আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের পদত্যাগের হিড়িক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা গণহারে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন।
সোমবার (১৫ জুলাই) সন্ধা থেকে শুরু করে প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিভিন্ন হলের নেতাকর্মী প্রায় ৩০ থেকে ৪০ জন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে এই পদত্যাগ করেছেন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার দায়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী হল, শহীদ ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত হল এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগ থেকে সরে আসার ঘোষণা দিয়েছেন।
সদ্য পদত্যাগ করা শহীদ ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত হলের আইন বিষয়ক সম্পাদক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে বলেন, ‘ছাত্র রাজনীতি ছিল আমার পছন্দের জায়গা, ভালোবাসার স্থান। আজকের পর থেকে ছাত্রলীগের সাথে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নাই। কেউ আমাকে ডাকবেন না। দত্ত হল কারও বাপের না।’
সদ্য পদত্যাগকারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘দুনিয়াই সবকিছু না, আখেরাত বলেও কিছু আছে। যে সংগঠনের কেউ মারা গেলে সবাই আলহামদুলিল্লাহ পড়ে এমন সংগঠনে আমার নাম না থাকুক।’
নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী হলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করে পোস্ট করে বলেন, ‘আমি লজ্জিত যে আমি এমন সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলাম।’
সদ্য ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগকারী ও ২০২১-২২ ব্যাচের তানজিনা আক্তার বলেন, ‘আমি সহ নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী হলের ১৬ তম ব্যাচের সকল মেয়ে ছাত্রলীগ কর্মীরা ছাত্রলীগ থেকে ইস্তফা দিয়েছি। আজ থেকে ছাত্রলীগের কোনো প্রোগ্রামে আমরা যাবো না।’
কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘একজন ছাত্র হয়ে আরেকজন ছাত্রের শরীরে এমন নির্মমভাবে যারা আঘাত করতে পারে সেই দল থেকে ইস্তফা দিলাম।
মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বিকেল পর্যন্ত ঢাবি ছাত্রলীগের প্রায় অর্ধশত নেতাকর্মী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম রোকেয়া হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন সাবিহা তারান্নুম তারা।
তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, ‘আমি সাবিহা তারান্নুম তারা। সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, সেশন ২০১৯-২০। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম রোকেয়া হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক পদ থেকে স্বেচ্ছায় সজ্ঞানে পদত্যাগের ঘোষণা করছি। ’
একইভাবে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন কুয়েত মৈত্রী হল শাখা ছাত্রলীগের অর্থ সম্পাদক জুয়েনা আলম মুন। সূর্য সেন হল শাখা ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন আশিকুর রহমান জিম। তিনি হলের কার্যকরী সদস্য।
বিজয় একাত্তর হলের সহ-সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করা শিপন মাহমুদ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আমি চলমান ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান করছি। ন্যায়ের পক্ষে থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শোকজ খাওয়া এবং মুচলেকার মুখে পড়া ছাত্র আমি। আমি আজীবন নজরুল। প্রতিবাদ আমার রক্তে। আমি আজন্ম প্রতিবাদী পুরুষ। ’
‘আমি মো. শিপন মিয়া, সহ-সভাপতি, বিজয় একাত্তর হল ছাত্রলীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। চলমান যৌক্তিক ছাত্র আন্দোলনের প্রতি পূর্ণ সমর্থন প্রদান করে, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, বিজয় একাত্তর হল-এর সহ-সভাপতির পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করলাম। অন্যায় আর শিপন এক লাইনে থাকে না। ’
রাতুল আহমেদ শ্রাবণ নামের শিক্ষা ও গবেষণা ইনিস্টিটিউটের মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা বিষয়ক উপ-সম্পদক পদ থেকে পদত্যাগ ঘোষণা করেছেন।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল, অনুষদ এবং বিভাগভিত্তিক ছাত্রলীগের ফেসবুক ও মেসেঞ্জার গ্রুপ থেকে অনেক নেতাকর্মী লিভ নিয়েছেন।
নেতাকর্মীদের পদত্যাগের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতকে একাধিকবার ফোনকল করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।