জাহাঙ্গীর ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ২ মামলা
শেখ হাসিনার সেই পিয়নের অ্যাকাউন্টে জমা হয় ৬২৬ কোটি টাকা
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সেই আলোচিত ‘৪০০ কোটি টাকার মালিক’ ব্যক্তিগত সহকারী (পিয়ন) মো. জাহাঙ্গীর আলমের ব্যাংক হিসাবে ৬২৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা জমা হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে এ তথ্য উঠে এসেছে।
পাশাপাশি জাহাঙ্গীর ও তার স্ত্রীর বিশাল অঙ্কের অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তাদের দুজনের বিরুদ্ধেই মামলা করেছে দুদক।
মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) বিষয়টি নিশ্চিত করেন সংস্থাটির মহাপরিচালক আক্তার হোসেন।
তিনি জানান, আলোচিত পিয়ন জাহাঙ্গীর ও তার স্ত্রী কামরুন নাহারের বিরুদ্ধে ২৪ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে দুদক উপপরিচালক রাশেদুল ইসলাম এবং তার স্ত্রী কামরুন নাহারের বিরুদ্ধে সহকারী পরিচালক পিয়াস পাল বাদী হয়ে মামলা দুটি দায়ের করেন।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, আসামি জাহাঙ্গীর আলম স্থাবর ও অস্থাবর মিলিয়ে ১৮ কোটি ২৯ লাখ ১০ হাজার ৮৮২ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেন। জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করায় এবং তিনি ও তার মালিকানাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ ভোগ করার মানসে আটটি ব্যাংকের ২৩টি হিসাবে সর্বমোট ৬২৬ কোটি ৬৫ লাখ ১৮ হাজার ১০৭ টাকা জমা/ক্রেডিট ও জমা করা অর্থ বিভিন্ন মাধ্যমে উত্তোলন বা স্থানান্তর করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেন।
অনুসন্ধানে আরও দেখা যায়, মো. জাহাঙ্গীর আলম এসব অবৈধ সম্পদ অর্জনের মাধ্যমে তার নিজ নামে ও তার বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে হিসাব খুলেছেন। তার আটটি ব্যাংকের ২৩টি হিসাবে সর্বমোট ৬২৬ কোটি ৬৫ লাখ ১৮ হাজার ১০৭ টাকা জমা হয় এবং ৬২৪ কোটি ৬০ লাখ ১৫ হাজার ৬৭১ টাকা উত্তোলিত হয়। যা দুদকের অনুসন্ধানে সম্পূর্ণ অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক বলে প্রতীয়মান হয়েছে।
অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তির মাধ্যমে বিভিন্নভাবে তার হিসাবে জমা হওয়ার পর তিনি তা বিভিন্ন পন্থায় স্থানান্তর করেছেন। যার মধ্যে মো. জাহাঙ্গীর আলম তার মালিকানাধীন স্কাই রি এরেঞ্জ নামে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের একটি চলতি হিসাবে শুধু ২০২৪ সালের (প্রথম ৫ মাসে) ৮৩ দিনে মোট ১৭৮ কোটি টাকা জমা করেন এবং ১৭৮ কোটি ৯৩ টাকা উত্তোলন/ফান্ড ট্রান্সফার করেন।
এদিকে জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী কামরুন নাহারের বিরুদ্ধে করা মামলায় বলা হয়, তিনি নিজ নামে ৬ কোটি ৮০ লাখ ৪৮ হাজার ৬৪২ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও সম্পদ ভোগ দখলে রেখে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারা তৎসহ দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
প্রসঙ্গত, এ বছরের ১৪ জুলাই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন সফর নিয়ে গণভবনে সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘আমার বাসার পিয়ন ছিল, সেও নাকি ৪০০ কোটি টাকার মালিক। হেলিকপ্টার ছাড়া চলে না।’
এ ঘটনায় আলোচনায় আসেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পিয়ন জাহাঙ্গীর আলম। অভিযোগ রয়েছে, রাজধানী মিরপুরে বাড়িসহ বেশ কয়েকটি ফ্ল্যাট রয়েছে তার নামে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় বছরে সবমিলিয়ে প্রায় ৫০ লাখ টাকা আয়ের কথা উল্লেখ করেন জাহাঙ্গীর আলম। এ ছাড়া স্ত্রীর নামে ব্যাংকে সোয়া ১ কোটি টাকা, তার নিজের নামে আড়াই কোটি টাকা থাকার কথাও উল্লেখ করেন।