এআই প্রযুক্তিতে দক্ষ হলে নাসায় সুযোগ পাবেন বাংলাদেশিরাও: প্রধান নভোচারী

এআই প্রযুক্তিতে দক্ষ হলে নাসায় সুযোগ পাবেন বাংলাদেশিরাও: প্রধান নভোচারী

এআই (আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স) প্রযুক্তিতে পারদর্শী হলে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থায় (নাসা) বাংলাদেশিদের কাজের সুযোগ থাকবে বলে জানিয়েছেন নাসার প্রধান নভোচারী জোসেফ এম আকাবা।

তিনি বলেছেন, এআই প্রযুক্তিকে উন্নত করতে নাসা বিভিন্ন দেশে নানান ধরনের প্রতিযোগিতা করে থাকে। বাংলাদেশও এতে অংশ নেয়। বাংলাদেশের কেউ যদি এআই প্রযুক্তি নিয়ে অনেক বেশি উন্নতি করতে পারে, তাহলে নাসায় কাজ করার সুযোগ থাকবে। এমন সব লোকদেরই নাসা খুঁজে থাকে, যাতে করে এআই ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা মহাকাশে আরও বেশি দূরত্ব পাড়ি দিতে পারি।  

প্রথমবারের মত বাংলাদেশ ভ্রমণে এসে রোববার (১৫ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় প্লে পেন স্কুলে এক অনুষ্ঠানে এই নভোচারী এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে জোসেফ এম আকাবা বৈশ্বিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে নাসার অবদান এবং মহাকাশ গবেষণা ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনে সহযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশ কীভাবে লাভবান হতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা করেন। এসময় শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি উত্তর দেন।  

মহাকাশ প্রযুক্তিতে এআইয়ের ব্যবহার সব থেকে বেশি হয় উল্লেখ করে এই বিজ্ঞানী বলেন, মহাকাশ টেকনোলজিতে সব সিস্টেমে এটি থাকে। ‘এআই’ আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে সহযোগিতা করে। কোথাও কোনো ত্রুটি থাকলে এটি আমাদের সহযোগিতা করে থাকে। বর্তমানে নাসার পরিকল্পনা হচ্ছে সব কিছুতে এআই ব্যবহার করা, আর শুধু মহাকাশ অনুসন্ধানের কাজে মানুষের ভূমিকা থাকবে।

আকাবা বলেন, বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের হাতে অনেক সম্ভাবনা। যারা এআই শিখবে, তারা ভবিষ্যতে নাসাসহ বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ মহাকাশ সংস্থাগুলোতে কাজ করতে পারবে।

মহাকাশ অনুসন্ধানের ভবিষ্যৎ খুবই সম্ভাবনাময় উল্লেখ করে নাসার প্রধান নভোচারী বলেন, বর্তমানে নভোচারীরা চাঁদের থেকে বেশি দূর যেতে পারেননি। তবে ভবিষ্যতে নাসাসহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশে চুক্তির মাধ্যমে মানুষকে চাঁদের থেকেও অনেক দূরে মঙ্গল গ্রহ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। আমি মনে করি মহাকাশ অনুসন্ধানের ভবিষ্যৎ খুবই চমৎকার। অতীতে মহাকাশ অনুসন্ধান চালাত বিভিন্ন দেশের সরকার, পরে প্রাইভেট সংস্থাও এতে যোগ হয়। এখন সাধারণ মানুষও মহাকাশে যাচ্ছে।  

জোসেফ এম আকাবা বলেন, আমি আশাবাদী ভবিষ্যতে বাংলাদেশ থেকেও মহাকাশ ভ্রমণে যাবে। আমি মনে করি এর জন্য কঠোর পরিশ্রম করে ভালোভাবে পড়াশোনা করার মাধ্যমে মহাকাশ ভ্রমণ ও অনুসন্ধানের স্বপ্নপূরণ করা সম্ভব। কখন কার সুযোগ আসে এটা বলা যায় না, তাই স্বপ্নপূরণে পরিশ্রমী হতে হবে।

সর্বশেষ মহাকাশ অভিজ্ঞতা শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরে বিজ্ঞানী আকাবা বলেন, মহাকাশে যাবার আগে নভোচারীদের অনেক ট্রেনিং করতে হয়। নভোচারীরা খুব বেশি পরিশ্রমী হয়ে থাকে। সর্বশেষ যেবার আমি মহাকাশে যাই, সেখানে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে ছয় মাস ছিলাম। পৃথিবী থেকে ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে পৌঁছাতে আমার রকেটের আট মিনিট সময় লেগেছিল।  

তিনি বলেন, আমরা মহাকাশে যাই নানা ধরণের গবেষণা করতে। এর মধ্যে মানব শরীরের রক্ত থেকে শুরু করে নানা উদ্ভিদ নিয়ে গবেষণা চালাই। পরে সেসব নমুনা আমরা পৃথিবীতে পাঠাই, যেন এসব নিয়ে আরও গবেষণা করা যায়৷ 

