‘একটি মশা আনো’— ইসরায়েলি সেনাদের ব্যবহৃত বাক্যের পেছনে ভয়াবহতার গল্প

‘একটি মশা আনো’— ইসরায়েলি সেনাদের ব্যবহৃত বাক্যের পেছনে ভয়াবহতার গল্প

‘একটি মশা আনো’— দখলদার ইসরায়েলের সেনারা গাজায় এমন একটি কোড নেম ব্যবহার করছে। যা গাজায় চলমান যুদ্ধে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে এ বাক্যের পেছনে আছে ভয়াবহতার গল্প।

দখলদাররা ‘একটি মশা আনো’ বলার মাধ্যমে মূলত ফিলিস্তিনিদের বোঝায়। কমান্ডারদের নির্দেশনা পেলে সাধারণ সেনারা একজন ফিলিস্তিনিকে রাস্তা বা যে কোনো জায়গা থেকে ধরে আনে। এরপর তাকে ব্যবহার করে মানববর্ম হিসেবে।

দখলদার সেনারা যখন গাজার কোনো ভবন অথবা সুড়ঙ্গে অভিযান চালাতে যায় তখন এই ফিলিস্তিনিদের মানববর্ম হিসেবে ব্যবহার করে। সেনারা পেছনে থেকে আটককৃত ফিলিস্তিনিকে আগে সেই ভবন বা সুড়ঙ্গে পাঠায়। যেন কোনো বোমা পুঁতে রাখা হলে বা হামাসের কোনো যোদ্ধা থাকলে আগে ওই ফিলিস্তিনি ক্ষতিগ্রস্ত হন।

বার্তাসংস্থা এপি শনিবার (২৪ মে) দুজন ইসরায়েলি সেনা ও প্রত্যক্ষদর্শীর বরাতে এমন ভয়াবহ তথ্য তুলে আনে। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, বেসামরিকদের কোনোভাবেই সামরিক অভিযানে ব্যবহার করা যাবে না। দখলদার ইসরায়েলের সেনারা গাজা ও পশ্চিমতীরে আগে থেকেই এই কৌশল অবলম্বন করত। কিন্তু গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহার করছে।

ওই দুই ইসরায়েলি সেনা বার্তাসংস্থা এপি এক প্রত্যক্ষদর্শী ইসরায়েলি মানবাধিকার সংস্থা ‘ব্রেকিং দ্য সাইলেন্সকে’ জানিয়েছেন, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা এই নিষিদ্ধ পদ্ধতি ব্যবহার সম্পর্কে জানেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও তারা কিছু বলেননি।

ফিলিস্তিনিদের ‘মশা, ভিমরুল’-সহ বিভিন্ন অপমানজনক নামে ডাকে দখলদার সেনারা।

এক সেনা জানিয়েছে, ২০২৩ সালে হামাসের হামলার পর থেকেই গাজায় ফিলিস্তিনিদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার শুরু হয়। এরপর ২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে এর ব্যবহার বহুলাংশে বৃদ্ধি পায়। মানবঢালের ব্যবহার এতটাই বেশি শুরু হয় যে রেডিওতে নির্দেশনা দেওয়া হতো ‘একটি মশা আনো’। এটির মানে সেনারা জানত এবং তারা নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করত।

এই সেনা জানিয়েছেন, তিনি গাজায় ৯ মাস ছিলেন। এ সময় নিজেদের সেনাবাহিনীর সব ইনফেনট্রি ইউনিটকে পদ্ধতিটি ব্যবহার করতে দেখেছেন তিনি। কারণ এটি খুব সহজ ছিল। চাইলের রাস্তা থেকে কোনো ফিলিস্তিনিকে ধরে এনে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে পারত তারা।

তিনি বলেছেন, ২০২৪ সালের একটি বৈঠকে এক ব্রিগেড কমান্ডার ডিভিশন কমান্ডারকে বিষয়টি সম্পর্কে জানান। ওই সময় তিনি রাস্তা থেকে ফিলিস্তিনিদের ধরে এই কাজ করা হবে বলেও অভিহিত করেন।

এরমধ্যে এক ফিলিস্তিনি মানবঢাল হিসেবে কাজ করতে গিয়ে নিহত হয়েছেন। এপিকে ওই ইসরায়েলি সেনা জানিয়েছেন, একটি ইউনিট এক ফিলিস্তিনিকে ধরে এনে একটি বাড়িতে প্রবেশ করায়। তখন ইসরায়েলি সেনাদের আরেকটি ইউনিট সেখানে ছিল। তারা তাকে হামাসের যোদ্ধা ভেবে গুলি করে। এতে তিনি প্রাণ হারান। পরবর্তীতে এক দখলদার সেনা কর্মকর্তা বলেন, ‘এরপর থেকে যেসব ফিলিস্তিনিকে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হবে তাদের ইসরায়েলি সেনাদের পোশাক পরিয়ে নিলে ভালো হবে।’

দখলদার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বার্তাসংস্থা এপির কাছে অভিযোগ সম্পর্কে বলেছে, বেসামরিকদের জোরপূর্বক সামরিক অভিযানে যুক্ত করার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আছে। তারা যেসব অভিযোগ জানতে পেরেছে সেগুলো তদন্ত করছে। তবে কি তদন্ত করা হচ্ছে সে ব্যাপারে বিস্তারিত জানানো হবে না বলে জানিয়েছে দখলদাররা।
সূত্র: এপি