সিলেট নগরীতে বেড়েছে চুরি ছিনতাই
সিলেট নগরীর সোনালী ব্যাংক আম্বরখানা করপোরেট শাখা থেকে বিদেশি টাকা এক্সচেঞ্জ করে গত সোমবার দুপুরে রিকশায় আখালিয়ার বাসায় ফিরছিলেন এক নারী। মোটরসাইকেলে কয়েকজন যুবক তাঁকে অনুসরণ করে। ব্যাংক থেকে কয়েকশ গজ যাওয়ার পর দর্শন দেউড়ি রাস্তার মুখে তারা তাঁর টাকা ছিনতাইর চেষ্টা করে। সিএনজি অটোরিকশার কয়েকজন চালকের সহায়তায় ওই নারী রক্ষা পান। ধাওয়া খেয়ে পালিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ছাতক উপজেলার কুর্শিগ্রাম থেকে কয়েকজন নগরীর কেওয়াপাড়ার শাহীন আহমদের বাসায় বেড়াতে আসেন। আত্মীয়দের নিয়ে ব্যস্ত থাকার সুযোগে জানালা দিয়ে বিছানার ওপর থাকা মোবাইল ফোন ও ব্যানিটি ব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যায় চোর। গত সোমবার তিন ব্যাংক থেকে ৪২ লাখ টাকা তুলে বাসায় ফিরছিলেন ব্যবসায়ী রুপায়েল আহমদ ও তাঁর ভাই হেলাল আহমদ। বেলা ২টার দিকে শিবগঞ্জ ফরহাদ খাঁ পুলের পাশে তাদের বহনকারী সিএনজি অটোরিকশার গতিরোধ করে টাকা ছিনিয়ে নেয় ছিনতাইকারীরা।
গত ৪ নভেম্বর ভোরে ঢাকা থেকে সিলেট বাস টার্মিনাল নেমে কিনব্রিজ যাওয়ার সময় ঝাপটা পার্টির কবলে পড়েন ক্ষুদ্র ব্যসায়ী সাজিদুল ইসলাম। তিনি মোবাইল ফোনে কথা বলার সময় দুই যুবক ছোঁ মেরে ফোন নিয়ে পালিয়ে যায়। এভাবে প্রতিদিনই নগরীর কোথাও না কোথাও ছিনতাই, চুরি ও ঝাপটা পার্টির কবলে পড়ছেন বিভিন্ন পেশার লোকজন। শুধু তাই নয়, সম্প্রতি পণ্যবাহী ট্রাক ছিনতাই ও ডাকাতির একাধিক ঘটনাও ঘটেছে।
এক মাসে সিলেট নগরীতে অর্ধশতাধিক চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়িয়েছে জনমনে।
নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছেন নগরবাসী। ঘরে বাইরে তাদের এখন চুরি ও ছিনতাই আতঙ্ক তাড়া করছে। বিশেষ করে নগরীর বন্দরবাজার ও কিনব্রিজ এলাকায় প্রায় প্রতিদিনই ঝাপটা পার্টির কবলে পড়ে মোবাইল ও টাকা খোয়াচ্ছেন পথচারী। স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বাসিন্দারা জানান, বন্দরবাজার, কিনব্রিজ, বাস টার্মিনাল, উপশহর, শিবগঞ্জ, আম্বরখানা, টিলাগড়, তেররতন, ওসমানী মেডিকেল এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে সংঘবদ্ধ চক্র বেশ তৎপর হয়ে উঠেছে।
এ প্রসঙ্গে এসএমপির উপকমিশনার (মিডিয়া) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, অপরাধীদের মধ্যে সবসময় অপরাধ প্রবণতা কাজ করে। অস্থিতিশীল কিংবা জনমনে আতঙ্কের জন্য কেউ এসব করছে বলে মনে হয় না।
গত ৫ আগস্টের পর কিছুদিন সিলেটের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণহীন থাকলেও ধীরে ধীরে আইনশৃঙ্খলার উন্নয়নে নজর দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কিন্তু এক মাস ধরে একের পর এক চুরি, ছিনতাইসহ ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। এসএমপির তথ্যমতে, নভেম্বরে ১৯টি চুরি, আটটি ছিনতাই ও একটি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এর আগের মাস অক্টোবরে একটি ডাকাতি, পাঁচটি ছিনতাই ও ১২টি চুরির ঘটনা ঘটে।
গত এক মাসে সংঘটিত ঘটনার মধ্যে গত সোমবার ৪২ লাখ টাকা ছিনতাই, সম্প্রতি ট্রাক থেকে রসুন ছিনতাই, টিলাগড় এলাকা থেকে প্রাইভেটকার ছিনতাই ও উপশহর এলাকায় একটি খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা ছিনতাইর ঘটনায়ও পৃথক মামলা করা হয়। একই সময়ে রায়নগর থেকে মোটরসাইকেল চুরি, উপশহরের দুটি বাসা থেকে দুটি আইফোন চুরি, গত সোমবার সোবহানীঘাটে ছিনতাইর শিকার হওয়া ব্যাংক কর্মকর্তা আব্দুস সামাদসহ ভুক্তভোগীরা থানায় পৃথক জিডি করেন। পুরাতন মেডিকেল কোয়ার্টারের একটি বাসায় ও দক্ষিণ সুরমার মোল্লারগাঁও ইউনিয়নের বেটুয়ারমুখ গ্রামে সাবেক ইউপি সদস্য ইলাছ মিয়ার বাড়িতে পৃথক ডাকাতির ঘটনা ঘটলেও মামলা হয়েছে একটি। কিন্তু সম্প্রতি ছিনতাইর শিকার হওয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কর্মচারী মাহমুদা, গৃহিণী রানী রায়, গৃহকর্তা শাহিন আহমদসহ অনেকে কোনো অভিযোগ করেননি।
চুরি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধ বাড়া প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সনাক সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ৫ আগস্টের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মনোবল অনেকটা ভেঙে যায়। তারা আগের মতো মাঠে তৎপর নন। এ সুযোগে অপরাধীরা তৎপর হয়েছে। এটা রুখতে হলে পুলিশ বাহিনীকে আরও তৎপর হতে হবে।
সিলেট কল্যাণ সংস্থার সভাপতি এহসানুল হক তাহের জানান, নগরবাসীর নানা সমস্যা নিয়ে মাঠে কাজ করতে গিয়ে গত কয়েক দিন ধরে চুরি, ছিনতাই ও লুটপাটের অভিযোগ আসছে। বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতিরোধে কর্মসূচি ঘোষণার কথা জানান তিনি।