যানবাহন নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে দেখা যায়। সহ বিভিন্ন স্ধানে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করছেন পুলিশ সদস্যা। তাদের সঙ্গে স্কাউট সদস্যরাও যানবাহন নিয়ন্ত্রণে কাজ করতেও দেখা গেছে।

উল্লেখ্য, রোববার (১১ আগস্ট) বিকালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টার সঙ্গে আন্দোলনরত পুলিশ সদস্যদের প্রতিনিধিদলের বৈঠক হয়। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পর কর্মবিরতি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন ১১ দফা দাবিতে আন্দোলনরত পুলিশ সদস্যরা। ওই বৈঠকে পুলিশের ইউনিফর্ম ও লোগোয় পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর আগে বেশকিছু দাবিতে গত ৬ আগস্ট থেকে কর্মবিরতির ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ পুলিশ অধস্তন কর্মচারী সংগঠন। 

ওই বৈঠকের পর আজ সোমবার থেকে পুলিশ সদস্যরা কাজে ফিরতে শুরু করেছেন। এরআগে সারা দেশের ন্যায় সিলেটে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজ করেন। তাদের সঙ্গে রোবার স্কাউট, আনসার ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষার কাজে সামিল হন। ট্রাফিকিং ব্যবস্থার বাইরেও সিলেট সিটি করপোরেশনের অচলাবস্থায় নগর পরিচ্ছন্নতার কাজ করেন শিক্ষার্থীসহ ভলেন্টিয়াররা। সেই সঙ্গে নগরের বিভিন্ন দেয়ালে রং-তুলিতে গ্রাফিতি অংকন করে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতাবোধ তৈরীতেও কাজ করেন তারা। এ কয়দিন শিক্ষার্থীদের এমন উদ্যোগ বিভিন্ন মহলে প্রশংসা কুঁড়ায়।