আলাস্কার দিকে সব চোখ, সতর্ক আশাবাদী ইইউ নেতারা
বিশ্ববাসীর দৃষ্টি এখন যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায়। সেখানে শুক্রবার বৈঠকে বসছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার আগে এক দিনের মধ্যে যে ইউক্রেন যুদ্ধ থামিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সেই ইস্যুতেই তারা এই বৈঠকে বসছেন। এর আগে বুধবার ইউরোপীয় নেতারা প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন। এরপর তারা সতর্ক আশাবাদী মনোভাব প্রকাশ করেন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। এতে বলা হয়, ইউরোপীয় নেতাদের ট্রাম্প বলেছেন তার লক্ষ্য হলো মস্কো ও কিয়েভের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করা। তিনি আরও সম্মত হয়েছেন যে, যেকোনো ভূখণ্ড সংক্রান্ত সিদ্ধান্তে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির অংশগ্রহণ জরুরি এবং চুক্তির অংশ হিসেবে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা থাকতে হবে।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন বলেন, ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলে তার উদ্দেশ্য পরিষ্কার হয়েছে। ইউরোপীয়দের নিজেদের প্রত্যাশা জানানোরও সুযোগ মিলেছে। ট্রাম্প ও ভাইস-প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বৃটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, ফিনল্যান্ড ও পোল্যান্ডের নেতাদের পাশাপাশি ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন ডার লিয়েন এবং ন্যাটো প্রধান মার্ক রুটের সঙ্গেও কথা বলেন। ইউরোপীয় নেতারা এই বৈঠকের অংশ নন। তাই বুধবারের ফোনালাপ ছিল তাদের শেষ চেষ্টা, যাতে ইউক্রেনের স্বার্থ ও ইউরোপের নিরাপত্তা ট্রাম্পের আলোচনায় প্রাধান্য পায়। ট্রাম্প বৈঠকটিকে ‘১০-এর মধ্যে ১০’ হিসেবে মূল্যায়ন করেন। একই সঙ্গে রাশিয়াকে সতর্ক করে বলেন, যুদ্ধ বন্ধ না করলে ‘খুব কঠোর’ পরিণতি ভোগ করতে হবে। তবে নেতাদের বিবৃতিতে বারবার জোর দেয়া হয়, যেকোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে কিয়েভের অংশগ্রহণ অপরিহার্য। পোল্যান্ডের ডোনাল্ড টাস্ক বলেন, সবচেয়ে জরুরি হলো ট্রাম্পকে ইউরোপের বোঝাতে হবে রাশিয়াকে বিশ্বাস করা যায় না। জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মেৎসে বলেন, রাশিয়া ছাড় না দিলে আমাদের যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিলে চাপ বাড়াতে হবে।
গত সপ্তাহে ঘোষিত মার্কিন-রাশিয়া বৈঠকের আগে থেকেই ট্রাম্প ‘ভূখণ্ড বিনিময়’ নিয়ে মন্তব্য করেন। তবে তা নিয়ে ইউক্রেন ও পশ্চিমা দেশগুলোকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। রাশিয়া আগের মতোই দাবি করছে, ইউক্রেনকে চারটি আংশিক দখলকৃত অঞ্চল দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, খেরসন, জাপোরিঝিয়া ছেড়ে দিতে হবে। ন্যাটোতে তাদের যোগদানের চেষ্টা ত্যাগ করতে হবে। তবে কিয়েভ বা ইউরোপ কোনো পক্ষই এ দাবিকে গ্রহণযোগ্য মনে করছে না। জেলেনস্কির মতে, রাশিয়াকে কোনো অঞ্চল রাখতে দিলে সেটি ভবিষ্যৎ আক্রমণের ঘাঁটি হয়ে উঠবে। এর বিকল্প হিসেবে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে, যা দীর্ঘমেয়াদে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করবে।
বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার বলেন, নিরাপত্তা নিশ্চয়তার ক্ষেত্রে বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে। তিনি ট্রাম্পের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন। বৃটেন ও ফ্রান্সের নেতৃত্বে গঠিত ‘কোয়ালিশন অব দ্য উইলিং’ যুদ্ধবিরতির পর ‘নিশ্চয়তা বাহিনী’ মোতায়েনে প্রস্তুত বলে জানিয়েছে। এদিকে, যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়ার গ্রীষ্মকালীন আক্রমণ অব্যাহত রয়েছে। দোনেৎস্ক অঞ্চলের দোব্রোপিলিয়ার কাছে রুশ সেনাদের অগ্রগতি নিয়ে জেলেনস্কি সতর্ক করে বলেন, পুতিন ভান করছে যে নিষেধাজ্ঞা তার অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে না। ট্রাম্পও স্বীকার করেন, পুতিনের সঙ্গে সরাসরি কথা বললেও হয়তো তিনি বেসামরিক মানুষ হত্যার মতো কাজ বন্ধ করবেন না। তিনি বলেন, আমি তার সঙ্গে সে বিষয়ে কথা বলেছি। কিন্তু তারপর বাড়ি ফিরে দেখি একটি বৃদ্ধাশ্রম বা অ্যাপার্টমেন্টে রকেট হামলা হয়েছে। মানুষ রাস্তায় মৃত অবস্থায় পড়ে আছে। তাই উত্তরটা সম্ভবত ‘না’।

