সিলেটে গ্যাসের খোঁজে আরো ১০০ কূপ খননের উদ্যোগ
অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে দেশীয় গ্যাসের অনুসন্ধান বৃদ্ধির ওপর জোর দিয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘বর্তমান চাহিদা পূরণের জন্য বাংলাদেশে প্রতিদিন আরো এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস প্রয়োজন। দেশীয় গ্যাস ফিল্ড থেকে এ গ্যাস পেলে প্রতি ইউনিটে চার টাকা খরচ হয়। একই পরিমাণ গ্যাস আমদানি করতে ৬০ টাকা খরচ হয়। তাই এই খরচ বাঁচাতে পারলে তা হবে দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি।
সিলেটে তিন দিনের সফরে এসে প্রথম দিন গতকাল শনিবার অনুসন্ধান কূপ কৈলাসটিলা-৮ নম্বর কূপ খনন প্রকল্প পরিদর্শন শেষে প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আরো ১০০টি কূপ খননের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। আগামী দুই বছরে আরো ৬০০ থেকে ৬৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত করতে চাই।’
কৈলাসটিলা গ্যাস ফিল্ডে আরো গ্যাস পাওয়ার বিষয়টি জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে আগে তিন টিসিএফ (ট্রিলিয়ন ঘনফুট) গ্যাস মজুদ ছিল।
অনুসন্ধান কূপ খনন করায় মজুদ আরো ১.৩ টিসিএফ বাড়ানো যাবে। কয়েক মাসের মধ্যে এই গ্যাস পাইপলাইনে নিয়ে আসতে পারব।’
সিলেট গ্যাস ফিল্ড কম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান জানান, কৈলাসটিলায় এর আগে সাতটি কূপ খনন করা হয়েছে, প্রতিটি কূপেই গ্যাস পাওয়া গেছে। এই কূপটি তিন হাজার ৫০০ মিটার খনন করে এক টিসিএফের বেশি গ্যাস পাওয়ার আশা করা হচ্ছে।
এর আগে সকালে সিলেটের জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেডের প্রিপেইড মিটার প্রকল্পের ডাটা সেন্টার উদ্বোধন করেন প্রতিমন্ত্রী। এ সময় তিনি এই বিতরণ কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধু কর্নার উদ্বোধন করেন।
এই সময় প্রতিমন্ত্রী বলেন, আগামী চার বছরের মধ্যে দেশের সব গ্যাসের গ্রাহক প্রিপেইড মিটারের আওতায় চলে আসবে। জালালাবাদ গ্যাস কম্পানি ৫০ হাজার গ্রাহককে এরই মধ্যে প্রিপেইড মিটারের আওতায় এনেছে। আরো দেড় লাখ গ্রাহককে অচিরেই প্রিপেইড মিটারের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
নসরুল হামিদ জানান, ধাপে ধাপে সিলেট অঞ্চলের সব গ্রাহক প্রিপেইড মিটারের আওতায় চলে আসবে। প্রিপেইড মিটারের ফলে গ্যাসের অপচয় রোধ হবে এবং গ্রাহকরা সাশ্রয়ী মূল্যে গ্যাস ব্যবহার করতে পারবেন। আগামী দুই বছরের মধ্যে জালালাবাদের সব গ্রাহককে প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনতে পদক্ষেপ নিতে বলেন তিনি।
গতকাল বিকেলে সিলেট হরিপুরে ১০ নম্বর কূপ খনন কার্যক্রম পরিদর্শনে যান প্রতিমন্ত্রী। সেখানে তিনি বলেন, ‘চেষ্টা করলে যে অবশ্যই পারা যায়, ১০ নম্বর কূপ তারই প্রমাণ। আগামী দুই মাসের মধ্যে এখানে তেলের রিজার্ভ কতটুকু তা জানা যাবে। এটি হবে বাণিজ্যিকভাবে লাভবান একটি প্রজেক্ট। এখানে আমরা আরো দুটি কূপ খনন করব। সিলেট গ্যাস ফিল্ডকে বলেছি, প্রয়োজনে আরো দুটি রিগ নেন, আরো পাঁচ থেকে ছয়টি কূপ খননের প্রস্তুতি নেন। আগামী দুই বছরে আমরা সম্ভাবনার দিক দেখতে চাই।’
নতুন পরিকল্পনার বিষয় জানিয়ে নসরুল হামিদ বলেন, ‘৪৬টি কূপ খননের উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে হলে আমাদের একসঙ্গে ছয়টি রিগ প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমানে বাপেক্সের রয়েছে মাত্র চারটি রিগ। নতুন আরো ১০০টি কূপ খননের যে পরিকল্পনা নিয়েছি, সেখানে আরো ছয়টি রিগ লাগবে। সে কারণেই বাপেক্সের পাশাপাশি বিভিন্ন বিদেশি কম্পানিকে কূপ খনন করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।’
এ বিষয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বদরুল ইমাম জানান, দেশীয় গ্যাসের অনুসন্ধানে জোর দেওয়ার বিষয়টি খুবই ইতিবাচক। উদ্যোগটি আরো আগে নিলে এখন গ্যাসসংকটের মধ্যে পড়তে হতো না। স্থলভাগের পাশাপাশি সমুদ্রেও গ্যাস অনুসন্ধানের জোরালো উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈশ্বিকভাবে প্রতি পাঁচটি অনুসন্ধান কূপের বিপরীতে একটিতে গ্যাস পাওয়া যায়। বাংলাদেশে এর চেয়ে ভালো ফল পাওয়ার পরও গ্যাস অনুসন্ধানে এত দিন তেমনভাবে জোর দেওয়া হয়নি।