মহাকাশ থেকে পৃথিবীতে আসার পর সাধারণ জীবনযাপনে কেমন অনুভুতি হয়, এ বিষয়ে জোসেফ এম আকাবা বলেন, মহাকাশ থেকে পৃথিবীতে আসার পর প্রথম কয়েক সপ্তাহ সব কিছুই ভারী মনে হয়। কারণ মহাকাশে থাকে মাইক্রোগ্রাভিটি। পৃথিবীতে আসার পর একজন নভোচারীর স্বাভাবিক হতে সময় কিছু দিন সময় লাগে। মহাকাশ থেকে আসার পর আমাদের ৪৫ দিন পুনর্বাসনে থাকতে হয়। পরে আমাদের নানা ধরনের মেডিকেল চেক আপ করতে হয়। আমাদের শরীরের কন্ডিশন কেমন আছে এবং আগের মতন স্বাভাবিক হয়েছে কি না, তা দেখা হয়।  

আকাবা বলেন, মহাকাশে থাকা অবস্থায় মাইক্রোগ্রাভিটিতে যদি প্রতিনিয়ত বিভিন্ন শারীরিক চর্চা করা যায়, তাহলে পৃথিবীতে আসার পর তেমন কোনো পরিবর্তন মনে হবে না, সব কিছুই স্বাভাবিক লাগবে।

মহাকাশ অভিযানের সময় সব থেকে দুচিন্তার বিষয় কী থাকে এ বিষয়ে নাসার প্রধান নভোচারী জোসেফ এম আকাবা বলেন, মহাকাশে সব থেকে বেশি ভয়ানক বিষয় হচ্ছে আগুন লাগার ঘটনা। সাধারণত পৃথিবীতে বাড়িতে আগুন লাগলে আমরা বাইরে যেতে পারি। কিন্তু মহাকাশে এটা সম্ভব না। পাশাপাশি ছোট ছোট উল্কাপিণ্ড (মিটিয়রয়েড) যখন আঘাত আনে তখন পরিস্থিতি ভয়ানক হয়। মহাকাশে নভোচারীরা যখন স্পেস ওয়াক (মহাকাশে হাঁটা) করে, সে মুহুর্তটা খুবই ভয়ঙ্কর হয়ে থাকে।  

আকাবা বলেন, আরেকটি ভয়ানক বিষয় হয়, যখন স্পেসে টয়লেট ব্যবহার করা হয় এবং ঠাণ্ডা রাখার জন্য যে সিস্টেমে অ্যামোনিয়া (রাসায়নিক যৌগ) ব্যবহার করা হয়, তখন যদি সেখান থেকে অ্যামোনিয়া লিক করে, সেটা মৃত্যুর কারণ হয়ে উঠতে পারে।  

‘এসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে আমাদের নভোচারীদের প্রতিনিয়ত ট্রেনিং করা হয়। পাশাপাশি মহাকাশে নভোচারীরা কোনো সমস্যার সম্মুখীন হলে ‘মিশন কনট্রোল’ নামে পৃথিবীতে একটি দল থাকে, তারা সেটি খুঁজে বের করে আমাদের সহযোগিতা করে থাকে। একটি নিরাপদ ও সুন্দর মহাকাশ অভিযানের জন্য সবার টিম ওয়ার্ক ও আগাম প্রস্তুতির সব ট্রেনিং করা খুব বেশি প্রয়োজনীয়। ’

মহাকাশে থাকার দিনগুলো প্রতিনিয়ত মিস করেন জানিয়ে নাসার এ বিজ্ঞানী বলেন, মহাকাশে থাকার অভিজ্ঞতা অনেক রোমাঞ্চকর। এ দিনগুলো আমি প্রতিনিয়ত মিস করি। তবে পরিবারের সঙ্গে পৃথিবীতে থাকার অনুভূতিটাও চমৎকার হয়। সর্বশেষ পাঁচ বছর আগে আমি মহাকাশে যাই, আমি আশায় আছি আবার কবে সেখানে যাব।  

তিনি বলেন, মহাকাশে মজার একটি বিষয় হচ্ছে, সেখান থেকে নভোচারীরা চাইলে পৃথিবীতে যে কোনো দেশে যে কারও কাছে ফোনকল করতে পারেন। এই ফোনকলে কোনো প্রকার খরচ নেই। তবে মজার বিষয় হচ্ছে, সেখানে আমাকে কেউ কল দিতে পারবে না।  

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন প্লে পেন স্কুলের চেয়ারম্যান এ মান্নান খাঁন, প্রিন্সিপাল শরাবন তহুরা, ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের পলিটিক্যাল অফিসার জেমস গার্ডিনার প্রমুখ।

বিজ্ঞানী আকাবা যুক্তরাষ্ট্রের একজন শিক্ষক, হাইড্রোজিওলজিস্ট এবং পিস কর্পসের সাবেক স্বেচ্ছাসেবকও। ২০০৪ সালের মে মাসে নাসার মহাকাশচারী প্রার্থী হিসেবে মনোনীত প্রথম পুয়ের্তোরিকান বংশোদ্ভূত ব্যক্তি তিনি। ২০২৩ সালে আকাবাকে নাসার নভোচারী কার্যালয়ের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।