নির্বাচনের দাবিতে বিভাগীয় সমাবেশ করবে বিএনপি

নির্বাচনের দাবিতে বিভাগীয় সমাবেশ করবে বিএনপি

ঢাকায় বৃহৎ পরিসরে শোভাযাত্রার পর নির্বাচনী রোডম্যাপের দাবি আরও জোরালো করা এবং ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী ‘ফ্যাসিবাদী’ সরকারের ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে এবার দশ সাংগঠনিক বিভাগে বড় সমাবেশ করার চিন্তা করছে বিএনপি। আগামী মাস থেকে এসব সমাবেশ শুরু হতে পারে। শিগগির বিভাগীয় সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে আলোচনা করে সমাবেশের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করবে দলটি।

গত সোমবার রাতে অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে। রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি সভাপতিত্ব করেন।

অন্তর্বর্তী সরকার মেয়াদের তিন মাসেও নির্বাচনী রোডম্যাপের বিষয়টি স্পষ্ট না করায় আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে রোডম্যাপ ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। না হলে আগামী মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে রাজপথে সোচ্চার হবে দলটি। গত ৪ নভেম্বর অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত হয়।

বিএনপি নেতারা মনে করছেন, রাষ্ট্র কাঠামোর সংস্কার এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়া দুটিই সমান্তরালভাবে চলা উচিত। এ জন্য সরকারকে অবিলম্বে একটি রোডম্যাপ দিয়ে সামনে এগোনো দরকার। যতদিন পর্যন্ত এ রোডম্যাপ দেওয়া না হবে, ততদিন পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নির্বাচন বিলম্বিত হওয়ার যে শঙ্কা রয়েছে, সেটি কাটবে না।

তারা বলছেন, একটি অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। এ সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। তবে এখন সরকারের সব কার্যক্রমের ফোকাস হওয়া উচিত নির্বাচন। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী ‘ফ্যাসিবাদী’ সরকারের নানা ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। তাই নির্বাচন নিয়ে জনমনে বিভিন্ন সময় যে শঙ্কা তৈরি হচ্ছে, সেটা কাটাতে এ সরকারকে দ্রুত রোডম্যাপ দিয়ে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মধ্যে ঢোকা দরকার।

জানা গেছে, বৈঠকে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে গত শুক্রবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিএনপির বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মূল্যায়ন করেন নেতারা। তারা বলেন, ঢাকায় যে শোভাযাত্রা হয়েছে, বিএনপির বিবেচনায় সেটি সর্বকালের সর্ববৃহৎ শোভাযাত্রা। যেটি নয়াপল্টন থেকে শুরু হয়ে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে গিয়ে শেষ হয়। কয়েক লাখ লোকের অংশগ্রহণে এই শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে, বিএনপি দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক শক্তি। সুতরাং বিএনপিকে বাইরে রেখে কিংবা এড়িয়ে কিছু করা যাবে না। এ ছাড়া বিএনপি এই অন্তর্বর্তী সরকারের বড় সহযোগী এবং সহায়ক শক্তি। তাই বিএনপির সঙ্গে আলোচনা করেই সরকারের সব সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।

বিএনপি মনে করছে, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ফ্যাসিবাদী ষড়যন্ত্র মোকাবিলা এবং নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা—এ দুই ইস্যুতে মাঠের কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে হবে। সেই ভাবনা থেকেই এবার দশ সাংগঠনিক বিভাগে বড় সমাবেশ করার চিন্তা-ভাবনা করছে দলটি। এ ছাড়া মহান বিজয় দিবস ঘিরেও বড় শোডাউনের পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির। তাই আগামী ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় আরেকটি বড় শোভাযাত্রা করবে দলটি।

বৈঠকে সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে সম্প্রতি তিনজনের অন্তর্ভুক্তি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। বিএনপি নেতারা অভিমত দেন, তাদের মধ্যে দুজনকে নিয়ে নানা মহলে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এরই মধ্যে ছাত্র-জনতা এটা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে এবং তারা আন্দোলন করছে। এই নিয়োগ নিয়ে বিএনপিও বিস্মিত। যথেষ্ট যাচাই-বাছাই ও চিন্তা-ভাবনা করে তাদের নিয়োগ দিলে এ বিতর্ক সৃষ্টি হতো না। তাই সরকারের উচিত যথাসম্ভব বিতর্ক এড়িয়ে সামনে অগ্রসর হওয়া; বিতর্কিত কাউকে সরকারে না রাখা এবং ভালোভাবে খোঁজখবর করে দায়িত্বে নিয়ে আসা। এর আগে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদারকে উপদেষ্টা করায় প্রশ্ন তুলে তার পদত্যাগ দাবি করেছিল বিএনপি।

দলটির অভিমত, তিনি ছিলেন প্রশাসনের বিতর্কিত কর্মকর্তা। আলী ইমাম মজুমদারকে উপদেষ্টা নিয়োগের পর তাকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছিল। এরপর গত রোববার তাকে সেখান থেকে সরিয়ে খাদ্য উপদেষ্টা করা হয়েছে। বিএনপি মনে করে, এটি বিতর্কেরই ফল।

বৈঠকে দলের কেউ কেউ বিএনপি-জামায়াতের বর্তমান সম্পর্ক নিয়ে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারা বলেন, জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির কোনো দ্বন্দ্ব ছিল না। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের পতনের লক্ষ্যে তারা একই সঙ্গে রাজপথে আন্দোলন করেছে। ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের আগের দিন এক অনানুষ্ঠানিক সভায় শরিকদের ডেকে তৎকালীন ২০ দলীয় জোট ভেঙে দেয় দলটি। জোট ভেঙে দেওয়ার পরও জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির যোগাযোগ ছিল। ১০ দফা দাবিতে ওই বছরের ৩১ ডিসেম্বর থেকে বিএনপির নেতৃত্বে যুগপৎ আন্দোলন শুরু হয়। শুরুতে জামায়াত দুটি কর্মসূচি যুগপৎভাবে পালন করলেও পরবর্তী সময়ে দলটি নিজস্ব কর্মসূচি নিয়ে আওয়ামী সরকারবিরোধী আন্দোলনে রাজপথে সক্রিয় ছিল।

৫ আগস্টের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে প্রশাসন ও মাঠপ্রশাসনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে পদায়ন নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে নানা আলোচনা হচ্ছে—যেটিতে দল দুটির মধ্যে এক ধরনের মতদ্বৈধ তৈরি হচ্ছে বলে অনেকে মনে করছেন। এ ক্ষেত্রে জামায়াত বিএনপিকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবছে কি না—সে প্রশ্নও সামনে আসছে। এমন প্রেক্ষাপটে জামায়াতের সঙ্গে যাতে কোনো দূরত্ব তৈরি কিংবা ভুল বোঝাবুঝি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা উচিত বলে বৈঠকে অভিমত দেন বিএনপির কয়েকজন নেতা।

তারা বলেন, বিশেষ করে নির্বাচন ইস্যু এবং জাতীয় ঐকমত্যের প্রশ্নে যাতে কোনো মনোমালিন্য কিংবা দূরত্ব তৈরি না হয়, সেদিকে আমাদের মনোযোগ দেওয়া দরকার। এ জন্য জামায়াতের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কিংবা অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ অব্যাহত রাখার তাগিদ দেন নেতারা।